৩০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ বিতরণ করেছে ২৩৬ কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৯-০৭-০৯ ১৯:৪৫:৩১


সর্বশেষ হিসাব বছরে জীবন বীমা ছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২৬৯ কোম্পানি নিট মুনাফায় ছিল। এর মধ্যে লভ্যাংশ দেওয়া ২৬০ কোম্পানির মধ্যে ২৩৬টি নিট মুনাফার ৩০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ আকারে বিতরণ করে। শতকরা হিসাবে এ হার ৮৮ শতাংশ। বাকি ৩৩ কোম্পানি বা ১২ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মোট মুনাফার ৩০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দিয়েছিল। মুনাফায় থাকার পরও ৯ কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি।

গত ৩০ জুন এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফা এবং বিরতণ করা লভ্যাংশের পরিমাণ পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জীবন বীমা খাতের তালিকাভুক্ত ১২ কোম্পানির মধ্যে ১০টি লভ্যাংশ দিয়েছে। এ হিসাবে গত বছর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৭০টি লভ্যাংশ দেয়।

পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, লভ্যাংশ দেওয়া ২৬০ কোম্পানির মধ্যে ১০৪টির বিতরণ করা বোনাস লভ্যাংশের পরিমাণ নগদ লভ্যাংশের তুলনায় বেশি ছিল। এগুলোর মধ্যে ৮৮টির বিতরণ করা লভ্যাংশের পুরোটাই ছিল বোনাস। অন্যদিকে ১০৯ কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ দেয়। বাকি ৪৭ কোম্পানি নগদ ও বোনাস উভয় প্রকার লভ্যাংশ দিয়েছে। এ ৪৭ কোম্পানির মধ্যে ১৬টির বিতরণ করা নগদ লভ্যাংশের তুলনায় বোনাস লভ্যাংশের হার বেশি ছিল।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফার তুলনায় যথেষ্ট লভ্যাংশ দিচ্ছে না, আবার যতটুকু দিচ্ছে সেটির বড় অংশই দিচ্ছে বোনাস (স্টক) লভ্যাংশ আকারে। এমন ধারণা থেকে সরকার চলতি অর্থবছরে তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে কর আরোপ করে।

তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি নিট মুনাফার ৩০ শতাংশের কম লভ্যাংশ বিতরণ করলে তাকে ওই বছরের অবণ্টিত মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। এ ছাড়া নগদ লভ্যাংশের তুলনায় বেশি হারে বোনাস লভ্যাংশ (স্টক ডিভিডেন্ড) দিলে, সে ক্ষেত্রেও বোনাস লভ্যাংশের ওপর ১০ শতাংশ বাড়তি কর দিতে হবে সংশ্নিষ্ট কোম্পানিকে।

গত হিসাব বছরে ৩৩ কোম্পানি নিট মুনাফার ৩০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়। এর মধ্যে কয়েকটি নামিদামি কোম্পানি রয়েছে।

অন্যদিকে মুনাফায় থাকার পরও বিডি ওয়েল্ডিং, জিবিবি পাওয়ার, ইভিন্স টেক্সটাইল, ইনফরমেশন সার্ভিসেস,সমতা লেদার, প্রাইম ফাইন্যান্স এবং এবি ব্যাংক কোনো লভ্যাংশই দেয়নি।

পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, লোকসানে থাকার পরও আট কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের আগের পুঞ্জীভূত অবণ্টিত মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দিয়েছিল। এগুলো হলো- গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন, ন্যাশনাল টিউবস, জিকিউ বলপেন, এটলাস বাংলাদেশ, উসমানিয়া গ্লাস, ফ্যামিলিটেক্স, হাক্কানি পাল্প ও ইস্টার্ন কেবলস।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত বছর ৮৮ কোম্পানি লভ্যাংশের পুরোটা বোনাস আকারে বিতরণ করে। ফলে এবার বাড়তি কর পরিহার করতে চাইলে বোনাসের পরিবর্তে এগুলোকে নগদে বা উভয় প্রকার লভ্যাংশ দিতে চাইলে অন্তত সম হারে লভ্যাংশ দিতে হবে।

শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্টরা জানান, তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বীমা খাতের বাইরে অন্য বেশিরভাগ কোম্পানি ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজন ছাড়াই বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে মূলধন বাড়িয়েছে। কিছু কোম্পানির নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষমতা না থাকায় শুধু বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে।

অযথা বোনাস লভ্যাংশ প্রদান ঠেকাতে গত ২৩ নভেম্বর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এক নির্দেশনা দিয়েছে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজন ছাড়া কোনো কোম্পানি বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না। বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করলে একই সঙ্গে ব্যবসা সম্প্রসারণ পরিকল্পনাও প্রকাশ করতে হবে। এ ছাড়া সংশ্নিষ্ট বছরের মুনাফা এবং শেয়ার প্রিমিয়ার অ্যাকাউন্ট ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা প্রদানেও বিধিনিষেধ আরোপ করে সংস্থাটি। এ নির্দেশনার ফলে কোনো কোম্পানির কারণ ছাড়াই বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে বলে মনে করেন বাজার-সংশ্নিষ্টরা।