আবেদনের হিড়িক সরকারি ব্যাংকে,সাড়া নেই বেসরকারিতে
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-১০-২০ ১১:০৭:৩৬
কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে ঋণ রয়েছে এজি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ও ফ্রেন্ডস ট্রেডার্সের। মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করেছিল প্রতিষ্ঠান দুটি। তবে ব্যাংক তাতে রাজি না হওয়ায় প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষ থেকে গত ৯ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। রিট আবেদন বিবেচনায় নিয়ে আদালত বিষয়টি সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দেন। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ উচ্চ আদালতে রিট করছেন বেসরকারি ব্যাংকের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অভিযোগ দিচ্ছেন অনেকেই।
বেসরকারি ব্যাংকে এ রকম চিত্র থাকলেও ঠিক বিপরীত চিত্র সরকারি ব্যাংকগুলোতে। ডেকে ডেকে আবেদন করাচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলো। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারি পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকে প্রায় তিন হাজার আবেদন পড়েছে বলে জানা গেছে। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে সুবিধার জন্য আবেদনের নির্ধারিত তারিখ শেষ হচ্ছে আজ রোববার।
বিভিন্ন পক্ষের বিরোধিতা ও সমালোচনার পরও খেলাপি ঋণ কমাতে অর্থমন্ত্রীর সুপারিশে গত ১৬ মে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্দমানে খেলাপি ঋণ মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের বিপরীতে ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিলের সুবিধা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহারের সীমা ঠিক করে দেওয়া হয় ৯ শতাংশ। পুনঃতফসিলের আগে গ্রাহককে সুদ মওকুফ সুবিধাও দেওয়া যাবে। সার্কুলার জারির তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এ সুবিধার জন্য আবেদন করতে বলা হয়। সার্কুলারের ওপর উচ্চ আদালতের দু’দফা স্থগিতাদেশের কারণে আবেদন কার্যক্রম অনেক দিন বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়িয়ে আবেদনের শেষ দিন নির্ধারণ করা হয় ২০ অক্টোবর।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথমত, এই নীতিমালাটি যুক্তিসঙ্গত হয়নি। এর ফলে ভালো গ্রাহকরা বলবে আমাদের সুবিধা না দিয়ে খারাপদের দেওয়া হচ্ছে। এতে বাজারে একটা খারাপ বার্তা যাবে। এভাবে সুবিধা না দিয়ে বরং কঠোর হস্তে খেলাপিদের দমন করলে ভালো হতো। তিনি বলেন, যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে অনেক ভাবতে হয়। আমানতের জন্য সরকারি ব্যাংকের খুব একটা সমস্যা হয় না। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে অনেক কষ্ট করতে হয়। যে কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে অনেক ভাবতে হয়।
জানা গেছে, বিশেষ নীতিমালায় ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক সুবিধা না দেওয়ার পক্ষে। এ জন্য অনেক ব্যাংক নানা উপায়ে গ্রাহককে ঘুরাচ্ছে বলে প্রচুর অভিযোগ পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে কোনো কোনো ব্যাংক আবেদনে এই সমস্যা ওই সমস্যা বলে সময়ক্ষেপণ করছে। কোনো কোনো ব্যাংক আবার সরাসরি বলে দিচ্ছে আপনার আবেদন বিবেচনার যোগ্য নয়। তবে সার্কুলারে যেহেতু ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ফলে কেউ সুবিধা না দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আলাদাভাবে কিছু করার নেই বলে সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন। যদিও সরকারি ব্যাংকগুলোতে ভিন্ন চিত্র। অধিকাংশ সরকারি ব্যাংক গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আবেদন নিয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি আবেদন পেয়েছে জনতা, সোনালী ও বেসিক ব্যাংক। নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির প্রভাবে খেলাপি ঋণের দিক দিয়েও শীর্ষে রয়েছে এই ব্যাংকগুলো। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২০ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে জনতা ব্যাংকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে সোনালী ব্যাংকে। আর বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রয়েছে ৯ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। পুনঃতফসিলের জন্য জনতা ব্যাংকে আবেদন করেছে একক গ্রাহকের ঋণসীমা অতিক্রম করে কয়েকগুণ ঋণসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে আলোচিত অ্যাননটেক্স গ্রুপসহ ৭০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সুবিধার জন্য সোনালী ব্যাংকে এক হাজার, বেসিক ব্যাংকে ৫২০, অগ্রণীতে ৩০০ এবং রূপালীতে আড়াইশর মতো আবেদন এসেছে।
জনতা ব্যাংকে অ্যাননটেক্স গ্রুপের বর্তমান খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্দমানে খেলাপি তিন হাজার কোটি টাকা বিশেষ সুবিধায় পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন জালিয়াতিতে অভিযুক্ত চামড়া খাতের ক্রিসেন্ট গ্রুপ এবং অর্থ পাচার করে থেকে পলাতক বিসমিল্লাহ গ্রুপ এ সুবিধার জন্য ব্যাংকের সঙ্গে আলাপ করেছে। এদের মধ্যে বিসমিল্লাহ গ্রুপ আবেদন করলেও তাতে সাড়া দিচ্ছে না ব্যাংক। আর ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে বলা হলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো আবেদন আসেনি।
জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, বিশেষ নীতিমালায় ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধার জন্য ভালো সাড়া মিলেছে। এখন পর্যন্ত এক হাজারের মতো আবেদন এসেছে। যাচাই-বাছাই করে এসব আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের ইচ্ছায় এ সার্কুলার জারি করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এ সুবিধার জন্য বিভিন্নভাবে সরকারি ব্যাংকগুলোকে বলা হচ্ছে। ফলে তারা সুবিধা দেবে এটা স্বাভাবিক। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এ সুবিধা দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়টি তাদের নিজস্ব বিষয়। ফলে এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয় তেমন কিছু নেই।
সানবিডি/ঢাকা/এবিএস