ব্যাংক ঋণ সিংগেল ডিজিট রাখতে কঠোর হবে:প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৯-০৬-১৫ ১২:২১:২২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের শিল্পায়ন বাড়াতে ঋণের সহজ করার বিকল্প নেই। এই জন্যই বাজেটে ব্যাংকের সুদের হার নিয়ে সিংগেল ডিজিটের কথা বলা হয়েছে বাজেটে। এই সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। না হলে কঠোর অবস্থানে যাবে সরকার।
শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি, সিংগেল ডিজিটে থাকে। কতগুলো সুবিধাও দিলাম। মানেনি। বাজেটে বলা আছে, নির্দেশনা আছে, কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। নিয়মটা মেনে চলতে হবে, যেন ঋণ সিংগেল ডিজিটে হয়। ডাবল না হয়। তাতে বিনিয়োগ বেশি হবে। অনেক আইন সংশোধন করব। সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে ব্যাংকের মূলধনের পরিমাণ বাড়ানো হবে। ব্যাংক কোম্পানী আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। যেসব ঋণগ্রহীতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে পরিশোধ না করার জন্যই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী হয়ে যান, সেই সমস্ত ঋণ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। দেশের শিল্প ও ব্যবসা খাতকে প্রতিযোগীতা সক্ষম করতে আমরা ব্যাংক ঋণের উপর সুদের হার এক অংকের উপর অর্থ্যাৎ সিঙ্গেল ডিজিটের মধ্যে রাখব।
বৃহৎ ঋণগুলোকে আরও নিবিড়ভাবে পরীবিক্ষণ ও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ মনিটরিং ব্যবস্থাকে জোরদার করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আমরা শেয়ার বাজারে সুশাসন দেখতে চাই। আমাদের দেশের জন্য একটি শক্তিশালী অর্থনীতির পাশাপাশি আমরা দেখতে চাই একটি বিকশিত পুঁজিবাজার। শিল্প বিনিয়োগে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ সংগ্রহের আদর্শ মধ্যম হচ্ছে পুঁজিবাজার। এ বিষয়ে আমরা সর্বাত্মক উদ্যোগ নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের মানসিকতা অসুস্থ তাদের কিছুই ভালো লাগে না। সব কিছুতেই তারা কিন্তু খোঁজে। তারা কী গবেষণা করেন আমি জানি না। একটা কিছু বলতে হবে। তাই বলেছে। এটা একটা অসুস্থতা।’
সিপিডির নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষ খুশি কিনা তা দেখতে হবে। এটা আমাদের ১১তম বাজেট। যতটুকু আমি বলেছি তার থেকে অনেক বেশি কিছু রয়েছে বাজেটে। ভালো না লাগা পার্টি যারা তাদের কোনও কিছুই ভালো লাগবে না। উনাদের সেই অসুস্থতা। ভালো সমালোচনা করলে আমরা গ্রহণ করবো আর মন্দ কথা বললে ধর্তব্যে নেবো না।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশেকে দারিদ্র্য মুক্ত করা, উন্নত করা, সমৃদ্ধশালী করা এবং স্বাধীনতার সুফল পাওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগে বাইরে গেলে বাংলাদেশকে কেউ চিনতো না। এখন আমাদের সবাই চেনে। এটাই আমাদের বড় পাওনা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি উন্নীত করা সরকারের লক্ষ্য; এসডিজি বাস্তবায়ন ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সামনে রেখে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই সর্ববৃহৎ বাজেট জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সরকারের বিগত দুই মেয়াদে ১০ বছরের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে তার মাধ্যমে জনগণের মাঝে আমাদের প্রতি আস্থা বেড়েছে। তার প্রতিফলন ঘটেছে গত ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে।
দেশের বেকার যুবসমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। কৃষিখাতে সরকারের ভর্তুকি-প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও প্রণোদনা থাকবে। কৃষি ভুর্তকি, ঋণ ও কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে প্রণোদনাও থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চিনির ওপর কর বৃদ্ধি পাওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম বাড়তে যাচ্ছে। ‘বেশি চিনি খেলে ডায়বেটিস হয়, সেই জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে যত পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে আসে, দেশ থেকে যত পণ্য রফতানি হয়ে বিদেশে যায় সে সমস্ত পণ্য স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হবে। সেই স্ক্যানিং করার জন্য বন্দরগুলোতে প্রয়োজনীয় জনবল সৃষ্টি ও নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। দেশে নতুন বিনিয়োগ ও ব্যবসা ভালো হলে স্বাভাবিক নিয়মেই বেশি কর পাওয়া যাবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়। এটি দেশের ৪৮তম এবং বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয় পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি।
গতকাল বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট।
দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করলেও পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে বসে বাজেট উপস্থাপন করেন। কিন্তু বিকেল ৪টার পর অসুস্থ অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন সম্ভব না হওয়ায় স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাকি অংশ সংসদে উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।