ইরাক কি আমাদের প্রোফাইল পিকচার বদলে দিয়েছিল?
আপডেট: ২০১৫-১১-১৫ ১০:২৭:৫৭
আমরা প্রোফাইল পিকচার বানাতে গিয়ে ফ্রান্সের পতাকায় শর্ট ফেলে দিয়েছি। এর আগে গাজার ছবিতেও টান পড়েছিল। এর আগে আমেরিকা যখন তার ব্রিটিশ ও ফরাসি সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে ইরাক আক্রমন করেছিল, মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল হাজার বছরের পুরনো সভ্যতা ও নিদর্শন, দলবেঁধে ধর্ষন করেছিল বয়স নির্বিশেষে নারীদের, খুন করেছিল যখন ইচ্ছা যাকে, তখন ইরাক কি আমাদের প্রোফাইল পিকচার বদলে দিয়েছিল? তখন সম্ভবত ফেইসবুক ছিল না। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম না থাকলেই ঘটনা মিথ্যা হয়ে যায় না। লিবিয়া অবশ্য এই কিছুদিন আগের ঘটনা। এত তেল ওখানে, আর গাদ্দাফিই বা তার মতো করে দেশ চালায়। আমেরিকার মাথা খারাপ বহুদিন থেকে। পরিণতি আমরা জানি।
ফ্রান্সে সাধারণ মানুষ মারা গেছে। ইরাক, গাজা, লিবিয়া, সিরিয়াসহ আরও বহু জায়গায় ঘটনা ভিন্ন নয়। তবে এবার যেন ১২৯ জনের মৃত্যু আমাদের বেশি ধাক্কা দিল! ফরাসিরা সংস্কৃতিবান বলে? জ্ঞানের প্রদীপ নিয়ে ঘোরাফেরা করে বলে? একদা আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিশিয়া আর প্যাসিফিক অঞ্চলে, কিছুদিন আগে ইরানে কী করেছিল, আমাদের মনে আছে? ধারণা আছে, আবার পুঁজির রক্ষা ও নিরাপত্তায়, প্রয়োজন পড়লে একা বা দলবেঁধে কী করবে?
প্রশ্ন উঠতেই পারে, এত এত সাধারণ মানুষের এমন করুণ মৃত্যু কেন মেনে নেব আমরা? না, মেনে নেব না। আমরা স্তম্ভিত হবো, লজ্জিতও। এ যে সমাধান না, এও বলব। যেমন বলেছিলাম, যদিও মিউমিউ করে, ইরাক ও লিবিয়ার সময়, যেমন বলি গাজার সময়, যেমন বলছি সিরিয়ার সময়।
পশ্চিমা মিডিয়া বলে দেবে, এ ইতিহাসের এক জঘন্য হত্যাকাণ্ড। আমরা সুর মেলাব। আমরা সঙ্গত ভালো পারি। সাদা চামড়াও আমরা এখনো অনেক ভালোবাসি। আমাদের মনোজগতে তাদের অবাধ বিচরণ, স্থায়ী আবাস। সুতরাং আমরা সুর মেলাব ও নিন্দা জানাব। একবারও ভাবব না, তাদের জন্য এটা নিজের তৈরি বিষের স্বাদ নেওয়া। প্রশান্তর উঠবে, তাই বলে এভাবে স্বাদ পেতে হবে, এত অনৈতিকভাবে? তা, একটু শুনি, নৈতিকতা কে দেখায়? নাকি প্রলেপ থাকে বলে অন্যের অনৈতিকতা আমাদের তেমন চোখে পড়ে না?
আর, একটা কথা আছে না — যে যেভাবে পারে। পরাজয়ে অপমানে নিপীড়নে জ্বলতে থাকা মানুষগুলোকে এক করে হাতে ধরে দল বানিয়ে দেওয়া কিংবা অস্তিত্ব আছে, এমন দলকে উস্কে দিলে এমনই হবে। কারণ তারা এটুকুই পারে, এটুকুই জানে।
আপনার ওপর চাপিয়ে দেওয়া কুস্তি লড়তে গিয়ে আপনার পিঠ যখন মাটিতে ঠেকে যাবে, তখন চেপে বসা প্রতিপক্ষকে উলটে আপনি ফেলতে পারবেন না যদিও, ক্রোধে আর ক্ষোভে তার শরীরের কোথাও কামড় বসাতে পারবেন। এই কামড়ই আমরা দেখছি। দেখার সময়, আগে কে ও কেন কামড় বসিয়েছিল, সেটা আমরা অস্পষ্ট করে রাখছি।
সূত্র: কবি, কথা সাহিত্যিক, সম্পাদক মইনুল আহসান সাবের-এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে