শুল্ক সমস্যায় এগোচ্ছে না বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের খুচরা বিক্রি
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০১-১৯ ১০:৪৯:২৭
বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র বা রিটেইল শপ ব্র্যান্ড ওয়ালমার্ট। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্র আছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও আছে তাদের খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র। এদিকে বাংলাদেশ থেকে বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের পোশাক কিনলেও ব্র্যান্ডটির কোনো খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র নেই এখানে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়ালমার্টের বাংলাদেশে খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র চালুর বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে একাধিকবার। আনুষ্ঠানিকভাবে তারা সরকারি দপ্তর পর্যায়ে সম্ভাব্যতাও যাচাই করেছে। কিন্তু পরে ওই পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন করেনি। সম্প্রতি বেশকিছু ব্র্যান্ড ও বিদেশী ক্রেতা বাংলাদেশে স্টোর চালুর পাশাপাশি সম্প্রসারণ পরিকল্পনাও শুরু করেছে। কিন্তু শুল্ক সমস্যায় এসব পরিকল্পনা আর এগোচ্ছে না।
১১ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সেখানে বলা হয়েছে, সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে অনেক বিদেশী স্বনামধন্য ক্রেতা বাংলাদেশে তাদের পণ্যের শোরুম বা আউটলেট স্থাপন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু যুগোপযোগী নীতি সহায়তার অভাবে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
চিঠিতে বিজিএমইএ আরো বলেছে, সহায়ক নীতি সুবিধা না থাকার কারণে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দেশের জনগণ যৌক্তিক মূল্যে বিদেশী ব্র্যান্ড আইটেম ক্রয় করতে পারছে না। সমপ্রতিযোগী না থাকায় দেশীয় ব্র্যান্ড আইটেমগুলোর মান উন্নত হচ্ছে না এবং ক্রেতাসাধারণ অধিক মূল্য দিয়ে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশে প্রচলিত নীতিমালার মাধ্যমে রফতানিমুখী বন্ডের শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক পূর্ববর্তী আর্থিক বছরে রফতানীকৃত পণ্যের ২০ শতাংশ পর্যন্ত অনুমোদনসাপেক্ষে স্থানীয় বাজারে শুল্ক প্রদানপূর্বক বিক্রয় করার অনুমতি রয়েছে।
এ নীতির আওতায় রফতানিকারকদের থেকে আংশিক পণ্য গ্রহণ করে নিজেদের স্থাপিত শোরুম বা আউটলেটের মাধ্যমে শুল্কমুক্তভাবে বিক্রি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিদেশী ক্রেতারা। এ প্রেক্ষাপটে বিদেশী ক্রেতার দেয়া ঋণপত্রের বিপরীতে আংশিক পণ্য স্থানীয় শোরুম বা আউটলেটে শুল্কমুক্তভাবে সরবরাহ এবং এ সরবরাহকে রফতানি হিসেবে বিবেচনার জন্য একটি নীতি প্রণয়ন করা অপরিহার্য বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
সূত্রমতে, প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার আরো অনেক দেশ বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদেশী ক্রেতাদের এ ধরনের শোরুম বা আউটলেট স্থাপন করার সুযোগ দিয়েছে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেছেন, দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রফতানি প্রবৃদ্ধির স্বার্থে ক্রেতার স্থানীয় শোরুম বা আউটলেটে রফতানি পণ্যের আংশিক (২০%) শুল্কমুক্তভাবে সরবরাহ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা বা আদেশ জারির জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে নিজস্ব ব্র্যান্ড গড়ে তুলতে দেখা গেছে অনেক প্রতিষ্ঠানকে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে ইপিলিয়ন গ্রুপের সেইলর, ইভিন্স গ্রুপের নোয়া, ব্যাবিলন গ্রুপের ট্রেন্ডজ এবং স্নোটেক্স আউটারওয়্যারের ব্র্যান্ড সারা। এছাড়া বিদেশী ক্রেতা যারা বাংলাদেশে বিক্রয়কেন্দ্র চালু করেছে, এমন ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে পুমা, ডিক্যাথলন স্পোর্টস। ডিক্যাথলন স্পোর্টস ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে রিটেইল স্টোর চালু করেছে।
স্থানীয়ভাবে পোশাকের ব্র্যান্ড তৈরিতে মনোনিবেশ করা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বিদেশী ক্রেতাদের স্থাপিত শোরুম বা বিক্রয়কেন্দ্রে স্থানীয়ভাবে তৈরি পণ্য শুল্কমুক্তভাবে বিক্রির সুবিধা দিলে বড় উৎপাদনক্ষেত্র আছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা না হলেও ক্ষুদ্র উৎপাদনক্ষেত্রের উদ্যোক্তাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
সাম্প্রতিককালে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড সারার কর্ণধার স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেডের এমডি এসএম খালেদ বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি পোশাক বিদেশী ক্রেতাদের আউটলেটে শুল্কমুক্ত বিক্রির সুবিধা বড় উৎপাদনক্ষেত্র আছে এমন ব্র্যান্ডগুলোর ওপর কোনো প্রভাব না ফেললেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ছোট উৎপাদনক্ষেত্র আছে এমন ব্র্যান্ডগুলোর ওপর।সূত্র-বণিক বার্তা
সানবিডি/এনজে