চাঁদপুরের চাঁদমুখ ইউএনও রাহেলা রহমত উল্লাহ
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-১০-১৬ ১৪:১৯:০০
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কর্তব্য অবহেলা, জনহয়রানি ও ঘুষ-দুর্ণীতিসহ অভিযোগের শেষ নেই জনগণের। তবে এর ব্যতিক্রম কর্মোদ্যম সৎ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও রয়েছে।
যারা লোভ লালসার উর্ধ্বে উঠে নিজ প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তোলেন জনবান্ধ ও বিপদগ্রস্থ মানুষের আশ্রয়স্থল। এদের মধ্যে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহেলা রহমত উল্লাহ অন্যতম।
৩০ সেপ্টেম্বর এই উপজেলায় তার দায়িত্বকাল এক বছর পুর্ণ হয়েছে। তাঁর সৎভাব ও কর্মদক্ষতায় পাল্টে গেছে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সার্বিক চিত্র। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দফতরের কর্মকান্ডে ফিরে এসেছে গতিশীলতা ও সচ্ছতা। কমেছে জনভোগান্তি আর বৃদ্ধি পেয়েছে জনসেবার মান। সিঙ্গাইর উপজেলাকে একটি উন্নত আধুনিক জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরালসভাবে কাজ করছেন তিনি।
জনবান্ধব এই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলার সৎভাবাপন্ন জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও সমাজের বিশিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ।
ইউএনও রাহেলা রহমত উল্লাহর জন্ম চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল গ্রামে। তার বাবা রহমত উল্লাহ জিন্নাহ ও মা নুরুন্নাহার। তিনি বড়কুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন।
সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ১৯৯৮ সালে হাজীগঞ্জ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০০০ সালে হাজীগঞ্জ মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০০৪ সালে দেশের সর্বোচ্চ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সমাজ কল্যাণ বিষয়ে অনার্স ও ২০০৫ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
এখানেই লেখা পড়ার পাঠ চুকিয়ে ২০০৮ সালে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজের প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশ সোনালী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পান। ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় ২৮ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যোগদান করেন। ৫ দিন প্রশিক্ষণ শেষে ৬ ডিসেম্বর তাকে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারি কমিশনার(ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ন্যাস্ত করা হয়।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলা ও ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ঢাকা লালবাগ সার্কেল অফিসে সহকারি কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পদোন্নতি পেয়ে বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর সহকারি পরিচালক হন।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শরিয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। সেখান থেকে বদলি হয়ে ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি সিঙ্গাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব নেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। তার স্বামী সামসুল আলম একজন সফল ব্যবসায়ী। এই দম্পতির মারিনা ও সারিনা নামে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি সিঙ্গাইর উপজেলা প্রশাসনকে নিজের মতো করে ঢেলে সাঁজান। উদ্যোগ নেন দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করে সিঙ্গাইরকে একটি আধুনিক উন্নত জনপদ হিসেবে গড়ে তোলার। প্রথমেই তিনি নিজ কার্যালয়ে সিসি ক্যামেরার স্থাপন করে পুরো উপজেলা পরিষদ চত্বরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেন। এতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে কমে যায় অপরাধীদের আনাগোনা।
শক্তহাতে টেনে ধরেন দুর্ণীতিবাজ, ভূমি দস্যু, বালু খেকো, খাস জমি, খাল ও নদী দখলদারদের লাগাম। তাঁর সৎভাব ও কর্মদক্ষতায় উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা ফিরে আসতে শুরু করে। কমে যায় জনভোগান্তি আর বৃদ্ধি পায় জনসেবার মান।
নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন ও জনকল্যাণমুলক কাজ করে দক্ষ প্রশাসক হিসেবে উপজেলার সব শ্রেণী পেশার মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তিনি। প্রভাবশালী মহলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ৯৩টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে নজীর স্থাপন করেছেন জনবান্ধব এই উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে মাদকদদ্রুব্য, ভোক্তা অধিকার, মটরযান, মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল, বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন লঙনের দায়ে ৩৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়। জরিমানা আদায় করা হয় প্রায় ১৬ লাখ টাকা। উচ্ছেদ করা হয়েছে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ৪টি ইটভাটা।
