পদ্মা নদীর পানিতে প্লাবিত পাবনার ২০ গ্রাম
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-১০-০২ ১৫:৪৭:৪৯
পাবনায় পদ্মার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার সদর, ঈশ্বরদী ও সুজানগর উপজেলার নদী তীরের গ্রামগুলোতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল। পানিবন্দি দিন কাটাচ্ছেন চরাঞ্চলের প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ। উজান থেকে নেমে আসা পানি ও প্রবল বর্ষণে আগামী কয়েকদিনে আরও বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত এক সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল পদ্মার পানির উচ্চতা। সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি অতিক্রম করে বিপদসীমা। মঙ্গলবার দুপুরে পানি আরও বেড়ে বিপদসীমার সাত সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ক্রমাগত পানি বৃদ্ধিতে তলিয়ে যায় সদর, ঈশ্বরদী ও সুজানগর উপজেলার বিস্তীর্ণ জমির ফসল। পদ্মাপাড়ের অনেক গ্রামের বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক শতাধিক পরিবার। খাবার, পানীয় জল ও গো খাদ্য সংকটে গবাদি পশু ও পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
পাবনার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, আকস্মিক বন্যায় সদর উপজেলার দোগাছি, ভাঁড়ারা, চরতারাপুর ও হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ৬৯২ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০০০ পরিবারের মানুষ। মঙ্গলবার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে আরও বেশ কিছু এলাকা। উপজেলা প্রশাসন বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে।
সরেজমিনে চরকোমরপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হঠাৎ বন্যায় তলিয়ে গেছে ধান, মাসকলাই ও সবজি ক্ষেত। কৃষকরা কাঁচা ধান কেটে নিয়ে আসছেন। পানি ঢুকেছে বসতবাড়িতে। রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় দূর-দূরান্তের স্বজনদের বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসছেন। কৃষকরা জানান, বন্যায় সমস্ত ফসল নষ্ট হয়েছে, এখন গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য কাঁচা ধানই কেটে আনছেন তারা।
ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া, পাকশী ও লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে চরের গাজর, শিম, করলা,মূলাসহ আগাম শীতের সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পদ্মার এসব চরের উর্বর জমিতে সবজি ভালো উৎপাদন ও সচরাচর বন্যায় প্লাবিত না হওয়ায়, বর্গাচাষিরা এসব জমিতে চুক্তিভিত্তিক চাষাবাদ করেন। আকস্মিক বন্যায় সমস্ত ফসল নষ্ট হওয়ায় এখন সব হারিয়ে দিশেহারা চরকুড়–লিয়া, চরদাদাপুর, শান্তিনগর, মালপাড়া, উদিপাড়াসহ ২০ গ্রামের চাষিরা। পানিবন্দি দিন কাটাচ্ছে অন্তত দুই শতাধিক পরিবারের মানুষ।
লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরীফ জানান, লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে প্রায় ১৫ হাজার একর জমির সবজি ও আখক্ষেত পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে। যার অধিকাংশই আগাম শীতের সবজি। বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় এসব ফসলে কৃষকের বিনিয়োগও বেশি থাকে। টাকার অঙ্কে কমপক্ষে কয়েকশ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের পর পদ্মায় এমন পানিবৃদ্ধি হয়নি। আগাম প্রস্তুতি না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও হয়েছে বেশি। আরও কয়েকদিন পদ্মার পানি প্রতিদিন ১০ সেন্টিমিটার করে বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ।
তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা ভিত্তিক টিম করেছি। প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কৃষকের ক্ষতির বিষয়টি কৃষি বিভাগ মনিটর করছে। তাদের সহযোগিতার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসআই