অগ্রিম করের আওতা কমানো হলো, কাঁচামালে বহাল

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৬-২১ ১১:২৭:৩০


দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং সরকারি কিছু সংস্থার আপত্তির মুখে বাজেট প্রস্তাব পেশের সাত দিনের মাথায় গতকাল জরুরিভিত্তিতে অগ্রিম করের আওতা কমাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বাজেট পেশের পরদিন ১৪ জুন থেকে যন্ত্রপাতি, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, জাতিসংঘভুক্ত সংস্থা, দূতাবাসের আমদানিকৃত পণ্য, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তির, রাষ্ট্রপতির আমদানিকৃত পণ্য, ত্রাণ, অন্ধ ও বধিরের জন্য পণ্য, সরকারি প্রকল্পে ব্যবহৃত পণ্য, তুলা, সরকার অনুমোদিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে অগ্রিম কর প্রদান করতে হলেও আজ (শুক্রবার) থেকে আর দিতে হবে না। তবে কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম কর বাতিল করা হয়নি। ব্যবসায়ীরা এটা বাতিলেরও জোর দাবি জানিয়ে আসছেন।

অগ্রিম করের আওতা কমানোর পাশাপাশি করপোরেট করহার কমানো, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো, রাজস্ব আদায়ে কঠোরতা কমানো, ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্যের তালিকা ও ভ্যাটের কোন হারে কোন পণ্য তা স্পষ্ট করা, রাজস্ব মামলায় আপিলের ফি কমানোসহ আরো বেশ কিছু বিষয় সংশোধনেও এরই মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা থেকে এনবিআরে আবেদন জানানো হয়েছে। এনবিআর সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রস্তাবিত বাজেটের যেসব প্রস্তাব সংশোধনে দাবি উঠেছে তা যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এত দিন বাণিজ্যিকভাবে আমদানিকৃত ছয় হাজার ৫৬২টি পণ্যে অগ্রিম বাণিজ্যিক ভ্যাট আরোপ ছিল। উৎপাদনকাজে নিয়োজিতরা এ ক্ষেত্রে ছাড় পেতেন। উৎপাদনকাজে নিয়োজিতদের শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ও শূন্য শুল্ক ধার্যকৃত কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম কর দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালসহ সব ধরনের আমদানি পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম কর আরোপ করা হয়। এত দিন উৎপাদনকারীরা নিম্নহারে ১ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ৬৫৯ ধরনের যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ পেয়েছেন। ৫ শতাংশ অগ্রিম কর আরোপের বিধান কার্যকর হলে ১ শতাংশ শুল্ক কর যোগ হয়ে ৬ শতাংশ পরিশোধ করে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি করতে হবে।

যদিও অর্থবিল ২০১৯-এ এনবিআরে নিবন্ধিত আমদানিকারকদের হিসাব জানিয়ে অগ্রিম কর সমন্বয় করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যারা নিবন্ধিত নয় তারা সংশ্লিষ্ট কমিশনারের কাছে আবেদন করে অগ্রিম করের অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নিতে পারবেন। তবে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অধিকাংশ সময় ব্যবসায়ীরা সময়মতো রেয়াতের অর্থ ফেরত পান না।’

জোরালো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল অগ্রিম করের আওতা কমিয়ে এনবিআরে ভ্যাটনীতি শাখার প্রথম সচিব তারেক রিকাবদার স্বাক্ষরিত বিশেষ আদেশ জারি করা হয়। এ আদেশে বলা হয়েছে, গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত অর্থবিলের দফা ৭১ অনুযায়ী আগাম কর আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ কিছু কিছু খাতে আগাম কর পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় আমদানি পণ্য ছাড়করণে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তাই ক্রান্তিকালীন অর্থাৎ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত উৎপাদনকারীদের নয়, শুধু বাণিজ্যিকভিত্তিক আমদানিকারক ৫ শতাংশ হারে আগাম কর পরিশোধ করবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে চূড়ান্ত করার সময় এ আদেশ চূড়ান্ত বাজেটে সংযুক্ত করা হবে। যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।’

গতকালের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, জাতিসংঘভুক্ত সংস্থা, দূতাবাস, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও সংস্থা এবং আইন ও চুক্তিপত্রের সরকার কর্তৃক অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা কর্তৃক বিক্রয়/হস্তান্তরের জন্য নয় এমন আমদানিকৃত পণ্য, বন্ড লাইসেন্স বা বন্ড নিবন্ধিত সরকারি রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান, প্রচ্ছন্ন রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউস কর্তৃক বন্ড লাইসেন্সের আওতায় আমদানিকৃত পণ্য, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আমদানিকৃত পণ্য, ত্রাণ হিসেবে আমদানিকৃত পণ্য, অন্ধ ও বধিরের জন্য আমদানিকৃত পণ্য, ডিফেন্স স্টোর হিসেবে আমদানিকৃত পণ্য, এনবিআরের অনুমোদন নিয়ে সরকারি প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য আমদানিকৃত পণ্য, তুলা, ভিসকস ইয়ার্ন, পলিস্টার ইয়ার্ন আমদানি, সরকার অনুমোদিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন সংশ্লিষ্ট উপকরণ, কোনো নিবন্ধিত উৎপাদনকারী কর্তৃক জারিকৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রেয়াতি সুবিধাপ্রাপ্ত যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশে অগ্রিম কর প্রদানের প্রয়োজন হবে না।’

এফবিসিসিআই থেকে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল উভয় খাতেই অগ্রিম কর বাতিল চাওয়া হয়েছে। এফবিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মুনতাকিম আশরাফ বলেন, ‘অগ্রিম কর আরোপের ফলে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়বেন। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ফজলে ফাহিম এরই মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। এনবিআর চেয়ারম্যান বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এরই মধ্যে যন্ত্রপাতিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে।’

ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটের কোনো কোনো বিষয়ে আমরা কী পরিবর্তন চাই তা এফবিসিসিআই থেকে বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। আশা করছি এসব লিখিত আকারে আগামী শনি বা রবিবার এনবিআরে দিতে পারব। অর্থমন্ত্রীর কাছেও আমাদের দাবি উপস্থাপন করা হবে।’

চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য এফবিসিসিআইয়ের তৈরি প্রস্তাবে ভ্যাট আদায়ে কঠোরতা থেকে সরে আসা, রাজস্ব মামলার ফি কমানো, ভিন্ন ভিন্ন স্থানে পরিচালিত ব্যবসায়ের জন্য পৃথক নিবন্ধন নম্বর গ্রহণে আপত্তি, রেয়াত নেওয়ার পদ্ধতি সহজ করা, অ্যালুমিনিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি কিচেন বা অন্যান্য গৃহস্থালি তৈজসপত্র, স্যানিটারি ওয়্যার ও যন্ত্রাংশের স্থানীয় সরবরাহ পর্যায়ে আরোপিত ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার, সকল খাতে করপোরেট কর হার ২.৫ শতাংশ কমানো এবং করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটের যেসব প্রস্তাব সংশোধনের দাবি উঠেছে তা গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই করে দেখা হচ্ছে।’