ঈমানের কি ও ঈমানের তাৎপর্য
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-১২-২৩ ১৮:২৫:৫৮
ঈমান ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ঈমান ব্যতীত মানুষ তার কোন সৎ আমলের প্রতিদান পরকালে লাভ করতে পারবে না। আবার ঈমানহীন মানুষ জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে চিরকাল। তাই ঈমানকে ইসলামের মূল খুঁটি বললেও অত্যুক্তি হবে না।
★ঈমানের আভিধানিক অর্থঃ
ঈমান অর্থ নিশ্চিন্ত বিশ্বাস, যা ভীতি ও সন্দেহের বিপরীত’। সন্তান যেমন পিতা-মাতার কোলে নিশ্চিন্ত হয়, মুমিন তেমনি আল্লাহর উপরে ভরসা করে নিশ্চিন্ত হয়।
ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ দৃঢ় বিশ্বাস। ইসলাম ধর্মে ঈমানের অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। ঈমানের ছয়টি স্তম্ভ হচ্ছেঃ
একক ইলাহ হিসেবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা।
আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস করা।
সমস্ত আসমানী কিতাব সমূহতে বিশ্বাস।
সকল নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস।
তাক্বদীর বা ভাগ্যের ভালো মন্দের প্রতি বিশ্বাস।
আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস।
★ঈমানের পারিভাষিক অর্থঃ
‘হৃদয়ে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের নাম হ’ল ঈমান। যা আনুগত্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং গোনাহে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। ঈমান হ’ল মূল এবং আমল হ’ল শাখা’।
আল-কোরআনের সূরা-বাকারা এর দুই হতে চার আয়াতে ঈমান সম্পর্কে এই বিষয় গুলি উল্লেখ করা হয়েছে।
ঈমান হচ্ছে স্বীকারোক্তি এবং আমলের নাম। অর্থাৎ অন্তর ও জবানের স্বীকারোক্তি এবং অন্তর, জবান ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মকে ঈমান বলা হয়। আনুগত্যের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং পাপ কাজের মাধ্যমে তা কমে যায়। ঈমানের মধ্যে মু’মিনগণ পরস্পর সমান নয়; বরং তাদের একজন অপরজনের চেয়ে কম বা বেশী মর্যাদার অধিকারী।
স্বীকারোক্তি এবং আমল- এ দু’টির সমষ্টির নাম ঈমান, এর কোন দলীল আছে কি?
এ ব্যাপারে যথেষ্ট দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمْ الإيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ
‘‘কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তোমাদের অন্তরে ঈমানের মুহাববত সৃষ্টি এবং তা তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন’’ (সূরা হুজরাতঃ ৭) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ
‘‘তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন কর’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৫৮) এটিই হচ্ছে (لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং (محمد رسول الله– মুহাম্মাদুর্ রাসূলুল্লাহ) এ কথার সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ। এ দু’টি বিষয়ের সাক্ষ্য দেয়া ব্যতীত কোন বান্দাই ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। বিশ্বাসের দিক থেকে উপরোক্ত দু’টি বিষয়ের সাক্ষ্য দেয়া অন্তরের কাজ এবং উচ্চারণের দিক থেকে বিচার করলে এ দু’টি জবানের কাজ। অন্তর এবং জবানের স্বীকারোক্তি ও আমল এক সাথে পাওয়া না গেলে ঈমান হবে মূল্যহীন। আমলের অপর নাম যে ঈমান সে দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ
‘‘আল্লাহ তোমাদের ঈমানকে নষ্ট করবেন না’’। (সূরা বাকারাঃ ১৪৩) অর্থাৎ কিবলা পরিবর্তনের পূর্বে বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে তোমাদের আদায়কৃত নামাযকে নষ্ট করবেন না। আল্লাহ তা’আলা এখানে নামাযকে ঈমান বলে নামকরণ করেছেন। আর নামায হল অন্তর, জবান এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মের সমষ্টিগত নাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জেহাদ, লাইলাতুল কদরের এবাদত, রামাযানের রোজা, তারাবীর নামায এবং গণীমতের মালের এক পঞ্চগোশত দান করে দেয়া এবং অন্যান্য আমলকে ঈমান হিসাবে গণ্য করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ
أَيُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ إِيمَانٌ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ)
‘‘কোন্ আমলটি উত্তম? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করা।
তথ্য সূত্র: বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া
সানবিডি/ঢাকা/এসএস