বন্ধ করে দেওয়া হয় ধলেশ্বরী নদীর জমি দখল করে নির্মাণাধীন মানিকগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশন’স লিমিটেড এর কাজ। সেই সাথে উদ্ধার করা হয় প্রতিষ্ঠানটির দখলে থাকা ১১.৩০ একর সরকারি খাস জমি। এছাড়া অবৈধ দখলমুক্ত করা হয় উপজেলার বহু সরকারি রাস্তা, খাল, জলাশয়, নদী ও হাট-বাজার।
সর্ব ক্ষেত্রেই রয়েছে এই নারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পদচারণা। দাফতরিক কাজের বাইরে সকাল-বিকাল ছুটে বেড়ান মাঠ-ঘাট। কথা বলেন উপজেলার সাধারণ মানুষের সাথে। শুনেন তাদের দু:খ কষ্টের কথা। খোঁজ খবর নেন সমাজের অবহেলিত গরীব দু:খী মানুষের। পরিদর্শন করেন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলার উন্নয়ন প্রকল্প। কোথাও কোনো সমস্যা দেখলে নেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
তাছাড়া গণমাধ্যম, ফেইসবুক, মুঠোফোন ও ই-মেইলের মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ দ্রুত সমাধান ও তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিয়ে সব শ্রেণী পেশার মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি উপজেলার সায়েস্তা বেগুনটিয়ারি গ্রামের দরিদ্র মল্লিকা বেগম ও শত্তোর্ধ প্রতিবন্ধী স্বামী রমজান মোল্লার দু:খ দুর্দশা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। দীর্ঘদিন ধরে জীর্ণশীর্ণ ঘরে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন এই অসহায় দম্পতি।
সংবাদটি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ইউএনও রাহেলা রহমত উল্লাহ চালডাল ও সাংসারিক প্রয়োজনীয় জিনিপত্র নিয়ে ছুটে যান তাদের বাড়িতে। মনোযোগ সহকারে শুনেন তাদের দু:খ কষ্টের কথা।
ব্যবস্থা করেদেন হতদরিদ্র পরিবারটিকে একটি বয়স্কা ভাতার কার্ড ও থাকার জন্য একটি ঘর। শুধু এই ঘটনাটিই নয়, এরকম অনেক দারিদ্রপীড়িত মানুষের পাশে দাড়িয়ে উপজেলার সর্বমহলে প্রশংসিত হন এই নারী ইউএনও।
এ
ছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা ও জাতীয় শোক দিবসসহ প্রতিটি সরকারি কর্মসূচি দক্ষতার সাথে বাস্তবায়ন করে বেশ সুনাম অর্জন করেন এই চৌকস উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) হামিদুর রহমান ও উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ রুবায়েত জামানসহ একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাহেলা রহমত উল্লাহ স্যার খুবই দায়িত্বশীল ও কর্মঠ অফিসার। তার কর্মস্পৃহায় উপজেলার সরকারি-বেসরকারি দফতরের কর্মকান্ডে ফিরে এসেছে গতিশীলতা ও জবাবদেহীতা। প্রশাসনিক কাঠামো হয়েছে অত্যন্ত শক্তিশালী।
সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ নিয়ে কাজ করছেন তিনি। সরকারি সব কর্মকর্তারা যদি তার মতো কর্মঠ ও দায়িত্বশীল হতেন তাহলে আমাদের দেশ আরো এগিয়ে যেত।
উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান শারমিন আক্তার বলেন, ইউএনও রাহেলা রহমত উল্লাহ নি:সন্দেহে একজন দক্ষ ও সাহসী উপজেলা নির্বাহী অফিসার। কখনোই তিনি অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন না।
নীতির প্রশ্নে সব সময় থাকেন অনড়। স্থানীয় এমপি কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের নির্দেশনায় সিঙ্গাইর উপজেলাকে একটি উন্নত ও আধুনিক জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে বিরামহীন ভাবে কাজ করছেন তিনি। তার কঠোর মনোভাবের কারণে উপজেলা পরিষদের উন্নয়নমুলক কর্মকাণ্ডে কমে গেছে ঘুষ-দুর্ণীতি ও বেড়েছে জনসেবারমান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহেলা রহমত উল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন ও সিঙ্গাইরকে একটি আধুনিক উন্নত উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ নিয়ে কাজ করছি।
এটি আমার নৈতিক দায়িত্ব। স্থানীয় সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম, জেলা প্রশাসক এস,এম ফেরদৌস, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং সমাজের বিশিষ্ঠজনরা সব সময় আমার কাজে সহযোগীতা করছেন। তিনি আরো বলেন, সরকারী কর্মকর্তারা জনগনের সেবক।
নিজে কি পেলাম সেটা বড় কথা নয়, দেশ ও জাতীর জন্য কি করতে পারলাম সেটাই বড় কথা। নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সব সময় চেষ্টা করি মানুষের দুঃখ কষ্ট লাঘবের। আমি হয়েতো একদিন এই উপজেলায় থাকব না, কিন্তু থেকে যাবে আমার কর্ম। যদি ভাল কাজ করে যেতে পারি, তাহলে সিঙ্গাইরবাসী আমাকে আজীবন মনে রাখবে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস