ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শালগম মহৌষধ
আপডেট: ২০১৫-১১-২২ ১৫:০৮:০৬
কেউ কেউ শালগমের কথা শুনলেই নাক কুঁচকে বলেন, গন্ধ লাগে। খাইনা। কথা সত্য। আর এই গন্ধের কারণ হলো শালগমে সালফারের উপস্থিতি। মজার ব্যাপার হলো এই গন্ধই কিন্তু ব্রঙ্কাইটিস জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এক সময় ব্রঙ্কাইটিস হলে লোকে তা নিরাময়ের জন্য দুধ দিয়ে রান্না করে শালগম খেতেন।
শালগম বাংলাদেশে সুপরিচিত। শালগম শীতকালীন সবজি। স্ফীত ও রূপান্তরিত মূলই শালগমের প্রধান ভক্ষণযোগ্য অঙ্গ । স্ফীত মূলের যে অংশ মাটির নিচে থাকে তা সাধারণত সাদা অথবা হলুদাভ, কিন্তু । পরের অংশ জাত ভেদে বেগুনী, লাল, সাদা, হলুদ, এমনকি সবুজও হয়। আবারসম্পূর্ণ লাল জাতও আছে। শাঁসের বর্ণ সাদা অথবা হালকা হলুদ। এর ছোট ও ভাল জাতটি মানুষ গ্রহণ করে, বড় আকারের শালগম গুলো পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
শালগমের পুষ্টিগুণ:
শালগম মূলত শীতকালীন সবজি। প্রতি ১০০ গ্রাম শালগমে আছে ০.৫ গ্রাম আমিষ, ৬.২ গ্রাম শর্করা, ০.৯ গ্রাম আশ, ০.২ গ্রাম চর্বি, ২৯ কিলোক্যালরি শক্তি, ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৪৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’।
শালগম অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি। সাধারণত শীতকালের এই সবজিতে প্রচুর ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং প্রচুর পরিমাণে আঁশ আছে। এর পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায় যা অত্যন্ত পুষ্টিকর।
আসুন জেনে নেই শালগম খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি?
শরীরে অগ্ন্যাশয় যদি যথার্থ ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীরে ইনসুলিনের সঠিক কাজ ব্যাহত হয় তাহলে সেটাকে ডায়াবেটিস বলা হয়। এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের ঘন ঘন প্রস্রাব হয়; অধিক তৃষ্ণার্ত অনুভব করে এবং বার বার মুখ শুকিয়ে যায়।আক্রান্তরা অতিশয় দুর্বলতা, সার্বক্ষণিক ক্ষুধা, স্বল্প সময়ে দেহের ওজন হ্রাস, চোখে ঝাপসা দেখাসহ নানান সমস্যায় ভোগে। তারা ঔষধের পাশাপাশী সবুজ শাক-সবজি খাবেন। বিশেষ করে শালগম খাবেন। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী।
শালগম দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন-সি দেহের কোষ ক্ষয় রোধ করে। শালগমের পাতায় গ্লুকোসিনোলেট নামক উপকারী উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। শালগমে প্রচুর আঁশ থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে। শালগম কফ, ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমা নিরাময়ে সাহায্য করে শালগম রক্ত পরিশোধিত করে এবং রক্তকণিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এটি দেহে রোগসংক্রমণে বাধা দেয় শালগম ক্ষুধামন্দা দূর করে শালগমের রস রক্তে ই।রিক এসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এটি ব্রণসহ ত্বকের অন্যান্য সমস্যা নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে
শালগমের জাত:
আমাদের দেশে বিভিন্ন দেশের কয়েক জাতের শালগম রয়েছে এ গুলোর মধ্যে। উল্লেখযোগ্য সাদা শাঁস বিশিষ্ট সাদা মূল বিশিষ্ট জাত হচ্ছে- হোয়াইট ফ্ল্যাট ডাচ, হোয়াইট মিলান, সগোয়িন, টোকিওটপ, টোকিও মার্কেট এবং এক্সপ্রেসহোয়াইট।
হলুদ শাঁস বিশিষ্ট:
ইয়েলো গ্লোব, গোল্ডেন বল, ইয়েলো এবারডিন ইত্যাদি।
জাপানি জাত:
হোয়াইট লেডি, এক্সপ্রেস হোয়াইট, টোকিও ক্রস ইত্যাদি জাপানি জাত।
ভারতীয় জাত:
ভারতীয় জাতের মধ্যে-পশু চন্দ্রি, পশু স্বর্ণিমা, পশু কাঞ্চন এবং পশু স্বেতী অন্যতম।
শালগমের নানা গুণের কারণেই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই সবজিটিকে স্থান দিন। যারা শালগম গন্ধের কারণে খেতে চান না, তাদের জন্য পরামর্শ হলো রান্না করার আগে লবণ পানিতে ভাপিয়ে নিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। আর সালাদ বা ক্ষেত্রে শালগম কুঁচিয়ে লবণ দিয়ে মাখিয়ে রাখুন। ৫/৭ মিনিট পর ভালোমতো চিপে পানি ফেলে দিন। বিকেলের নাশতায় সবজি পাকোড়ায় শালগম দিতে পারেন, শালগমের উপস্থিতি বোঝা যাবে না কিন্তু এর পুষ্টি পাওয়া যাবে। মিক্সড সবজি বা ভেজিটেবল স্যুপে শালগম দিন।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস