রেলের ৪ হাজার একর জমি বেদখল
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৭-২১ ১০:২৯:৩৭
ব্রিটিশ শাসনামলে বেঙ্গল রেলওয়ে থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে বিশাল ভূসম্পদ পেয়েছে রেলওয়ে। তাই দীর্ঘ কয়েক দশকে বেদখলের খপ্পরেও পড়েছে এ প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি। রাজনৈতিক দলনেতা; ব্যবসায়, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এমনকি সরকারি সংস্থার নামও রয়েছে এর দখলদারের তালিকায়।
রেলওয়ের হিসাবে, সংস্থাটির ৬১ হাজার ৮৬০ একর জমির তিন হাজার ৮৪১ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। গায়েব হয়েছে এক হাজার ৮৪১ একর জমি। কোনো দলিল-নথিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এসব জমির। সরেজমিন চিত্র আরও খারাপ। রেল কর্মকর্তারাই জানিয়েছেন, তাদের হিসাবে যত, বাস্তবে এর চেয়েও বেশি জমি দখলদারদের কব্জায় চলে গেছে। এগুলো উদ্ধারে নেই রেলের তৎপরতা। নদীর জমি ও সড়ককে দখলমুক্ত করতে অভিযান চললেও, এ কাজে পিছিয়ে রেল। কালেভদ্রে উচ্ছেদ অভিযান হলেও, উদ্ধার করা জমি ফের দখল হয়। উচ্ছেদ অভিযান ও আইনি লড়াই দুই জায়গাতেই পিছিয়ে এ সংস্থা।
রেলের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। তবে নব্বইয়ের দশকে অনেক রেলপথ ও স্টেশনে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিত্যক্ত এসব সম্পদ দখল হয়েছে বেশি। রেলের জমি ‘বিক্রি’ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
রেলের জমিকে আধুনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে শেলটেক কনসালট্যান্ট লিমিটেডকে জরিপের কাজ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে জরিপ প্রতিবেদন দেয় শেলটেক। রেলের নথিতে জমির পরিমাণ ৬১ হাজার ৮৬০ একর হলেও শেলটেক জরিপে মিলেছে ৫৯ হাজার ৭৫৫ একর। এক হাজার ৮৭১ একর জমির কোনো দলিল-নথি পাওয়া যায়নি। তবে শেলটেকের কাজে সন্তুষ্ট নয় রেলওয়ে। নতুন পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে রেলের সূত্র জানাচ্ছে, দখলদাররা ‘হারিয়ে যাওয়া’ এক হাজার ৮৪১ একর জমির দলিল, পর্চা ও নথি গায়েব করেছে। এর সঙ্গে রেলের কর্মকর্তারাও জড়িত। তারাই রেলের ভূ-সম্পত্তির দলিল অফিস থেকে গায়েব করে ফেলেছেন। আর দখলদাররা নিজেদের নামে জমি রেকর্ড করে নিয়েছে।
রেল যেসব সম্পত্তি ইজারা দিয়েছিল, সেসবেরও একটি বড় অংশ বেহাত হয়েছে। কৃষিকাজের জন্য ইজারা দেওয়া রেলের জমি ব্যবহূত হচ্ছে বাণিজ্যিক কাজে। সেখানে বহুতল ভবন, মার্কেট নির্মিত হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা আর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামেও দখল হয়েছে রেলের জমি। রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত জনবলের অভাব। তাই চাইলেও জমি উদ্ধার করা যায় না। দখলদাররা মামলা করে, আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে দখল পোক্ত করেছে।
রেলের জমি নিয়ে কত মামলা চলছে, তার তথ্য মেলেনি ঢাকার রেল ভবনে। তবে ভূ-সম্পদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা ধারণা দেন, মামলার সংখ্যা হাজারের বেশি। মামলা পরিচালনাতেও রয়েছে সমস্যা। রেলের আইনজীবীরা মামলা পরিচালনার জন্য দৈনিক মাত্র ৩২ টাকা সম্মানী পান। ভালো উকিলরা তাই রেলের হয়ে মামলা লড়তে চান না। আদালতে দখলদারদের পক্ষ নেন- এমন গুরুতর অভিযোগও রেলের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, শুধু জমি নয়; রেলের আরও বিপুল সম্পদ রয়েছে। রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, জলাশয়সহ বিপুল ভূ-সম্পদ। এগুলো রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রেলের জমি দখল করে কেউ পার পাবে না। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভাষ্যও একই রকম, যদিও মাঠ পর্যায়ে এর প্রতিফলন নেই। একজন সাবেক মন্ত্রী চট্টগ্রামে রেলের জমি দখল করে কারখানা করেছেন। উদ্ধারে গিয়েও জমি দখল করতে পারেনি রেল। তিন বছর ধরে চলছে সাবেক মন্ত্রীর কারখানা।
রেল সচিব মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘রেলের জমি দখল করলেও কেউ হজম করতে পারবে না। যখন রেলের প্রয়োজন হবে, তখন ঠিকই জমি উদ্ধার করা হবে।’ সরকারের অন্যান্য সংস্থার চেয়ে রেলের জমিই কেন বেশি দখল হয়- এ প্রশ্নে সচিব জানান, কিছু রেললাইন বন্ধ হওয়ার পর সেখানকার জমি পতিত পড়ে ছিল। এ সুযোগে জমি বেদখল হয়েছে। রেলপথের পাশেও রেলের বিস্তর পতিত জমি রয়েছে। সেগুলোও খালি পেয়ে দখল করে দখলদাররা। কিন্তু কেউ শেষ পর্যন্ত পার পায় না।