পেঁয়াজের ঝাঁজে চিরুনী অভিযান
:: আপডেট: ২০১৯-০৯-১৬ ১৭:৫৯:০১
পেঁয়াজের ঝাঁজে মানুষের এখন কান্না না এলেও দামের ঝাঁজে সাধারণ মানুষের কান্না ঠিকই আসে। বাজারে বলা নেই-কওয়া নেই হঠাৎ পেঁয়াজের দাম হুহু করে বেড়েছে যায়। সাধারণ নিন্ম আয়ের মানুষ গুলি মহাবিপদে পড়ে যায়। সংসার চালোনো মুশকিল হয়ে যায়।
এ দাম বাড়ায় নড়েচড়ে বসেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এর পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে আজ থেকে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করতে যাচ্ছে অধিদফতর।
রাজধানীর প্রায় সবগুলো বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১৫ দিন আগে যা বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকায়।
আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। ১৫ দিন আগে এটি ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। ১৫ দিনের বাজারমূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ ২৫ টাকা বেড়েছে।
আজকে দেশের সর্ব বৃহৎ পাইকারী রাজার শ্যাম বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৪১- ৪২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ইন্ডিয়ান নাসিক পেঁয়ার ৪০- থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যা ঈদের আগে ৩০-৩৫ টাকা বিক্রি হয়। এ হিসাবে কেজিতে দাম বেড়েছে ৮-১০ টাকা। আমদানি পেঁয়াজ প্রতি কেজি মানভেদে ৩৮-৪২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা ঈদের আগে ২৮-৩০ টাকায় বিক্রি হয়। কেজিতে দাম ১০-১২ টাকা বেড়েছে। এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪৬ দশমিক ২৭ শতাংশ।
শ্যাম বাজারের আড়তদার নবীন ট্রের্ডাসের মালিক নারায়ন বলেন, ঈদের পর বাজারে পেঁয়াজের দামটা একটু বেড়েছে। ভারতের কয়েটি প্রদেশে বন্যা হওয়ায় আমদানী ব্যহত হয়ে পেঁয়াজের দামটা বেড়েছে।
তিনি বলেন, ভারতে প্রায় বারো মাসই পেঁয়াজের চাষ হয়, বন্যা হওয়ায় চাষীদের পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। তাই আমদানী কমেছে, পাইকারিতে দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, তবে পাকিস্তান, বার্মা, ইনদোনেশিয়া থেকে যদি ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানী করতে পারে তাহলে পেঁয়াজের দাম আবার কমতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে সাহায্য করতে হবে।
রাজধানী পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের মজুদ শেষের দিকে। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেশি। এ কারণে বাজারে সরবরাহ অনেক কম এবং দামও বেশি। তবে সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে। তবে এ দুই পর্যায়ে সরবরাহের কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দামে বিশাল ফারাক লক্ষ করা গেছে। এ দিন যে দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ৩৮-৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে, সে পেঁয়াজ খুচরা বাজারে ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক্ষেত্রে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দামের ব্যবধান ২২-২৫ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজে পাইকারি ও খুচরাতে দামের ব্যবধান দেখা গেছে ২২-২৮ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এ কারণে গত সপ্তাহে পাইকারি বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তবে সেখানে তেমন কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি। মনে হচ্ছে- মোকাম ও খুচরা বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম বাড়ানোর জন্য দায়ী।
তিনি বলেন, যে দিন ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ে ঠিক সে দিনের আগে আমদানি করা পেঁয়াজে দাম বাংলাদেশে কি করে বাড়ে! এ প্রশ্নটা থেকেই যায়। ভারতে দাম বাড়ার সংবাদ শুনে দেশের মোকাম ও খুচরা ব্যবসায়ীরা নিজেরাই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। এছাড়া পাইকারি ও খুচরা বাজারের পেঁয়াজের দামের ব্যবধান অনেক বেশি।
উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার আরও বলেন, এটা ঠিক ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। তবে এ বাড়তি দরের সঙ্গে দেশের বাজারে কতটা মিল রেখে বিক্রি হচ্ছে, নাকি বাড়তি মুনাফা করার জন্য আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে তা তদারকি করা হবে। মোকাম থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে আজ থেকে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে। দোষীদের খুঁজে বের করে ভোক্তা আইনে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। দরকার হলে দোষীদের জেলে দেয়া হবে।
রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনীর খুচরা বিক্রেতা মো. খালেক বলেন, পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে দাম একটু বেশি হয়। তবে এত বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নানা ধরনের খরচ দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। এ কারণে একটু বেশিতে বিক্রি না করলে লাভ থাকে না। তিনি বলেন, পাইকারি বাজার থেকে পণ্য আনতে সেখানের লাইনম্যানকে টাকা দিতে হয়।
নবিডি/ঢাকা/এসএস