৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটন হচ্ছে পারকি সৈকতে

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-০৭-২১ ১১:১৭:৪২


একদিকে দেড় কিলোমিটার  জুড়ে দীর্ঘ বালুকাময় পারকি সৈকত, অন্যদিকে প্রবাহিত খরস্রোতা কর্ণফুলী নদী। পেছনে ছোট-বড় পাহাড়, ঝাউবন ও সবুজের সমারোহ। এই ত্রয়ী মিলনে এক সুতোয় গাঁথা চট্টগ্রামের আনোয়ারার অনন্যসুন্দর পারকি সি-বিচ। সকালে-বিকেলে দেখা মেলে কর্ণফুলী ও পারকি বিচের এক রূপ; সন্ধ্যা ও রাতে ফুটে ওঠে আলো ঝলমলে সাগর ও কর্ণফুলীর অন্য রূপ। পারকি বিচের দুই সময়ের দুই রূপে মুগ্ধ হন যে কোনো পর্যটক। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখন এই রূপ দেখার সুযোগ পেলেও রাতের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে রাতে সাগরের বুকে ও কর্ণফুলীতে নোঙর করা জাহাজের ঝলমলে আলো-আঁধারির মিতালি উপভোগ করা থেকে আর বেশি দিন বঞ্চিত হতে হবে না পর্যটকদের। কারণ, পারকি বিচের ১৩ একর  জায়গায় আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন (বিপিসি)। ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হওয়ার পর পারকি বিচ হবে দেশের অন্যতম একটি আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা দিয়ে আনোয়ারায় যে বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী টানেল নির্মাণকাজ চলছে, সেই টানেল বাস্তবায়িত হলে পারকি সৈকত হবে পর্যটকদের বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ডেপুটি ম্যানেজার (পরিকল্পনা) শিপ্রা দে বলেন, ‘আনোয়ারার পারকি বিচ নানা দিক থেকে বাংলাদেশের একটি অনন্যসুন্দর বিনোদন স্পট। এখানে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি প্রচুর পর্যটক আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু সেখানে রাতে থাকার সে রকম কোনো সুব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া পরিকল্পিতভাবে কোনো বিনোদন কেন্দ্রও গড়ে ওঠেনি। তাই পর্যটন করপোরেশন ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পারকি বিচকে পর্যটকদের কাছে একটি আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে উপহার দিতে পারব আমরা।’

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, পারকি বিচকে আধুনিক বিচ ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পর্যটন করপোরেশন তিন বছর মেয়াদি ‘পারকি বিচে পর্যটন সুবিধাদি প্রবর্তন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির মধ্যে রয়েছে ১৪টি বহুতলবিশিষ্ট আধুনিক কটেজ, একটি মানসম্মত বার, দুটি পিকনিক শেড, দুটি কিডস কর্নার জোন, আধুনিক রেস্তোরাঁ, কনভেনশন হল নির্মাণ, চেঞ্জিং ক্লসেট ও ওয়েটিং রুম। কার পার্কিং জোন সুবিধাও রাখা হয়েছে। বর্তমানে পর্যটন কমপ্লেক্স তৈরির জন্য নির্দিষ্ট ১৩ একর জায়গার চারদিকে ওয়াল নির্মাণকাজ শেষ করেছে বিপিসি। প্রকল্প এলাকার উঁচু-নিচু জায়গা সমান করার জন্য মাটি ভরাটকাজ চলমান রয়েছে। সম্প্রতি পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব পারকি সি-বিচ সরেজমিনে পরিদর্শন করার পর তার নির্দেশনার আলোকে আগের পরিকল্পনা ও নকশায় কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করা হচ্ছে। এরপরই পর্যটকদের জন্য আধুনিক কটেজ নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ শুরু করা হবে বলে পর্যটন করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ চট্টগ্রাম রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. আপেল মাহমুদ বলেন, ‘পারকি বিচে বর্তমানে শুক্র ও শনিবার দুই দিন ট্যুরিস্ট পুলিশ মোবাইল ডিউটি করছে। দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দুটি টিম পর্যটকদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। খুব শিগগির ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি ফাঁড়ি স্থাপন করে পর্যটকদের জন্য স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। একজন ইন্সপেক্টরকে এরই মধ্যে পারকি ফাঁড়ির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

বন বিভাগ ১৯৯৩-৯৪ ও ২০০২ সালে পর্যায়ক্রমে পারকির প্রায় ৮০ হেক্টর জায়গায় ঝাউবন তৈরি করে, যা এখন পর্যটকদের কাছে দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার।