৭ বছরের সর্বনিম্নে নামতে পারে ভারতের চাল রফতানি

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৭-৩১ ১১:৩৯:১৭


বেশকিছু দিন ধরেই ভারতের চাল রফতানি খাতে মন্দা ভাব বজায় রয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরে দেশটির চাল রফতানি কমে সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে আসতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। মূলত আফ্রিকান দেশগুলোয় ভারতীয় চালের চাহিদা কমে যাওয়া এবং রফতানি খাতে সরকারি প্রণোদনার অভাবে দেশটির সম্মিলিত চাল রফতানির পরিমাণ কমে যেতে পারে। খবর ইকোনমিকস টাইমস।

ভারত বিশ্ব্রের র্শীষ  চাল রফতানিকারক দেশ। কিন্তু বর্তমানে দেশটির খাদ্যপণ্যটি রফতানিতে মন্দা চলছে। চলতি অর্থবছরে এ অবস্থা আরো প্রকট হয়ে উঠতে পারে। ১ এপ্রিল ভারতে শুরু হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছর। দেশটির চাল রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ওলাম ইন্ডিয়ার সহসভাপতি নীতিন গুপ্তা বলেন, চলতি অর্থবছরে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে এক কোটি থেকে ১ কোটি ১০ লাখ টন চাল রফতানি হতে পারে, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগের অর্থবছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশটি ১ কোটি ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টন চাল রফতানি করেছিল, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। চার মাস ধরে ভারত সরকার নন-বাসমতী চাল রফতানি বৃদ্ধিতে বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়ার পরও অবস্থার হেরফের হয়নি। তবে সামগ্রিকভাবে চাল রফতানিতে সরকারের প্রণোদনার অভাব রয়েছে বলে জানান তিনি।

ভারতের এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রডাক্ট এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (এপ্রিল-মে) ভারত থেকে সব মিলিয়ে ১৫ লাখ ৮০ হাজার টন বাসমতী চাল রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম। মূলত এ সময়ে এ চাল রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এ সময়ে নন-বাসমতী চাল রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১১ হাজার ৮৩৭ টন, যা আগের বছরের একই সময়ে রফতানি হওয়া মোট চালের অর্ধেকেরও কম।

ভারত থেকে নন-বাসমতী চাল সাধারণত বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও সেনেগালে রফতানি হয়। আর বাসমতী চালের বেশির ভাগ রফতানি হয় ইরান, সৌদি আরব ও ইরাকে। বাসমতী চালের আন্তর্জাতিক বাজার দখলে ভারতের প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার।

ভারতের রাইস এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আরইএ) সভাপতি বিভি কৃষ্ণা রাও বলেন, চাল রফতানিতে ভারত সরকারের প্রণোদনা অতি নগণ্য ও অস্থায়ী, যা গত ২৫ মার্চের পর একবারেই বন্ধ আছে। এতে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে চাল রফতানিতে ধস নেমেছে। এ অবস্থায় সরকার চাল রফতানি খাতে দ্রুত প্রণোদনা জোরদার না করলে চলতি অর্থবছরে খাদ্যপণ্যটির রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসতে পারে। বিপরীতে চাল রফতানি বাড়তে পারে অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর।

চলতি অর্থবছরে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে খরা দেখা দিয়েছে। এতে দেশটির ফসল খাতের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। পানি সংকটের কারণে মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ুসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলের ফসল উৎপাদনে মন্দা ভাব দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি প্রতিকূল আবহাওয়ার জেরে কৃষকের আবাদ খরচ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। এতে তাদের লোকসান চরমে উঠেছে। এ অবস্থা থেকে কৃষকদের রেহাই দিতে ভারত সরকার চালসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর বাড়তি ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) আরোপ করেছে। এতে খাদ্যপণ্যটির রফতানি মূল্য বেড়ে গেছে। এ কারণে আমদানিকারকরা ভারতের পরিবর্তে অন্যান্য চাল রফতানিকারক দেশ চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারের দিকে ঝুঁকছেন। এরই মধ্যে চালের রফতানি আগের তুলনায় বেড়ে আফ্রিকান দেশগুলো চীনা চালের অন্যতম আমদানিকারক হিসেবে পরিণত হয়েছে, যেখানে ভারত থেকে আমদানি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

ওলাম ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার চাল আমদানিকারকদের ভারতের তুলনায় প্রতি টনে ৩০ ডলারের বেশি ছাড় দিচ্ছে। এ কারণে ভারতের চাল রফতানি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ভারতের সবচেয়ে বেশি চাল উৎপাদনকারী অঞ্চল ছত্তিশগড়ে আগের বছরের তুলনায় এবার কৃষিপণ্যটির দাম চড়া রয়েছে। এখানে ২০১৮ সালে প্রতি ১০০ কেজি চাল কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ রুপিতে (৩৬ ডলার ২০ সেন্ট) বেচাকেনা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪৩ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে ১০০ কেজি চালের ক্রয়মূল্য ছিল ১ হাজার ৭৫০ রুপি।