বাজেটে ভ্যাট,আয়কর,শুল্ক সংশোধনের দাবি এফবিসিসিআইয়ের
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-০৬-২৭ ১৯:২৫:২৭
২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে ভ্যাট, আয়কর এবং আমদানি শুল্ক হারে প্রয়োজনীয় বেশকিছু সংশোধনের দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই। আজ (২৭জুন) স্থানীয় এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এফবিসিসিআই অধিভূক্ত বিভিন্ন চেম্বার এবং এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিবৃন্দ স্ব স্ব খাতের পক্ষে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব টিপু মুনশি। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক জনাব আবুল কালাম আজাদ। এছাড়াও এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি জনাব শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম-বলেন, আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জনমুখী ও ব্যবসা-সহায়ক জাতীয় বাজেট প্রণয়নের জন্য এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শিল্পখাতে বিনিয়োগ, উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, রপ্তানিমূখী শিল্পের বহুমূখী প্রসার, প্রণোদনা ও অধিক প্রতিযোগিতা সক্ষম করাকে বাজেটে উন্নয়ন কৌশল হিসাবে নেয়া হয়েছে যা ইতিবাচক। এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, আরএন্ডডি, ইনোভেশন, মানবসম্পদ, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে।
এফবিসিসিআই-এর পক্ষ থেকে গত ১৫ জুন, ২০১৯ তারিখে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেটকে এফবিসিসিআই স্বাগত জানিয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটের প্রাথমিক প্রতিত্রিুয়ার ফলশ্রুতিতে, এফবিসিসিআই অধিভুক্ত চেম্বার, এসোসিয়েশন ও অর্থনীতিবিদ একসাথে প্রস্তাবিত বাজেট এবং অর্থবিল পর্যালোচনা করা হয়েছে । বাজেটে শিল্প ও বিনিয়োগ সহায়ক ইতিবাচক উদ্যোগের পাশাপাশি কিছু বিষয়ের প্রস্তাবনা করা হয়েছে যা পুর্নবিবেচনার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি – যেমন :
– শিল্পের সকল কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি থেকে আগাম কর (AT) প্রত্যাহার।
– যোগানদারের (Procurement Provider) ক্ষেত্রে ‘মূসক ৭.৫% এর পরিবর্তে ৫% করার প্রস্তাব।
– যেহেতু টার্ণওভার সীমা ৩ কোটি টাকা করা হয়েছে, উৎসে কর কর্তনকারী স্বত্তা / প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টাার্ণওভারের সীমা ১ (এক ) কোটি টাকার পরিবর্তে ৩ (তিন) কোটি টাকা করার প্রস্তাব। – কর কর্মকর্তার জব্দকরন ও আটক করার স্বেচ্ছা ক্ষমতা ও ব্যাংক হিসাব Freeze করার ক্ষমতা বাতিল ।
– ৫%, ৭.৫% ও ১০% মূসক প্রদানকারীগণের ক্ষেত্রে উপকরণ কর রেয়াত নেয়ার সুযোগ প্রদান।
– পৃথক নিবন্ধনের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের বিধান করা।
– আপিলের প্রতি স্তরের পরিবর্তে শুধুমাত্র প্রথম স্তরে দাবির ১০% জমা দেয়ার প্রস্তাব করছি। বিচার চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত একবারই downpayment প্রদান যৌক্তিক।
– আইন প্রতিপালনে অনিয়মে জরিমানার হার ১০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এই জরিমানার হার পূর্বের মত বহাল রাখার প্রস্তাব ।
– মাঠ পর্যায়ে মূল্য ঘোষনার জটিলতার জন্য ‘‘মূসক-৪.৩’’ এর মূল্য সংক্রান্ত কলাম-৭, ১০ ও ১১ এবং এর বিশেষ দ্রষ্টব্য-২ বাদ দিয়ে ফরমটি সংশোধনীর প্রস্তাব ।
– কোম্পানীর ক্ষেত্রে কর্পোরেট কর হার ২.৫% হ্রাস করার প্রস্তাব ।
–RMGও বস্ত্র খাতের মত অন্যান্য রপ্তানী খাতেও একই রকম কর্পোরেট কর হার করার প্রস্তাব করছি।
– প্রাপ্ত নগদ ভর্তুকির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর ১০% থেকে কমিয়ে ৩% বহাল রাখার প্রস্তাব ।
– RMG সহ সকল রপ্তানী খাতে একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব ।
