বীমা খাতের উন্নয়নে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপ
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-১০-২৭ ১৯:৪৯:২৮
দেশের বীমাখাতের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নিম্ন বর্ণিত পদক্ষেপ সমূহ গ্রহণ করেছে। এ সকল পদক্ষেপ সমূহ বাস্তবায়িত হলে পূর্বের চেয়ে দেশের বীমা খাত অনেক অগ্রসর হবে । ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বীমা খাতের ভূমিকা বৃদ্ধি পাবে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বীমাখাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে বীমা গ্রাহকদের আস্থার সংকট নিরসণঃ স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় বীমাখাত অবহেলিত থাকার কারণে যথাযথ নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম না থাকার ফলে বীমা গ্রাহকদের প্রাপ্য দাবির অর্থ যথাসময় এবং যথাযথ ভাবে পরিশোধ না করার কারণে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার সংকট প্রকট হয়, ফলশ্রুতিতে বীমাখাত অন্যান্য আর্থিক খাতের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। বীমাখাতের উন্নয়নের নিমিত্ত বীমাগ্রাহকদের আস্থার সংকট নিরসণ করার লক্ষ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নিম্ন বর্ণিত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে:-
(১) বীমা দাবির অভিযোগ সংক্রান্ত:- বীমা গ্রাহকদের দাবি সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পৃথক অভিযোগ সেল গঠন করে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে । এর ফলে বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ যথাযথভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে ।
(২) মাঠ পর্যায়ে বীমা দাবির চেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হস্তান্তর:- বীমা গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে বীমা দাবির চেক আনুষ্ঠানিকভাবে বীমা গ্রাহকদের হাতে হস্তান্তর করে জনসচেনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং এ সকল অনুষ্ঠানে বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পক্ষের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখার কারণে পূর্বের অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
(৩) বীমাকারীর ওয়েব সাইটে দাবী সংক্রান্ত তথ্য:- বীমা দাবি সংক্রান্ত সমুদয় তথ্য বীমাকারীর ওয়েব সাইটে নিয়মিত আপলোড করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
(৪) মোট বীমা দাবীর পরিমাণ:- ২০১৭ সালে মোট বীমা দাবির পরিমাণ (লাইফ+নন-লাইফ) ৯,৫১৬.৫৯ কোটি টাকার মধ্য থেকে ৬,৫২০.৭৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে এবং বীমা দাবি পরিশোধের হার ৬৮.৫২%। ২০১৮ সালে মোট বীমা দাবির পরিমাণ (লাইফ +নন-লাইফ) ৯,৫৮৫.২১ কোটি টাকার মধ্য থেকে ৭,৪১২.০২ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে এবং দাবি পরিশোধের হার ৭৭.৩৩% ।
কর্তৃপক্ষ থেকে উপরোল্লিখিত পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে ২০১৮ সালে বীমা দাবি পরিশোধের পরিমাণ বিগত বছরের তুলনায় ৮.৮১% বৃদ্ধি পেয়েছে । উল্লেখ্য, কিছু লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বীমা দাবি পরিশোধে সক্ষমতা না থাকা ও হ্রাস পাওয়ায় বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকগণ কর্তৃক অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে। এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে যথাসম্ভব কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
(৫) বীমা মেলা:- বীমার গুরুত্ব ও উপকারীতা সম্পর্কে জন সাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর বিভাগীয় শহরে বীমা মেলার আয়োজন করা হয়। সে সাথে মেলা প্রাঙ্গনে বিভিন্ন বীমা কোম্পানির গ্রাহকদেরকে প্রাপ্য দাবি পরিশোধেরও ব্যবস্থা রাখা হয়।
