শেফার্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের প্রতারণা আটকে দিলো বিএসইসি
:: আপডেট: ২০১৯-১১-১৪ ২১:১৭:৪৯
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি শেফার্ড ইন্ড্রাস্টিজের প্রতারণা আটকে দিলো বিএসইসি। একই পরিচালকদের কোম্পানি হওয়ার সুযোগে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের বিভিন্ন সম্পদ কম দামে শেফার্ড জিনসে হস্তান্তরে প্রতারণার ফাদঁ পাতে পরিচালনা পর্ষদ। তারা চলতি বছরে গঠিত নামসর্বোস্ব শেফার্ড জিনসে বিনিয়োগের নামে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এই ফাঁদ তৈরী করে। তবে বিএসইসি সেই বিষয়টি জানতে পেরে তা বন্ধ করে দিলো।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম সাক্ষরিত এক চিঠিতে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের বৃহৎ স্বার্থের কথা বিবেচনা কের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সাথে শেফার্ড জিনসে বিনিয়োগ থেকে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব আবু জাফর সানবিডিকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনো কিছু জানিনা। তবে জানলে বলতে পারবো, চিঠিতে কমিশন কি লিখেছে। পরে আপনাদের জানাতে পারবো।
জানা গেছে,গত ২৪ অক্টোবর শেফার্ড জিনসে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদ। যাদের শেফার্ড জিনসে বড় স্বার্থ থাকলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজে স্বার্থ মাত্র ৫১.৪৮ শতাংশ। বাকি ৪৮.৫২ শতাংশ রয়েছে সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছে। যাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে কম দামে সম্পদ নিতে পারা মানেই পরিচালকেরা লাভবান হতেন।
বিএসইসির এক পর্যবেক্ষনে উঠে এসেছে, শেফার্ড জিনস একটি নতুন কোম্পানি। যা ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল গঠিত হয়েছে। এই অবস্থায় কোম্পানিটির প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার কিনতে চায় তালিকাভুক্ত শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। এজন্য শেফার্ড জিনসকে ৩৯ শতাংশ জমিসহ ভবন ও মেশিনারীজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও শেফার্ড জিনসের ২৪ অক্টোবরের পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ বড় বিনিয়োগ করতে চাওয়া শেফার্ড জিনস এখনো আয়কর নাম্বার, ট্রেড সনদ, আমদানি রেজিষ্ট্রেশন সনদ, রপ্তানি রেজিষ্ট্রেশন সনদ, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সনদ, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিজিএমইএ মেম্বারশীপ নম্বর, ইপিবি লাইসেন্স নম্বর, ফ্যাক্টরী লাইসেন্স নম্বর, ফায়ার লাইসেন্স নম্বর এবং পরিবেশ ছাড়পত্র সনদ সংগ্রহ করতে পারেনি। এগুলো পক্রিয়াধীন রয়েছে।
শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ অন্যান্য সম্পদের সঙ্গে ক্রয়মূল্যে ৪ তলা বিশিষ্ট ভবন শেফার্ড জিনসকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষের কমিশনে দাখিলকৃত কাঠামোগত অংকনে ভবনটি ৫ তলা প্রতিয়মান হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট আর্টিস্টিক প্রপার্টিজের আনকূল্যে ইস্যুকৃত ওয়ার্ক ওর্ডারে শুধুমাত্র ভবনের দাম ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা দেখানো হয়। তবে নিজেদের মালিকানার শেফার্ড জিনসকে দেওয়ার জন্য ৩৯ শতাংশ জমিসহ ভবনের দাম দেখিয়েছে ৮ কোটি ৭ লাখ টাকা।
এই বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কমিশনের নোটিফিকেশন অনুসরন করা হয়নি বলে কমিশনের পর্যবেক্ষনে উঠে আসে। শেফার্ড জিনসকে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ারের বিনিময়ে জমিসহ ভবন ও মেশিনারীজ দিতে চাইলেও ওইসব সম্পদের প্রকৃত মূল্য কত, তা মূল্যায়ন করেনি শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ। এতে কমিশনের নোটিফিকেশন নং এসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০৯-১৯৩/১৫০ লঙ্ঘন করা হয়েছে।
শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং শেফার্ড জিনসের উভয়ের রেজিস্টার্ড ও ফ্যাক্টরী অফিসের ঠিকানা এক। যা শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ঠিকানা শেফার্ড জিনস ব্যবহার করার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে কমিশনের পর্যবেক্ষনে উঠে এসেছে। এছাড়া শেফার্ড জিনসের ২ পরিচালক শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যা উভয় কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে রিলেটেড পার্টির ইঙ্গিত করছে।