– Stock Dividend এর উপর আরোপিত ১৫% কর সম্পূর্ন প্রত্যাহার ।
– Retained Earnings, Reserve এর উপর আরোপিত ১৫% কর সম্পূর্ন প্রত্যাহার ।
– ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রীম আয়কর হার ২০১২ সাল থেকে মূল্যস্ফিতির হার বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারন করা ।
– শিল্পের কাঁচামালের উপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর (AIT ) ৫% থেকে কমিয়ে ৩% নির্ধারণ।
– মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে ৫% অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার ।
– সকল রপ্তানি আয়ের উৎসে ন্যূনতম করহার ০.৬% থেকে কমিয়ে ০.২৫% করার প্রস্তাব।
– মধ্যম আয়ের দেশ ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের লক্ষ্যকে বিবেচনায় নিয়ে Revenue Regulatory Framework গঠন করার অনুরোধ করছি।
তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূসকসহ সকল ধরনের কর অব্যাহতি দিয়েছেন যা পূর্বে ছিল ৩০ লক্ষ টাকা কিন্তু ২৮ হাজার টাকা প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় এবং ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্ণওভারের আওতায় আনা হয়েছে যা পূর্বে ছিল ৮০ লক্ষ টাকা। বাংলাদেশের বাজেট ইতিহাসে ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীরা এধরনের ব্যবসা সহায়ক বাজেট পায়নি।
ফাহিম বলেন, আমরা অহরহ এ সুবিধার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন চেম্বার ও এসোসিয়েশন থেকে অবহিত হচ্ছি যে, মাঠ পর্যায়ে কর কর্মকর্তারা বিভিন্ন কৌশলে অপকৌশলে ব্যবসায়ীদের হয়রানী করার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষনা করেছেন, সুতরাং সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট চেম্বার/এসোসিয়েশন এবং এফবিসিসিআইকে অবহিত করতে হবে ।
তিনি বলেন, এফবিসিসিআই অধিভূক্ত ১০৬টি চেম্বার, ৪০০টি এসোসিয়েশন এবং স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে এফবিসিসিআই-এর বাজেট পরবর্তী মূল্যায়ন করা হয়েছে। বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের পূর্বে এফবিসিসিআই-এর বাজেট পরবর্তী মূল্যায়ন যথাযথভাবে বিবেচনা করা হবে বলে আশা করি।
বাজেট বাস্তবায়নে সময় সময় যে সমস্যার উদ্ভব হবে তা এনবিআর – এফবিসিসিআই যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির মাধ্যমে সমাধান করা হবে, এটি চলমান প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, গত ১৪ মে, ২০১৯ তারিখে মতবিনিময় সভায় মূসক ও করের হার বৃদ্ধি না করে আওতা বৃদ্ধি করার ব্যাপারে মাননীয় অর্থ মন্ত্রী জনাব আ.হ.ম মুস্তফা কামাল, এফসিএ, এম.পি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন। এছাড়াও বাজেট পূর্ববর্তী বিভিন্ন সভা ও সেমিনারে কর বৃদ্ধি না করার কথা বলা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় সপ্তম অধ্যায়ে ক্রমিক নং-২১৬ তে করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটেছে তা পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করছি এবং সেসাথে এফবিসিসিআই-এর অধিভূক্ত সকল বানিজ্য সংগঠনকে সাথে নিয়ে মূসক আইন বাস্তবায়নে সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি যার দৃষ্টান্ত ইতিমধ্যোই প্রতিফলিত হয়েছে, বাংলাদেশ জুয়েলারী এসোশিয়েশন স্বর্ণ মেলার মাধ্যেমে শুধুমাত্র ঢাকায় ১২৫ কোটি টাকা রাজস্ব আহরিত হয়েছে।
তিনি আরও বরেন, সরকারি ও বেসরকারি খাতের পার্টনারশীপ ব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব বলে আমাদের প্রত্যাশা।
অনু্ষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব মো: মুনতাকিম আশরাফ এবং সহ-সভাপতি জনাব মো: সিদ্দিকুর রহমান, জনাব রেজাউল করিম রেজনু ও মীর নিজামউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সংগঠনের পরিচালকবৃন্দ আলোচনায় অংশ নেন।
সানবিডি/ এমএফইউ