বাজেটে যুবসমাজকে উৎপাদনমুখী শক্তিতে রূপান্তরের উদ্যোগ
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৬-১৮ ১০:৩২:১৫
নতন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে দেশের বিশাল একটা অংশ তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য আগের তুলনায় মনোযোগ বেড়েছে। তাদের জন্য অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ রয়েছে। তরুণদের উদ্যোগ বাস্তবায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষতা উন্নয়নসহ কিছু ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যে ঘোষণা রয়েছে। ব্যবসা শুরুর জন্য আলাদা তহবিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ ও গবেষণায় রয়েছে বরাদ্দ। তরুণদের প্রতি মনোযোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, যুব উন্নয়ন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতি কৌশলের অংশ। এ কারণে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করার বেশ কিছু উদ্যোগ রয়েছে বাজেটে। কারণ দেশের সামনে জনমিতিক লভ্যাংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য সরকার ‘তারুণ্যের শক্তি- বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’ স্লোগান সামনে রেখে যুবসমাজকে উৎপাদনমুখী শক্তিতে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। তরুণদের সকল প্রকার ব্যবসা উদ্যোগে সহায়তার লক্ষ্যে ১০০ কোটি টাকার স্টার্টআপ তহবিল গঠন করা হবে। বাজেট পেশের আগে সমকাল ও জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘তারুণ্যের বাজেট’ নামে এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেছিলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণদের রাখতে হবে। ওই আলোচনা সভায় তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য স্টার্টআপ তহবিল গঠনের প্রস্তাব আসে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের বিভিন্ন প্রস্তাব দেন আলোচকরা।
তরুণদের জন্য এবারের বাজেট কেমন হয়েছে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, তরুণদের মধ্যে দুটি চাহিদা থাকে- উন্নত শিক্ষা এবং শিক্ষার পরে কর্মসংস্থান। কর্মসংস্থান হতে পারে নিজস্ব উদ্যোগ বা চাকরির মাধ্যমে। এবারের বাজেটে তরুণদের নতুন ব্যবসা বা উদ্যোগে সহায়তা করতে আলাদা করে ১০০ কোটি টাকার স্টার্টআপ তহবিল রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ লাখ লোককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ এবং এক লাখ লোকের জন্য বিশেষ কর্মসূচি তরুণদের এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। তবে তরুণদের একটি বড় অংশ কৃষি খাতে জড়িত, যারা গ্রামে অবস্থান করে। তাদের জন্য বিশেষ কিছু বাজেটে দেখা যায়নি। আর শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকার আরও মনোযোগ দিতে পারত। অন্যদিকে বাজেটের পদক্ষেপের ফলে মোবাইল ফোন ব্যবহারে খরচ বাড়বে, যাতে তরুণরা খুশি হবে না।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, এবারের বাজেট তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য একটু আলাদা। স্টার্টআপ ফান্ড তরুণদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। এখন সরকারের দেখতে হবে, এ তহবিলের ব্যবহার কারা করছে, কোন খাতে ব্যবহার হচ্ছে, কতজন ব্যবহার করল এবং এতে কর্মসংস্থান কতটা হলো। এ ছাড়া গবেষণা ও উন্নয়নে সরকার অতিরিক্ত ৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ রেখেছে। কোন ধরনের গবেষণা করলে এই অর্থ ব্যবহার করতে পারবে তা স্পষ্ট করা দরকার।
বাজেট বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, নার্সিং শিক্ষা সম্প্রসারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তিনটি নার্সিং কলেজ এবং পাঁচটি নার্সিং বয়েজ হোস্টেল স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ উদ্যোগে চিকিৎসাসেবা যেমন উন্নত হবে, তেমনি তরুণ-তরুণীদের নার্সিং শিক্ষা সম্প্রসারিত হবে। নার্সিং সেবায় প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও দক্ষ জনবল নেই। সমকালের গোলটেবিলে এ বিষয়টিও জোরালোভাবে উঠে আসে।
দেশে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনে ইতিমধ্যে প্রকল্প নিয়েছে সরকার। প্রথম পর্যায়ে ১০০ উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নে দুই হাজার ২৮২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ২৩ জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সক্ষমতা বাড়ানো এবং সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুরে একটি করে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হচ্ছে। বিশেষ জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের জন্য আগামী বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। তরুণদের কর্মসংস্থান ও আত্ম-কর্মসংস্থানে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে সারাদেশে ১১১টি প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং উপজেলা পর্যায়ে ৪৯৮টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বাজেট বক্তব্যে বলা হয়েছে, সরকার তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য কর্মে প্রবেশ উপযোগী আইন-বিধি ও নীতি-কৌশল সংস্কারের জন্য তিন বছর মেয়াদে কার্যক্রম শুরু করেছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০টি আইন-বিধি, নীতি-কৌশল প্রণয়ন অথবা সংস্কার করেছে। আগামী দুই বছরে অবশিষ্ট সংস্কার কাজ শেষ হবে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা এসেছে বাজেটে। দক্ষ জনশক্তির জন্য সার্বিক শিক্ষার মানোন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বাজেটে। পরীক্ষামূলকভাবে ব্লকচেইন টেকনোলজি চালুর উদ্যোগ রয়েছে। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুম ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, রোবোটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স, ইন্টারনেট অব থিংস ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং পড়ানোর মতো উপযোগী করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বিদেশ থেকে শিক্ষক নিয়ে আসারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়ক।