(৬) বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্প:-বীমা খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারের ১১৮.৫০ কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংক এর ৫১৩.৫০ কোটি টাকা মোট ৬৩২.০০ কোটি টাকার অর্থায়নে Bangladesh Insurance Sector Development Project (BISDP) প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। উক্ত প্রজেক্টের মাধ্যমে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এবং জীবন বীমা কর্পোরেশনকে পেশাদারিত্ব এবং প্রযুক্তিগতভাবে আরও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে এবং বীমা উন্নয়ন ও নিযন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সকল বীমা প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশন পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে । দেশের সকল বীমা প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশন পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসলে বীমা খাতের উন্নয়নের সাথে সাথে অধিকাংশ সমস্যার সমাধান হবে, ফলশ্রুতিতে বীমা গ্রাহকদের আস্থার সংকট নিরসন হবে এবং বীমা খাতের প্রিমিয়াম আয়সহ সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ২০১৮ সালে এবং তা শেষ হবে ২০২২ সালে।
(৭) সচেতনতামূলক সেমিনার:- বিশ্ব ব্যাংকের প্রকল্পের অধিনে বীমা বিষয়ে সকল স্তরের জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী, কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র, ধর্মীয় চিন্তাবিদ, সুশীল সমাজ সকলের উপস্থিতিতে দেশের চারটি বিভাগীয় শহরে সচেতনতামূলক সেমিনার করা হয়েছে।
(৭) বীমার প্রচার ও প্রসার:- বীমার প্রচার ও প্রসারের জন্য দেশের গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, নেত্রোকোনা, মৌলভীবাজার জেলায় বিল বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে এবং ঢাকা, কুমিল্লা, রাজবাড়ী, হবিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, পাবনা, চট্রগ্রাম, বগুড়া, ফরিদপুর, বরিশাল, সিলেট, নওগাঁ যশোর, বরিশাল, ভোলা, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ফেনী, খুলনা, ময়মনসিংহ জেলায় বিল বোর্ড স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক TVC তৈরী করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে ।
(৮) বীমাকারীদের নিয়ে ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভা:- প্রতি তিন মাস অন্তর বীমাকারীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক/ মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে নিয়মিত সমন্বয় সভার আয়োজন করে বীমা প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম মূল্যায়নপূর্বক উপস্থিত সকলের নিকট থেকে মতামত নিয়ে বীমা খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
(৯) বীমাকারীর চেয়ারম্যানদের নিয়ে মতবিনিময়:-মাঝে মধ্যে বীমা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানদেরকে নিয়ে সভার করে বীমা খাতের সমস্যাবলী ও সমাধানের উপায় বিষয়ে তাদের সাথে মতবিনিময় করে বীমা খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
(১০) নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ১৫% এর অতিরিক্ত কমিশন বন্ধকরণের উদ্যোগ:- নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ১ আগষ্ট ২০১৯ থেকে ১৫% এর অতিরিক্ত কমিশন প্রদান বন্ধ করা হয়েছে। ৩টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রিমিয়াম কালেকশন তথা প্রিমিয়াম আয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা আনয়নে অভ্যন্তরীন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Internal Control System) নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে। উক্ত আর্থিক ব্যবস্থাপনার ফলে অধিক হারে কমিশন প্রদান বন্ধ হবে পাশাপাশি প্রিমিয়াম আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে সরকারি রাজস্ব, যেমন- ভ্যাট, ট্যাক্স, স্ট্যাম্প শুল্ক ইত্যাদি বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।
