২৯ বছর ধরে ভুয়া আইনজীবী পরিচালনা করলো হাইকোর্টের ১০ হাজার মামলা

প্রকাশ: ২০১৫-১১-২৪ ১৯:৫৫:১১


171320_1নিজের সনদ নেই। একই নামের অন্য একজনের সনদ ব্যবহার করে হাইকোর্টে ২৯ বছর ধরে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন এস এম শহিদ উল্ল্যাহ। ভুয়া পরিচয়পত্র নম্বর (আইডি নম্বর) ব্যবহার করে তিনি হাইকোর্টে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মামলা পরিচালনা করেছেন। বিষয়টি মূল সনদধারী মো. শহিদুল্ল্যাহ নিজেই তুলে ধরেছেন । তাঁর লিখিত আবেদনের পর তদন্ত হওয়ার পর এ তথ্য পেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।

এ জন্য ভুয়া আইনজীবী এস এম শহিদ উল্ল্যাহকে আপাতত অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘এস এম শহিদ উল্ল্যাহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শহিদুল্ল্যাহর আইডি ব্যবহার করে ভুয়া আইনজীবী হিসেবে হাইকোর্টে মামলা পরিচালনা করে আসছেন। তদন্তের পর প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে হাইকোর্টে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁকে ধরিয়ে দিতে নোটিশ জারি করা হয়েছে।’

গত ২২ নভেম্বর ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়, এস এম শহিদুল্ল্যাহ আদৌ আইনজীবী নন। অথচ আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিগত ২৯ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্ট বারে অবস্থান করে প্রতারণামূলকভাবে আইন পেশা পরিচালনা করে আসছেন।

নোটিশে আরো বলা হয়, তিনি তাঁর সনদপত্র অফিসে উপস্থাপন করবে মর্মে অঙ্গীকারনামা প্রদান করলেও কোনো সনদ উপস্থাপন করতে পারেননি। তাঁকে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। যদি কেউ তাঁর সন্ধান পান, তবে তাঁকে ওই কার্যালয়ে সোপর্দ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। ওই ব্যক্তির সঙ্গে আইনগত বিষয়সহ যেকোনো লেনদেন থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

যেভাবে ধরা পড়লেন শহিদ উল্ল্যাহ

২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সদস্য পদে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে প্রার্থী হন পারভীন আক্তার। এ সময় পারভীন আক্তার নিজের প্রার্থী ফরমে সমর্থক হিসেবে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য এস এম শহিদ উল্ল্যাহর কাছে যান। তখন শহিদ উল্ল্যাহ পারভীনকে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করেন। বিশেষ অনুরোধের পর ওই নির্বাচনে প্রার্থী পারভীনের ফরমে স্বাক্ষর প্রদান করেন। কিন্তু স্বাক্ষর দেওয়ার সময় সমর্থকের আইনজীবী হিসেবে তাঁর আইডি নম্বর উল্লেখ করতে হয়। এ সময় তিনি আইডি নম্বর দিতে অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে আইডি নম্বর দেওয়ার পর তা সঠিক নয় মর্মে প্রমাণিত হওয়ায় পারভীনের ফরম বাতিল হয়ে যায়। পরে পারভীন মূল আইডি নম্বরধারী মো. শহিদ উল্ল্যাহকে খুঁজে বের করেন। মূল আইডির নম্বরধারী মো. শহিদ উল্ল্যাহ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কাছে লিখিতভাবে আবেদন করলে তদন্তে নামে আইনজীবী সমিতি।

একপর্যায়ে ভুয়া সনদধারী শহিদ উল্ল্যাহকে সনদ জমা দেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি নোটিশ পাওয়ার পর কোনো সনদ জমা দিতে পারেননি। বরং নোটিশের জবাবে ভুয়া আইনজীবী শহিদ উল্ল্যাহ লিখিতভাবে নিজের দোষ স্বীকার করে বলেন, ‘আমি এই মর্মে স্বীকার করছি, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক খুলনা বারের জন্য সনদ লাভ করি এবং আইন পেশা শুরু করি। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৭ সাল থেকে হাইকোর্টে কাজ করছি। আমি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভবনে এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করছি। আমার সদস্যপদ না থাকায় মামলা পরিচালনার সময় অন্যের আইডি অর্থাৎ মো. শহিদ উল্ল্যাহ সাহেবের আইডি নং ২১৯৭ ব্যবহার করি।’

এ বিষয়ে ভুয়া আইডি ব্যবহার করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এস এম শহিদ উল্ল্যাহ মোবাইল ফোন ধরেননি।

ভুয়া আইনজীবী হিসেবে শহিদ উল্ল্যাহর অর্জন 

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভুয়া আইডি ব্যবহারকারী এস এম শহিদ উল্ল্যাহ গত ২৯ বছরে প্রায় ১০ হাজার মামলা পরিচালনা করেছেন। এ সময়ে তিনি কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। বর্তমানে রামপুরা বনশ্রীর জি ব্লকে তাঁর একটি বাড়ি আছে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরে আরো একটি বাড়ি আছে। ঢাকাতে প্রায় ৪১ কাঠা জায়গার মালিক তিনি। এ ছাড়া তাঁর চারটি প্রাইভেট গাড়ি আছে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভীন আক্তার বলেন, ‘গত ২৯ বছরে শত কোটি টাকার মালিক ও ঢাকায় দুটি বাড়ি ও ৪১ কাঠা জায়গার মালিক হয়েছেন এস এম শহিদ উল্ল্যাহ। আদালতে তিনি সব সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী পরিচয় দিয়ে মামলা পরিচালনা করার সময় অগ্রাধিকার নিতেন।’ হাইকোর্টে অনেক সময় মামলার শুনানির সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

ভুয়া সনদে মামলা পরিচালনা করায় এসব মামলার কার্যকারিতা গ্রহণযোগ্য কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ভুয়া আইনজীবী যেসব মামলা করেছেন মামলার রায় ও বা আদেশ কোনো সমস্যা হবে না। তবে ভুয়া আইনজীবী হিসেবে দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় তিনি অপরাধ করেছেন। সেজন্য তাঁর শাস্তি হতে পারে।’

সূত্র: এনটিভি অনলাইন।

সানবিডি/ঢাকা/রাআ