পণ্য আটকে আমদানিকারককে হয়রানি
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-১০-০৩ ১৩:২১:৫১
অগ্রিম আয়কর ও ট্রেড ভ্যাট দিয়ে আমদানির পরও চট্টগ্রামের এক আমদানিকারকের প্রায় ৫ কোটি টাকার পণ্য আটকে দিয়েছে বন্ড কাস্টমস। গুদাম সিলগালা করে দিয়ে আমদানিকারকের কাছ থেকে নানা কৌশলে দাবি করা হচ্ছে অনৈতিক সুবিধা!
এ অবস্থায় নিরুপায় ওই আমদানিকারক তার পণ্য ছাড় ও হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান বরাবরে চিঠি দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইকবাল এন্টারপ্রাইজ চীন থেকে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫০ কেজি প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল-বিওপিপি (বক্স পলি প্রপলিন ফিল্ম) ও ৫০ হাজার ৪২৪ কেজি ডুপ্লেক্স বোর্ড আমদানি করে। এসব পণ্যের মূল্য ৫ কোটি টাকার বেশি।
এই পণ্যের অগ্রিম ট্যাক্স (এটি) ও ট্রেড ভ্যাট হিসেবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রদান করে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা। আমদানি পণ্য চালান গুদামে প্রবেশের পর ঢাকার বন্ড কমিশনারেট কার্যালয় ‘বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের’ অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের গুদামে অভিযান চালায়।
গঠিত প্রিভেন্টিভ টিম অভিযানের পর গুদাম সিলগালা করে দিয়ে কাগজপত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়। বন্ড কমিশনারেট কার্যালয়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ওই পণ্য চালানের বিপরীতে প্রদত্ত এটি ও ট্রেড ভ্যাট প্রদান সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং বিল অব এন্ট্রি (বিই) জমা দেয়।
অভিযান টিম তাদের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করে, চট্টগ্রামের ফতেয়াবাদ, হাটহাজারীর ঠিকানার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইকবাল এন্টারপ্রাইজ আলোচ্য পণ্যের বিল অব এন্ট্রি (বিই) কপি জমা দেয়। প্রদত্ত বিই’র কপি অনুযায়ী ওয়্যার হাউস বা গুদামে প্রাপ্ত পণ্যের সঙ্গে আমদানি পণ্যসমূহ সামঞ্জস্যপূর্ণ পাওয়া যায়।
তবে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ইক্যুরিয়ার ওয়্যার হাউস বা গুদামে পণ্য পরিবহনের সপক্ষে কোনো বৈধ দলিলাদি বা মূসক ৬.৩ এর কোনো চালানপত্র দেখাতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় বিক্রয় ও সরবরাহ পর্যায়ে মূসক ফাঁকি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত।
উক্ত পণ্যের মূসক আরোপযোগ্য মূল্য ৫ কোটি ২৪ হাজার ৪৩৪ টাকা। এর ওপর প্রযোজ্য মূসকের পরিমাণ পরিমাণ ২৬ লাখ ১১ হাজার ২২১ টাকা, যা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে আদায়যোগ্য।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইকবাল এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ ইকবাল অভিযোগ করেন, যতক্ষণ তিনি এসব পণ্য বিক্রি বা হস্তান্তর করেননি ততক্ষণ এসব পণ্যের মালিক তিনি। বিক্রি বা হস্তান্তর করতে গেলে তবেই মূসকের প্রশ্ন আসে। তা ছাড়া এই মূসক বা ভ্যাট আদায় করার ক্ষমতা রাখে ভ্যাট কমিশনারেট। বন্ড কমিশনার নয়।
বুধবার এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে দেয়া চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন, তার আমদানি পণ্যের চালানের বিপরীতে সব কাগজপত্র ঠিকঠাক পাওয়া সত্ত্বেও বন্ড কমিশনারেটের অসাধু কর্মকর্তারা স্বাক্ষরবিহীন একটি মামলার চিঠি তাদের ধরিয়ে দিয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, তার গুদামে মজুদকৃত শুল্ক ও অগ্রিম ভ্যাট পরিশোধিত পণ্য কারও কাছে বিক্রয় বা হস্তান্তর করা হয়নি। কিন্তু কী উদ্দেশ্যে তার বৈধ আমদানিকৃত পণ্য আটকপূর্বক মূসক ফাঁকির মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে তা তাদের বোধগম্য নয়। এটি তাকে হয়রানি করে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের বহুমাত্রিক কৌশল।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে তিনি ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেছেন। তিনি দেশের একজন প্রথম শ্রেণির করদাতা এবং তিন যুগ ধরে আমদানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে বলেন, ‘এই অবস্থায় এসে অহেতুক হয়রানি মেনে নেয়া যায় না।’
এ প্রসঙ্গে বন্ড কমিশনার এসএম হুমায়ুন কবিরের বক্তব্য জানার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। মুঠোফোনে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া না দেয়ায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
সানিডি/ঢাকা/যুগান্তর/এসএস