(১১) বীমা খাতে Digitization:- বীমা খাতে Digitization এর আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে Unified Messaging Platform (UMP) নামক State-of-the-art Technology সমৃদ্ধ একটি প্লাটফরম (Platform) বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অফিসে স্থাপনের প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে এবং উক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাইফ এবং নন-লাইফ সেক্টরের সকল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করত: নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। তাছাড়া বীমা গ্রাহক তার বীমা পলিসির সকল তথ্য সহজেই জানতে পারবেন ফলে বীমা গ্রাহকদের আস্থার সংকট অনেকাংশে নিরসন হবে।
(১৩) বিশেষ নিরীক্ষা:-বীমা কোম্পানিসমূহে পূর্বে বন্ধ থাকা বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে ।
(১৪) কর্তৃপক্ষের পরিদর্শন :- বীমা কোম্পানিতে নিয়মিত পরিদর্শনের কাজ চলমান রয়েছে। পরিদর্শনের পর্যবেক্ষণে কোন অনিয়ম বা বীমা আইন লঙ্ঘনের বিষয় উঠে আসলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বীমা আইন, ২০১০ এর সংশ্লিষ্ট ধারার বিধান মোতাবেক বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কাজ চলমান রয়েছে ।
(১৫) জাতীয় বীমা দিবস :- সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়েল ট্রাস্ট থেকে প্রদত্ত তথ্য মোতাবেক জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১ লা মার্চ ১৯৬০ তারিখে যোগদানের মাধ্যমে তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্সের পূর্ব অঞ্চলের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করায় উক্ত ১ লা মার্চকে স্মরণীয় করা তথা বীমাখাতের উন্নয়নের স্বার্থে প্রতি বছর জাতীয় বীমা দিবস হিসাবে পালন করার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য মন্ত্রনালয়ে পত্র প্রেরন করা হয়েছে।
(১৬) বীমাকারীর একইরূপ সাংগঠনিক কাঠামো : একই শ্রেণির সকল বীমাকারীর জন্য একইরূপ সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়নের লক্ষ্যে লাইফ ও নন-লাইফ বীমাকারীর জন্য দুটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়।
(১৭) Bancassurance: বীমা পণ্য বিতরণ চ্যানেল বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে Bancassurance এর প্রস্তাব বিবেচনার জন্য মন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রেরন করা হয়েছে।
বীমা সেবার পরিধি বিস্তার করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ: বীমা সেবার পরিধি বিস্তার করার লক্ষ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে নিম্ন বর্ণিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা হয়:
(১) প্রবাসী কর্মীদের জন্য বীমা সুবিধা:- প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের আগ্রহের প্রেক্ষিতে প্রবাসী কর্মীদের জন্য বীমা পরিকল্প নীতিমালা প্রণয়ন করে তা পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য উক্ত মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করা
(২) হাওর এলাকায় শস্য বীমা:- ঝুঁকি প্রবণ হাওড় এলাকায় শস্য বীমা চালুর লক্ষ্যে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এবং গ্রীনডেল্টার সাথে আলোচনাক্রমে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ Concept Paper তৈরী করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রেরন করা হয়েছে, যা বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে বিবেচনাধীন আছে।
(৩) স্বাস্থ্য বীমা প্রচলণ:- রাষ্ট্র মালিকানাধীন জীবন বীমা কর্পোরেশন সরকারি কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা সংক্রান্ত বীমা পরিকল্প তৈরী করে কার্যক্রম গ্রহণ করার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে ।
