গোয়েন্দা নজরদারিতে সাকার দুই পুত্র

আপডেট: ২০১৫-১১-২৫ ১০:৩০:৩২


salauddin-kader-chowdhori-sonযুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর দুই ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী ও হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে যাতে তারা নাশকতামূলক কিছু করতে না পারে সে জন্য সরকারের একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা তাদের ওপর নজরদারি করছে। তাদের বেড়ে ওঠা এবং বিদেশ সফরসংক্রান্ত তথ্য সংস্থাটির হাতে পৌঁছেছে। কোন কোন দেশের নাগরিকের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র আছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেশে চলাফেরার ক্ষেত্রে, কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে তাদের ওপরও চলছে নজরদারি। সংস্থাটি অন্যসব ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের ওপর প্রযুক্তিগত নজরদারিও শুরু করেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের পরিবারগুলো বিচারকে ব্যাহত করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। রায়ের আগে ও পরে তারা বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করেছে। কাজেই নজরদারির মাধ্যমে বিশৃংখলা এবং ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে আইনশৃংখলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া আছে। তারা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে।

জানা গেছে, গোয়েন্দা নজরদারির অংশ হিসেবে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে সাকার দুই ছেলের বিষয়ে তথ্য পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, সাকার দুই ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী ও হুম্মাম কাদের চৌধুরী দেশের বাইরে গিয়ে যাতে ষড়যন্ত্রমূলক প্রপাগান্ডা চালাতে না পারে সে জন্য নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এদের দুজনের সঙ্গে দেশে এবং বিদেশের সব যোগাযোগের মাধ্যমগুলো নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

জানা গেছে, দুই ছেলের ব্যবহার করা ইন্টারনেট প্রটোকলের তথ্য সাইবার নিরাপত্তা দল পর্যবেক্ষণ করছে। তারা যে ধরনের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন সে পদ্ধতিগুলো ইতিমধ্যে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কোথায় যাচ্ছেন কী করছেন, রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সব বিষয়ই কঠোরভাবে মনিটরিং করছেন গোয়েন্দারা। সূত্র আরও জানায়, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানোর আগে সাকার পরিবার বিচার বাধাগ্রস্ত করতে নানাভাবে চেষ্টা করেছে। দেশে-বিদেশে বসে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করা হয়। দণ্ডিত সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার আগেই এর কিছু অংশ ফাঁস করা হয়। রায় প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই এটা করা হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের প্রপাগান্ডাও চালানো হয়েছিল। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। সব ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে সরকার বিচার নিশ্চিত করে। সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের দায়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে সাকা চৌধুরী গ্রেফতারের পর থেকেই নানা রকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আইনগত সব প্রক্রিয়া শেষে গত শনিবার শীর্ষ এ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হয়। এরপর থেকে তার দুই ছেলের ওপর কঠোর নজরদারির নির্দেশ আসে সরকারের উচ্চ মহল থেকে। নির্দেশনার পরই গোয়েন্দা সংস্থাটি তাদের ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ শুরু করে। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম বলেন, রায়ের কপি ফাঁসের ঘটনায় সাকার পরিবারের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। রায় কার্যকর হওয়ার পর প্রতিহিংসামূলকভাবে সাকার পরিবার কোনো ধরনের অপরাধের চেষ্টা করলে বা অপরাধে জড়ালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, কেউ যদি নাশকতার চেষ্টা করেন তাহলে গোয়েন্দারা বসে থাকবেন না। রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সরকারি জানমাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র নানাভাবেই বিশৃংখলার চেষ্টা করতে পারে। এ ধরনের গোয়েন্দা তথ্যের পর আমরা সতর্ক আছি।