শস্য বীমা: আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ ১০ ধরনের সুবিধা পাবে কৃষক

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-০৬-২২ ১৩:৫৯:৩৯


প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হওয়া ফসলের আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ ১০ ধরনের সুবিধা পেতে যাচ্ছেন কৃষক। ‘শস্য বীমার’ আওতায় প্রাথমিকভাবে হাওড়ের সাত জেলায় শস্য বীমা চালু করা হবে। পরবর্তী সময়ে সারা দেশে কৃষককে এ বীমার আওতায় আনা হবে।
প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে শস্য বীমা পাইলট আকারে চালু করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

শস্য বীমার অন্য সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে- উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ চ্যানেল নির্ধারণ ও স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন স্থাপন, স্টেশনের মাধ্যমে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার মাত্রা নির্ণয়, কৃষকের মধ্যে সচেতন সৃষ্টি, কৃষিবান্ধব রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন এবং বীমাসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া।

জানা গেছে, এ ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বীমা চালুর আগে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের কাছে একটি ধারণাপত্র চায় অর্থ বিভাগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি অর্থ বিভাগে একটি ধারণাপত্র পাঠিয়েছে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন। এ ধারণাপত্রের ওপর কাজ শুরু করেছে মন্ত্রণালয়, যা শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রাথমিকভাবে হাওড় অঞ্চলের সাতটি জেলায় এ বীমা পাইলট আকারে চালু করা হবে। এ বীমার নাম হবে শস্য বীমা প্রকল্প।

বাস্তবায়ন করবে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ও আবহাওয়া এবং বন্যা তথ্য সরবরাহকারী সংস্থা। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে হাওড় অঞ্চল গঠিত। জেলাগুলো হল- সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এসব জেলায় প্রতিবছর ১৯ লাখ ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষি ফসল উৎপাদন করা হয়।

এর ৯০ শতাংশের মধ্যে বোরো ধান উৎপাদন করা হয়। পাশাপাশি জেলাগুলোয় ৩৭৩টি হাওড় রয়েছে।

সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে হাওগের কৃষক জানমাল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতির শিকার হন।

ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর আর্থিক বিপর্যের মুখোমুখি হয়ে একবারেই নিঃস্ব হয়ে পড়ে। ফলে সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পুনরায় উৎপাদনে ফিরতে পারে না। এতে কৃষি উৎপাদনে ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি আরও জোরদার করা দরকার। ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শস্য বীমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

সাধারণ বীমার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আগাম ও স্বাভাবিক বন্যা, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফসলের ক্ষতির জন্য হাওড়ের কৃষককে ত্রাণ, নগদ সহায়তা, প্রণোদনাসহ নানা ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

কিন্তু কৃষক এ ধরনের কর্মসূচিতে সাময়িক সহায়তা পেলেও দীর্ঘমেয়াদে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগসৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতিকে শস্য বীমায় রূপান্তর করা গেলে কৃষকের অনিশ্চয়তা দূর করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে আমরা পর্যালোচনা করেছি। শস্য বীমা চালুর কিছুটা চ্যালেঞ্জও শনাক্ত করা হয়েছে।

এটি মাথায় রেখেই কাজ করা হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে- জনসচেতনতা, অবকাঠামোগত সমস্যা, কারিগরি, রেগুলেটরি, বীমা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার অভাব, বিতরণ মাধ্যম ও কৃষকের আর্থিক সচ্ছলতা।

তিনি আরও বলেন, বীমা সম্পর্কে কৃষকের ধারণা কম। এটি তারা নেতিবাচক হিসেবে দেখবেন। বিশেষ করে হাওড়ের কৃষকের কাছে আরও বেশি নেতিবাচক মনে হবে। পাশাপাশি হাওড়ের কৃষকের আর্থিক সক্ষমতা কম।

ফলে বীমার কিস্তি কৃষকের কাছে বাড়তি বোঝা মনে হতে পারে। আগে শস্য বীমা না থাকায় তা বাস্তবায়ন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে শস্য বীমা চালু করা কঠিন হবে। এরপরও সরকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে শস্য বীমা চালু করবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ বীমা চালুর ক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর গুরুত্বপূর্র্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করবে। এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে আবহাওয়া অফিসকে। আর এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, অধিদফতর, কৃষি ব্যাংক ও এনজিওকে ডিস্ট্রিবিউশন অংশীদার হিসেবে রাখা হবে।