(৪) অগ্নি / ভূমিকম্পসহ বড় ধরণের দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে বড় ভবনগুলোর বাধ্যতামূলক বীমার আওতায় নিয়ে আসা:-
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে সরকারি ও বেসরকারি বৃহৎ স্থাপনা / ভবনসমূহের ঝুঁকি নিরসনে বীমার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের মনোযোগ আকর্ষন করে পত্র প্রদানের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অনুরোধ করে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে এবং উক্ত পত্রের অনুলিপি অবহিতকরণের জন্য মন্ত্রি পরিষদ সচিব, গৃহায়ন ও পূর্তমন্ত্রনালয়ের সচিব এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সহ সকল বিভাগীয় শহরের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মহোদয়ের নিকট প্রেরণ করা হয়।
তাছাড়া সকল বেসরকারী বীমা কোম্পানিকেও তাদের নিজস্ব মালিকানাধীন ভবন বা ভাড়াকৃত ভবনকে বীমার আওতায় আনার জন্য কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
(৫) অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য বীমা: সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য বীমার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
(৬) রেল যাত্রীদের জন্য বীমাঃ রেল যাত্রীদেরকে বীমার আওতায় আনার লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব মন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রেরন করা হয়েছে।
বীমার পেনিট্রেশন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপসমূহঃ
বাংলাদেশে বীমা একটি সম্ভাবনাময় গুরুত্বপূর্ণ খাত । পৃথিবীর অগ্রসর দেশ সমূহে জিডিপিতে এ খাতের অবদান উল্লেখযোগ্য, যেমন: জিডিপিতে যুক্তরাজ্যে এ খাতের অবদান ১১.৮%, ইউএসএ ৮.১%, জাপান ৮.১%. হংকং ১১.৪%, ব্রাজিল ৩.২%, চীন ৩%, ভারত ৪.১% ও সিঙ্গাপুর ৭%। কিন্তু বাংলাদেশে এর অবদান মাত্র ০.৫৫%, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম।
বাংলাদেশের জিডিপিতে বীমাখাতের পেনিট্রেশন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ থেকে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা নিম্নরূপ-
- বীমা পরিধি বৃদ্ধি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ, যেমন- প্রবাসী কর্মীদের জন্য বীমা, সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা, হাওড় অঞ্চলে শস্য বীমা, সরকারী সকল স্থাপনা বাধ্যতামূলকভাবে বীমার আওতায় নিয়ে আসা, রেলওয়ে যাত্রীদের জন্য বীমা, অটিজমদের জন্য বীমা ইত্যাদি । এ সকল বীমা পরিকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রিমিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ফলশ্রুতিতে পেনিট্রেশনও বৃদ্ধি পাবে।
- Digitization এর মাধ্যমে বীমা ব্যবসা পরিচালনা করলে সুশৃঙ্খল ফিরে আসবে এবং গ্রাহক সেবা বৃদ্ধি পাবে, ফলশ্রুতিতে গ্রাহকের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং সে সাথে প্রিমিয়ামও বৃদ্ধি পাবে। সে জন্য Unified Messaging Platform (UMP) নামক State-of-the-art Technology সমৃদ্ধ একটি প্লাটফরম (Platform) বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অফিসে স্থাপনের প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া Bangladesh Insurance Sector Development Project (BISDP) প্রকল্পের মাধ্যমে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে বীমাখাতকে অটোমেশন পদ্ধতির অধীনে নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যার বাস্তবায়নের কাজ শুরু রয়েছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে বীমাখাতের অটোমেশন কাজ বাস্তবায়িত হলে বীমাকারীর স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে এবং সে সাথে বীমা গ্রাহকের আস্থাও বাড়বে। ফলশ্রুতিতে প্রিমিয়ামও বৃদ্ধি পাবে।
