একটি টিউবওয়েল বসাতে ৩ লাখ টাকার প্রস্তাব

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০১-১৪ ১২:০৯:০৪


আন্তর্জাতিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পে একটি টিউবওয়েল বসাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকা। এভাবে দুটি টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য ৬ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পরামর্শক খাতে ব্যয় হবে ১৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা।

এছাড়া প্রস্তাবিত বিভিন্ন খাতের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। এক্ষেত্রে কিছু খাতে ব্যয় বাদ দেয়া ও কোনো ক্ষেত্রে যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণের সুপারিশ করা হচ্ছে। আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠেয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এসব বিষয় তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, ঢাকার ভেতর হওয়ায় কিছুটা বেশি খরচ হয়তো হতে পারে।

কিন্তু একটি টিউবওয়েল বসাতে ৩ লাখ টাকা লাগবে কি না, সেটি আমরা পিইসি সভায় চুলচেরা বিশ্লেষণ করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশীয় বিশেষজ্ঞ তৈরির জন্য প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই পরামর্শকসহ বিদেশ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হতেও পারে। আমরা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।

সূত্র জানায়, ‘আন্তর্জাতিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর খিলক্ষেতে দেশের সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র হাইড্রোলজিক্যাল ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হবে। যেখানে পানিবিজ্ঞান সম্পর্কিত শিক্ষা, জ্ঞান, পরামর্শ ও নির্দেশিকার মাধ্যমে পানি ও

পানিবিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণার সুবিশাল পরিসর সৃষ্টি করা হবে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভয় অনুমোদন পেলে চলতি অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ৩৬ জনমাস পরামর্শক বাবদ ১৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। পরামর্শকের টিওআর, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) উল্লেখসহ এ খাতে প্রস্তাবিত ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা যেতে পারে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ১৫ কোটি টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে। সরকারি অর্থায়নে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তাবিত ব্যয় বাদ দেয়া যেতে পারে। সে সঙ্গে প্রকল্পে স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পানি সরবরাহ বাবদ ৫০ লাখ টাকা এবং দুটি নলকূপ স্থাপন বাবদ ৬ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তিসহ এর বিস্তারিত ডিপিপিতে উল্লেখ করতে হবে।

প্রকল্পে ১৭টি বৈদ্যুতিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য ৪২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর যৌক্তিকতাসহ এ খাতে ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সভায় ব্যাখ্যা করতে পারে। প্রকল্পে দুটি সেতু নির্মাণে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা, বাউন্ডারি ওয়াল ও গেট নির্মাণে ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা বাবদ ৩ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। সেতুর নকশা ও বিস্তারিত বিবরণ ডিপিপিতে উল্লেখসহ এসব খাতে ব্যয় যৌক্তিকভাবে হ্রাস করা যেতে পারে।

কার্যপত্রে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পে এসটিপি বাবদ ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ইটিপি বাবদ ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ডবলু টিপি বাবদ সাড়ে ৪ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এসবের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, বিস্তারিত বিবরণ ডিপিপিতে উল্লেখ করে এ খাতে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে হ্রাস করা যেতে পারে। তাছাড়া একান্তই প্রয়োজন হলে পৃথকভাবে এগুলো না দেখিয়ে সিইটিপি ডিজাইন করে এর বর্ণনা ও ব্যয় প্রাক্কলন অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

আরও যেসব ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ২৮১টি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম বাবদ ৩৪ কোটি ৯৯ লাখ, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ ক্রয় বাবদ ৫০ লাখ, অফিস সরঞ্জাম বাবদ ৬ লাখ ৩৬ হাজার, আসবাবপত্র কেনার জন্য ১০ কোটি ৭ লাখ এবং অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামের জন্য ১ কোটি টাকা যৌক্তিকভাবে হ্রাসের কথা বলা হয়েছে।

প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলেছে, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেডিও-টিভি ভাষণে ঘোষণা করেন, প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ উন্নয়নের জন্য বৈজ্ঞানিক তৎপরতা চালাতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের বনসম্পদ, ফসলের চাষ, গোসম্পদ, হাঁস-মুরগির চাষ, দুগ্ধ খামার, সর্বোপরি মৎস্যচাষের ব্যবস্থা করতে হবে।

পানিসম্পদ সম্পর্কে গবেষণা ও নৌ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য অবিলম্বে একটি নৌ-গবেষণা ইন্সটিটিউট স্থাপন করা প্রয়োজন। তিনি আরও ঘোষণা দেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণকে অবশ্যই প্রথম কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে একটা সুসংহত ও সুষ্ঠু বন্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা আশু প্রয়োজন। এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে একটি নৌ-গবেষণা ইন্সটিটিউট স্থাপনের প্রত্যয়ে এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে।
সূত্র: যুগান্তর
সানবিডি/ঢাকা/এসএস