২০ বছর ধরে ঝুলছে টেক্সটাইল পল্লী

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২০-০১-০২ ০৯:১১:৫৭


প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের ২০ বছর পরও গড়ে তোলা হয়নি খুলনা টেক্সটাইল পল্লী। ১৯৯৯ সালে এই টেক্সটাইল পল্লীটি গড়ে তোলার অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকায় এখন এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। এ পরিস্থিতিতে টেক্সটাইল পল্লীর জন্য নির্ধারিত জায়গায় ফুডকোর্ট-রিসোর্টসহ নানা ব্যাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করতে চাইছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি)। এজন্য সম্প্রতি বিটিএমসি’র পক্ষ থেকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৩১ সালে খুলনা নগরীর ছোট বয়রা এলাকায় ২৫ দশমিক ৬৩ একর জমিতে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র কটন মিলের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম হয় খুলনা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মিলটিকে জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন সরকার মিলটি লে-অফ ঘোষণা করে। এরপর কয়েক দফা মিলটি পুনরায় চালুর আশ্বাস দেওয়া হলেও তা আর চালু হয়নি। পরে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার খুলনাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে টেক্সটাইল মিলের জমিতে টেক্সটাইল পল্লী স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।

এরই ধারাবাহিকতায় মিলের প্রায় ২৬ একর জমির মধ্যে ১৮ দশমিক শূন্য ২ একরকে ৩৬টি শিল্প প্লটে ভাগ করে টেক্সটাইল পল্লী স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত ৪ দশমিক ৬১ একর জমি রাস্তা, মসজিদ, বিদ্যালয়, কবরস্থান, পার্ক ও ইউটিলিটি সার্ভিসের জন্য রাখা হয়। এছাড়া মিলের অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে সাড়ে ৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়। তখন শিল্প প্লট স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করেও কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালের নভেম্বরে টেক্সটাইল পল্লীর ২৪টি প্লট বরাদ্দের জন্য দরপত্র আহ্বান করে বিটিএমসি। এজন্য নির্ধারিত সময় ছিল পরের বছর ৯ জানুয়ারি। সেই সময়ের মধ্যে সাতটি দরপত্র বিক্রি হয়। কিন্তু সেগুলোর একটিও জমা পড়েনি। পরে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ওই ২৪টি প্লট ‘যেখানে যে অবস্থায় আছে’ ভিত্তিতে বিক্রির জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র কেনার শেষ দিন ছিল একই বছরের ২২ অক্টোবর। কিন্তু এবার আর কোনো দরপত্রই বিক্রি হয়নি। আর সে কারণে টেক্সটাইল পল্লী স্থাপনের প্রক্রিয়া আবারও ঝুলে যায়।

এদিকে খুলনা টেক্সটাইল পল্লীর জন্য নির্ধারিত জায়গায় অন্য ব্যাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য বিটিএমসি উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে খুলনা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের এক কর্মকর্তা জানান, ৩/৪ মাস আগে টেক্সটাইল পল্লীর জন্য নির্ধারিত জায়গায় ফুডকোর্ট-রিসোর্টসহ ব্যাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য বিটিএমসি’র পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আর বিটিএমসি’র এই প্রস্তাবে সায় দিয়ে সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি পিপিপি’র আওতায় টেক্সটাইল মিল এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের সুপারিশ করেছে। বিটিএমসি’র প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, টেক্সটাইল পল্লী স্থাপনে উদ্যোক্তাদের সাড়া না পাওয়ায় টেক্সটাইল মিলের সম্পত্তিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ্জামান বলেন, ‘কোনো স্থানে শিল্প কলকারখানা গড়ে তুলতে গেলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন যোগাযোগ ও বিদ্যুতের সহজপ্রাপ্যতা। কিন্তু খুলনার প্রস্তাবিত টেক্সটাইল পল্লীতে এই দুটিরই সংকট রয়েছে। নগরীর যে স্থানে প্রকল্পটির অবস্থান, সেখানে যাতায়াতের প্রশস্ত কোনো সড়ক নেই। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়াটাও অনিশ্চিত। এজন্য বারবার শিল্প প্লট বিক্রির টেন্ডার আহ্বান করেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।’

খুলনা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফাহাদ বিন আরাফাত বলেন, ‘এখানে যারা প্লট নেবে, তাদের টেক্সটাইল বিষয়ে ব্যবসা করতে হবে। অন্য কোনো ব্যবসা এখানে করা যাবে না। এ কারণে অনেকে এখানে প্লট নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। আমরা দুই বার টেন্ডার আহ্বান করেছিলাম। কিন্তু কেউ নিতে চাইনি।’

মিলের দায়িত্বে থাকা (ইনচার্জ) কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই জায়গা নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই।’ দেশ রুপান্তর