- বীমা পণ্য বিতরণ চ্যানেল বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে Bancassurance এর প্রস্তাব বিবেচনার জন্য মন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রেরন করা হয়েছে। বীমাখাতে উক্ত বিতরণ চ্যানেল চালু হলে প্রিমিয়াম বৃদ্ধি পাবে।
- বীমা বিষয়ে প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতি বছর বীমা মেলার আয়োজন করা হয়। TVC তৈরীরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ফলশ্রুতিতে বীমা সম্পর্কে গ্রাহকের ধারনা বৃদ্ধি পায় ।
- নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ১৫% এর অতিরিক্ত কমিশন বন্ধকরণের উদ্যোগ করা হয়। ফলশ্রুতিতে বীমাকারীর আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাবে।
- প্রতি বছর জাতীয় বীমা দিবস পালন করার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য মন্ত্রনালয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পত্র প্রেরন করা হয়েছে। জাতীয় বীমা দিবস চালু হলে বীমাকারীসহ গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। ফলশ্রুতিতে প্রিমিয়ামও বৃদ্ধি পাবে।
কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত এই সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে বীমার পেনিট্রেশন হারের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভবপর হবে।
বীমাখাতের বর্তমান অবস্থার কিছু পরিসংখ্যান
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন :- সরকার কর্তৃক বীমা অধিদপ্তরকে বিলুপ্ত করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০ এর ধারা ৩ এবং ধারা ৫ এর বিধান মোতাবেক ২৬ জানুয়ারী ২০১১ এক জন চেয়ারম্যান এবং চারজন সদস্যের সমন্বয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। বর্তমানে কর্তৃপক্ষে একজন চেয়ারম্যান এবং তিন জন সদস্য কর্মরত রয়েছেন।
বীমা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা :-
বীমার শ্রেণী | সরকারি | বেসরকারি | মোট |
লাইফ ইন্স্যুরেন্স | ১ | ৩১ | ৩২ |
নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স | ১ | ৪৫ | ৪৬ |
মোট | ২ | ৭৬ | ৭৮ |
বীমা গ্রাহক/উপকারভোগীদের সংখ্যা :-
বীমার শ্রেণী | ২০১৭ | ২০১৮ | প্রবৃদ্ধি (%) |
লাইফ ইন্স্যুরেন্স | ১,০৯,৫১,৯২০ | ১,১৯,৮২,৬৭৩ | ৯ |
নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স | ২৪,১৮,৬৩০ | ২৪,১৯,৭৩৮ | ০.০৪ |
মোট | ১,২৬,৭১,৩৪৮ | ১,৩৩,৭০,৫৫০ | ৫.৫২ |
২০১৮ সালের হিসাব মোতাবেক দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭.৯৪% উপকারভোগী/ গ্রাহক লাইফ এবং নন-লাইফ বীমার আওতায় রয়েছে।
গ্রস প্রিমিয়িাম :- (কোটি টাকায়)
বীমার শ্রেণী | ২০১৭ | ২০১৮ | প্রবৃদ্ধি (%) |
লাইফ ইন্স্যুরেন্স | ৮,১৯৮.৪৬ | ৯,০১৯.৬১ | ১০.০২ |
নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স | ২,৯৮১.৪৩ | ৩,৩৯৯.০০ | ১৪.০১ |
মোট | ১১,১৭৯.৮৯ | ১২,৪১৮.৬১ | ১১.০৮ |
বিনিয়োগ :- (কোটি টাকায়)
বীমার শ্রেণী | ২০১৭ | ২০১৮ | প্রবৃদ্ধি (%) |
লাইফ ইন্স্যুরেন্স | ২৯,৯৩৪.০০ | ৩০,৬৪৬.৩৬ | ২.৩৮ |
নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স | ৫,৮৫৫.০০ | ৬,২৮৮.৭৪ | ৭.৪১ |
মোট | ৩৫,৭৮৯.০০ | ৩৬,৯৩৫.১০ | ৩.২০ |
বীমা খাতে বিভিন্ন পর্যায়ে বর্তমানে কর্মরত লোকবলের সংখ্যা :-
বীমার শ্রেণী | ২০১৭ | ২০১৮ | প্রবৃদ্ধি (%) |
লাইফ ইন্স্যুরেন্স | ৬,২৫,৭৮৭ | ৬,১৯,৬১৯ | -০.৯৮ |
নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স | ১৯,৪৩৪ | ১৯,৬৪৬ | ১.০৯ |
মোট | ৬,৪৫,২২১ | ৬,৩৯,২৬৫ | -০.৯২ |
সরকারের রাজস্বঃ দেশের বীমা খাত থেকে আয়কর, ভ্যাট, উৎস স্থলে কর্তন, উৎস স্থলে ভ্যাট কর্তন এবং বীমা স্ট্যাম্প শুল্ক বাবদ ২০১৬ সালে প্রায় ১,২১১.২৯ কোটি, ২০১৭ সালে প্রায় ১,৪৩৪.৩২ কোটি এবং ২০১৮ সালে ১,৬৭৭.৭৯ কোটি টাকা রাজস্ব সংগৃহীত হয়েছে।
সানবিডি/ঢাকা/এবিএস