জীবন বীমার ব্যবস্থাপনা ব্যয়সীমার গেজেট প্রকাশ
নতুন বীমা কোম্পানি চাপে থাকলেও ছাড় পাচ্ছে পুরনোরা
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২০-০১-১৯ ২০:০২:১০
ব্যবস্থাপনা ব্যয়সীমার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর। গেজেটে নতুন কোম্পানিগুলোকে চাপে রাখলেও ছাড় দেওয়া হয়েছে পুরনো কোম্পানিগুলোকে। গত ৯ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এই গেজেট প্রকাশ করেছে।
ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের নতুন এই বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বীমাকারীর তদকর্তৃক বাংলাদেশে লেনদেনকৃত লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায় কোন পঞ্জিকা বছরে ব্যবসায় সংগ্রহের কমিশন খরচ ও পারিশ্রমিকসহ ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সবোর্চ্চ সীমা হবে তফসিলে বর্ণিত বিভিন্ন পলিসির প্রিমিয়ামের ওপর নিরূপিত পরিমাণের সমষ্টি।
তবে শর্ত থাকে যে, তফসিলের ক্রমিক নং ৪ এ উল্লেখিত পলিসিসমূহের মধ্যে যে পলিসির মেয়াদকাল অনধিক ১১ বছর সেই পলিসির ক্ষেত্রে প্রথম বছর প্রিমিয়ামের ওপর নিরূপিত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা হবে পলিসির মেয়াদকালের সাড়ে ৭ গুণ।
লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী বিধিমালা, ২০২০ নামে নতুন এই বিধিমালার তফসিলের ক্রমিক নং ৪ অনুসারে, ব্যবসা শুরুর প্রথম ৫ বছর বীমা কোম্পানিগুলো প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের ৯৫ শতাংশ এবং নবায়ন প্রিমিয়ামের ২৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে দশম বছরে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ৯৪ শতাংশ ও নবায়নের ২২ শতাংশ খরচ করতে পারবে।
এর আগে ১৯৫৮’র বিধিতে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের এই সীমা ছিল- ব্যবসা শুরুর প্রথম থেকে তৃতীয় বছর প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ৯৭.৫ শতাংশ ও নবায়ন প্রিমিয়ামের ২২.৫ শতাংশ এবং চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ বছরে প্রথম বর্ষে ৯৬.৫ শতাংশ ও নবায়ন প্রিমিয়ামের ২০ শতাংশ। ৭ম থেকে ১০ম বছরে প্রথম বর্ষে ৯৫ শতাংশ ও নবায়ন প্রিমিয়ামের ২০ শতাংশ।
সে হিসাবে দশ বছরের কম বয়সী লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোকে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় প্রথম পাঁচ বছর ২.৫ শতাংশ এবং ষষ্ঠ থেকে দশম বছর ১ শতাংশ কম খরচ করতে হবে। তবে নবায়ন প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় প্রথম পাঁচ বছর ২.৫ শতাংশ এবং ষষ্ঠ থেকে দশম বছর ২ শতাংশ বেশি খরচ করতে পারবে।
অন্যদিকে নতুন প্রবিধান অনুসারে, দশ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সী বীমা কোম্পানি প্রথম বর্ষ মোট প্রিমিয়াম আয় একশ’ কোটি টাকা বা তার কম হলে ৯৩ শতাংশ, একশ’ কোটি টাকার বেশি কিন্তু অনুর্ধ্ব পাঁচশ’ কোটি টাকা হলে ৯২ শতাংশ এবং পাঁচশ’ কোটি টাকার বেশি হলে ৯১ শতাংশ ব্যবস্থাপনা ব্যয় করতে পারবে।
তবে নবায়ন প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে- দশ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সী বীমা কোম্পানিগুলো যেকোন পরিমাণ নবায়ন প্রিমিয়ামের জন্য ২০১৯ সালে ২০ শতাংশ, ২০২০ সালে ১৯ শতাংশ, ২০২১ সালে ১৮ শতাংশ, ২০২২ সালে ১৬ শতাংশ এবং ২০২৩ সাল এবং পরবর্তী সময়ে ১৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে।
এর আগে ১৯৫৮’র বিধিতে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের এই সীমা ছিল- ব্যবসা শুরুর ১০ বছর হলে গ্রাহকের জমা করা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম থেকে ব্যবস্থাপনা ব্যয় করতে পারবে ৯০ শতাংশ এবং পরের বছরগুলোতে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ২ কোটি টাকার নিচে হলে ১৮ শতাংশ ও ১০ কোটি টাকার ওপরে হলে ১৫ শতাংশ।
অর্থাৎ নতুন বিধিমালায় দশ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সী লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। আর নবায়ন প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা খাতে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি খরচের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।
নতুন এই বিধিমালার তফসিলের ক্রমিক নং ১ অনুসারে, অ্যানুয়িটি পলিসির ক্ষেত্রে একক প্রিমিয়াম পদ্ধতিতে প্রিমিয়াম আদায় করা হলে প্রথম বছরে আদায়কৃত প্রিমিয়ামের ৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। আর কিস্তিতে প্রিমিয়াম আদায় করা হলে প্রথম বছরে আদায়কৃত প্রিমিয়ামের ৫ শতাংশ এবং নবায়ন প্রিমিয়ামের ৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে।
তফসিলের ক্রমিক নং ১ এর উপ-দফা অ এবং আ উভয় ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট বছরে পরিশোধিত মোট অ্যানুয়িটির ১ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। আর একক প্রিমিয়াম পলিসির ক্ষেত্রে আদায়কৃত প্রিমিয়ামের ৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো।
এ ছাড়াও পেইডআপ পলিসির ক্ষেত্রে মোট বীমা অংকের বাৎসরিক গড়ের (পুনর্বীমা বাদে) ০.০৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে এবং গোষ্ঠী বীমা পলিসির ক্ষেত্রে বছরে পরিশোধিত প্রিমিয়ামের ১৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো।