ভি-নেক্সটে গতী বাড়বে পুঁজিবাজারে,আসবে বিদেশী বিনিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৯-১০-০৮ ০৬:৪৪:৩৪


ভি-নেক্সটের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের গতী ও গভীরতা বাড়বে বলে মনে করেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম. খায়রুল হোসেন। একই সআখে বলেন, আসবে বিদেশী বিনিয়োগ। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতায় এগিয়ে যাবে। তখন একটি কোম্পানি আন্তর্জাতিকভাবে মূল্যায়িত হবে। সেসব কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা সহজ হবে। এছাড়া বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তালিকাভুক্ত করতে আগ্রহী হবে। কারন তারাও চাইবে ক্যাপিটালের রিটার্ন। আর এ কাজটি সহজ করা হবে।

সোমবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ‘ভি-নেক্সট’ নামে একটি অনলাইন প্লাটফর্ম ও ডিএসইর এসএমই ওয়েবসাইটেরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনীতে তিনি এ কথা বলেন।

খায়রুল হোসেন বলেন, ভি-নেক্সটের মাধ্যমে চীন থেকে শুরু করে সব দেশ থেকেই বিনিয়োগ আসবে। একইসঙ্গে কর্পোরেট সাংস্কৃতি আসবে। এছাড়া আমাদের দেশে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, চার্টার্ড সেক্রটারিজসহ যেসব দক্ষ জনবল গড়ে উঠবে, তাতে করে ভবিষ্যত পুঁজিবাজার নিয়ে আমি আশাবাদি। ডিএসই যে এসএমই বোর্ড তৈরী করেছে, এগুলোর কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে পরিচালনা করে উদ্যোক্তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। ইস্যু ম্যানেজারদেরকেও তাদের কর্মকান্ড আন্তর্জাতিক মানে পরিচালনা করতে হবে।

ডিএসইকে উদ্দেশ্য করে খায়রুল হোসেন বলেন, ভি-নেক্সট মার্কেটটি যেনো হুজুগের কারনে নষ্ট না হয়। আমার অনুরোধ থাকবে প্রথমদিকে থেকেই আপনারা সচেতন থাকবেন। একইসঙ্গে আমরা আশা করব, ডিএসই শীঘ্রই অটোমেটিক ট্রেডিং বোর্ড চালু করবে। যেখানে ওটিসি মার্কেট থেকে শুরু করে বন্ড মার্কেটের ট্রেডিং শুরু হবে। এরমাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আগামি কয়েক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের ও উন্নত দেশের বাজারের সমতুল্য হবে। এছাড়া আগামি ২-৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নতুন স্তরে উন্নিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তখন জিডিপিতে অংশগ্রহণ বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আমাকে ডেকে বললেন, আইটি খাতের কোম্পানিগুলোর জন্য ৫০ কিংবা ১০০ কোটি টাকার দরকার নেই, ৫-১০ কোটি টাকা সংগ্রহে বিএসইসি কাজ করতে পারে। তখনই আমরা মাত্র ৬ মাসে একটি আইন প্রণয়ন করি। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে কোয়ালিফাইড ইনভেষ্টর রুলস করি। যাতে করে স্মল প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। পরবর্তীতে ডিএসই সেটা প্রতিষ্ঠা করেছে। আর এটাকে স্বার্থক করতে আজকে এসএমই ও ভি-নেক্সট প্লাটফর্ম উদ্বোধন করেছি। যা অচিরেই পুঁজিবাজারে গভীরতা বাড়াবে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান ২০ শতাংশ। তবে আজকের কর্মকান্ডের মাধ্যমে শীঘ্রই ১০টি কোম্পানির অনুমোদন অক্টোবরের মধ্যেই দেব। এছাড়া ১৯টি কোম্পানির জন্য চুক্তি বিনিময় হয়েছে। এতে আশা করি পুঁজিবাজারের গভীরতা অনেক বেড়ে যাবে। জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান বেড়ে যাবে। আর কম লেনদেনের কারনে স্টক ডিলার ও ব্রোকাররা যে কষ্টে আছে, তা অনেকাংশে কমে আসবে।

তিনি বলেন, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও জাপান বৃহৎ শিল্প দিয়ে শুরু হয়েছিল। একমাত্র চায়না ছোট ও মাঝারি শিল্প দিয়ে শুরু করেছিল। আমাদের দেশে যেখানে ৬৫ শতাংশ মানুষ ৩৫ বছরের নিচে, সেখানে ছোট ও মাঝারি শিল্পের উপর নির্ভর করে এগোতে হবে। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও কর্মসংস্থান হবে। এই শিল্পকে সচল করতে পারলে ২০৪১ সালের আগেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষমাত্রা পূরণ হবে।

খায়রুল হোসেন বলেন, চায়নাকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসাবে নিয়ে আমরা ভাগ্যবান। যারা ছোট ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে পৃথিবীতে অন্যতম অর্থনৈতিক উন্নয়নের দেশ হয়েছে। ডিএসইর প্রধান কৌশলগত বিনিয়োগকারী শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের ভি-নেক্সট প্লাটফর্ম আছে। তাই আমাদেরকে অর্থনীতিতে উন্নয়ন ও জনগণের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিতে ছোট ও মাঝারি শিল্পের উপর দাড়াঁতে হবে।

তিনি বলেন, এখন যেসব ছোট ও মাঝারি শিল্প হবে, সেগুলো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে যাবে। আমরা চলতি মূলধনের জন্য ব্যাংক ঋণ নির্ভরশীলতা বাড়াতে পারি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি শিল্পায়ন করার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে আসতে হবে। তারই ধারাবাহিকতায় ডিএসই এসএমই প্লাটফর্ম তৈরী করেছে।

তিনি আরও বলেন, চীনদেরকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী নেওয়ায় আমাদের বাজার কি সুবিধা পেল এমন প্রশ্ন উঠেছিল। তাদের কাছ থেকে কি ট্রেকহোল্ডাররা শুধুমাত্র কয়েক কোটি টাকাই পেল। তবে আমরা এখন কৌশলগত বিনিয়োগকারী থেকে আলোকরশ্মি দেখতে পাচ্ছি।

সভাপতির বক্তব্যে ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে চীনকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করা হয়েছিল, সেই সুফল এরইমধ্যে পেতে শুরু করেছি।

ধন্যবাদজ্ঞাপন বক্তব্যে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, চায়না আসার ১ বছরেও কোন ফল না পাওয়ায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। চায়না আসায় কি পেলাম এমন প্রশ্ন উঠে। তবে আজকে সেই ফল পাওয়া শুরু হয়েছে। রাতারাতি সব সুফল পাওয়া যাবে না। এটা ধীরে ধীরে পাওয়া যাবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএসইসির কমিশনার ও নির্বাহী পরিচালকবৃন্দ, ঢাকা ও চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেক হোল্ডার প্রতিনিধিবৃন্দ, চেম্বার প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন এসোসিয়েশন প্রতিনিধিবৃন্দ, তালিকা এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রতিনিধিবৃন্দ, মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রতিনিধিবৃন্দ, ইস্যু ম্যানেজার, অডিটরস, এসএমই সেক্টরের প্রতিনিধিবৃন্দ৷