নতুন ভ্যাট আইন
জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে আমদানি কমেছে স্ক্র্যাপ জাহাজের
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০১-১৬ ০৯:১১:০১
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পাসের আগে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে জাহাজভাঙা শিল্প খাত । কিন্তু বাজেট পাসের পর ইয়ার্ডগুলোয় উল্টো চিত্র দেখা গেছে। গত বছরের প্রথমার্ধে রেকর্ড ১৫০টি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করা হলেও বাজেট ঘোষণার পর শেষ ছয় মাসে তা নেমে দাঁড়ায় মাত্র ৭৯টিতে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে নতুন ৫ শতাংশ করারোপ ও নতুন ভ্যাট আইনের কারণে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম কাস্টমস, পরিবেশ অধিদপ্তর ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দেয়া স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির ছাড়পত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিভিন্ন শিপইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করা হয় ৭৯টি। অন্যদিকে ২০১৮ সালের শেষ ছয় মাসে ১২২টি এবং ২০১৭ সালে আমদানি করা হয় ১০০টি স্ক্র্যাপ জাহাজ।
জানা গেছে, বিদায়ী ২০১৯ সালে ২৩ লাখ ৬১ হাজার টনের ২২৯টি জাহাজ আমদানি করা হয়, সেখানে ২০১৮ সালে ৬৮টি প্রতিষ্ঠান আমদানি করে ২৫ লাখ ৭৩ হাজার টনের ২১৫টি স্ক্র্যাপ জাহাজ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে জাহাজ আমদানি ১৪টি বাড়লেও ওজন কমেছে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টন। ২০১৭ সালে ৬২টি প্রতিষ্ঠান ২১ লাখ ৯০ হাজার টনের মোট ২১৪টি, ২০১৬ সালে ৬৫টি প্রতিষ্ঠান ৩৩ লাখ ১০ হাজার টনের ২৫০টি, ২০১৫ সালে ৬৪টি প্রতিষ্ঠান ২৮ লাখ ৮৪ হাজার টনের ২২১টি ও ২০১৪ সালে ২১২টি জাহাজ আমদানি করে।
চলতি বাজেট পাসের পর জাহাজ আমদানি কমে যাওয়ার কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা ২০১৮-১৯ অর্থবছর বা তার আগের বছরগুলোতেও আমদানি করা স্ক্র্যাপ জাহাজের প্রতি টনের ট্যারিফ মূল্যের ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩০০ টাকা মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ করেছিলেন। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে স্ক্র্যাপ জাহাজের ওপর নতুন করে আরো ৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়। নতুন করে এ কর আরোপের ফলে ৩০০ টাকার স্থলে এখন ভ্যাট দিতে হচ্ছে ২ হাজার টাকা। এ শিল্পের নীতিমালা অনুযায়ী লোহার বাজারমূল্যের ওপর ৫ শতাংশ যে কর আরোপ করা হয়েছে, তা অযৌক্তিক বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে জাহাজভাঙা শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিএসবিআরএর এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থবছর থেকে ভ্যাট আইনের পরিবর্তনের ফলে এ খাতে অতিরিক্ত কর আরোপ হয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ী কিংবা আমদানিকারকরা স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে আগের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আশা করছি, সরকার দ্রুত এ খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে নতুন কর আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০১৬ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ৩৩ লাখ টনের বেশি ওজনের জাহাজ আমদানি করা হয়। তখন এ খাতে নতুন করে সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে ২০১৭-তে জাহাজ আমদানি ফের কমে গেলেও পরবর্তী বছর আবার এ খাতের নতুন সম্ভাবনা দেখা দেয়। মূলত ২০১৯ সালে নতুন ভ্যাট আইন চালু হওয়া এবং নতুন করে ৫ শতাংশ কর আরোপ এ শিল্পকে নতুন করে সংকটে ফেলেছে। নতুন করে কর আরোপ হতে পারে এমন আশঙ্কায় বাজেট পাসের আগে ব্যবসায়ীরা জাহাজ আমদানি বাড়িয়ে দেন। কিন্তু বাজেট পাসের পর অনেকে শুধু ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য জাহাজ আমদানি করেছেন।
মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক মো. সরোয়ার বলেন, চলতি বাজেটে অতিরিক্ত পরিমাণে কর বাড়ানো হয়েছে। প্রতি টনে কর ১ হাজার ৭০০ টাকা বাড়িয়ে প্রায় ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে, যা এ ব্যবসা ধরে রাখার ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমতে থাকলে বাজারে সংকট তৈরি হবে। চাহিদার তুলনায় জোগান কমে গেলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা কর্তৃপক্ষের সঠিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। সূত্র-বণিক বার্তা
সানিবিডি/এনজে