পাইকারিতে বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-১১-১২ ১৩:১৪:৪৯


চলতি বাজেটে ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির পর কয়েক দফায় দাম বেড়েছিল নিত্যপণ্যটির। এরপর প্রায় এক মাস বিরতি দিয়ে ফের বাড়তে শুরু করে ভোজ্যতেলের দাম। আর এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং মূল্য বেড়ে যাওয়া ও আসন্ন শীত মৌসুম সামনে রেখে নতুন করে অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের বাজার। ফলে গত এক মাসে মণপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুল্ক বৃদ্ধির পর পাইকারি পর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যায়। এর মধ্যে পাম অয়েলের দাম মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ১ হাজার ৯০০ থেকে বেড়ে ২ হাজার ১০০ টাকায় স্থির হয়। কিন্তু এক মাস ধরে ফের দাম বেড়ে ২ হাজার ৩৬০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে সয়াবিনের দাম ২ হাজার ৮০০ থেকে বেড়ে ৩ হাজার টাকা মণে লেনদেন হচ্ছে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ান পাম অয়েলের ফিউচার মার্কেটে বুকিং দর ঊর্ধ্বমুখী থাকায় দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের বাজারে পাম ও সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কিন্তু আসন্ন শীত মৌসুমে পাম অয়েলের পরিবর্তে সয়াবিনের চাহিদা বেড়ে যাবে। এ কারণে অনেকেই অগ্রিম মুনাফার জন্য সয়াবিনের এসও সংগ্রহ করছেন। এছাড়া আসন্ন শীতের আগে পাম অয়েলের দাম কিছুটা নিম্নমুখী থাকার কথা থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে দাম কমার পরিবর্তে বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক দরের চেয়েও দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কম রয়েছে। ফলে নতুন করে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বারচার্টডটকমের তথ্যমতে, এক মাস আগেও প্রতি টন পরিশোধিত পাম অয়েলের বুকিং দর ছিল ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৩৫০ রিঙ্গিত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুকিং দর বেড়ে যায়। সর্বশেষ চলতি নভেম্বরে পাম অয়েলের বুকিং দর ২ হাজার ৫২৬ রিঙ্গিত হয়েছে। এছাড়া ডিসেম্বরের বুকিং দর (ডিসেম্বর মাসে সরবরাহযোগ্য) ২ হাজার ৫২৪ রিঙ্গিত, ২০২০ সালের জানুয়ারির বুকিং ২ হাজার ৫৭৩ রিঙ্গিত, ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ৬০০ রিঙ্গিত, মার্চে ২ হাজার ৬০৮ রিঙ্গিত। এপ্রিলে সরবরাহযোগ্য পাম অয়েলের বুকিং দরও ২ হাজার ৫৯৮ রিঙ্গিতে লেনদেন হচ্ছে বিশ্ববাজারে।

খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বাজেটে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যায়। এর ওপর আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে বর্তমানে দেশের বাজারে আবারো বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। এ ধারা অব্যাহত থাকলে কয়েক মাসের মধ্যে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিরতার দিকে যাবে। এজন্য দেশের বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।

এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতে পাম অয়েল জমে যায় বিধায় সয়াবিনের চাহিদা বাড়ে। যদিও দেশে ব্যবহূত ভোজ্যতেলের মধ্যে ৮০ শতাংশই পাম অয়েল। কিন্তু শীত মৌসুম এলে সয়াবিনের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে শীতের প্রকোপ কমার সঙ্গে সঙ্গে পাম অয়েলের চাহিদাই বাড়ে। পাইকারি বাজারে খোলা ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে থাকায় দুই সপ্তাহের মধ্যে বোতলজাত ভোজ্যতেলের দামও বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো।

বিভিন্ন ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানে মণপ্রতি পাম অয়েলের ডিও বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৬০ টাকায়, সুপার পাম অয়েলের ডিও ২ হাজার ৪০০ টাকায় এবং সয়াবিনের ডিও বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯৮০ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ দরে। তবে সরাসরি মিল গেট থেকে উত্তোলনযোগ্য ভোজ্যতেল ডিও প্রতি আরো ২০-৩০ টাকা বেশি দামে লেনদেন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও চলতি সপ্তাহে ভোজ্যতেলের দাম আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।