ভুট্টা চাষে সফলতার স্বপ্ন কৃষকদের

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০১-২১ ১৫:৪৮:২৩


সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে যমুনা নদীবিধৌত উপজেলার কৃষক এখন ভুট্টা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গতবার ভুট্টা চাষে লাভের মুখ দেখায় এবার তাঁরা ব্যাপকভাবে ভুট্টাচাষ শুরু করেছেন।

ভাঙন জনপদের এই উপজেলায় প্রতিবছর হাজার হাজার আবাদি  জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। কৃষক হয়ে পড়েন দিশেহারা। সর্বস্ব খুইয়ে এক সময়ের জোতদার হয়ে পড়েন  দিনমজুর। মহাজনের পাওনা পরিশোধে বিক্রি করতে হয় হালের বলদ। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে পাল্টে যাচ্ছে কৃষকের জীবন-জীবিকা ও চাষাবাদের ধরন।

নদী শাসন করে এর উর্বর পলিমাটিতে চলছে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদ। উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিশাল চরাঞ্চলসহ বিড়া অঞ্চলে ভুট্টাকে লক্ষ্য করে চাষাবাদে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন কাজিপুর উপজেলার কৃষি অফিস। কৃষকদের ভুট্টা চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করতে গতবছর কৃষি অফিস একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ফলে এবার গতবারের চেয়ে চার শ হেক্টর জমি বেড়ে সাত হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার শ থেকে সাড়ে চার শ মণ।

লক্ষ্যে পৌঁছাতে এরইমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় বিভিন্ন প্রকল্প, পুষ্টি প্রকল্প, বীজ ও বালাইনাশক সরবরাহকারী বিভিন্ন কম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস। বিড়া ও দুর্গম চরাঞ্চলে ভুট্টাচাষি কৃষক দল গঠন ও উৎপাদিত ভুট্টা সঠিক মূল্যে বিক্রয়ের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কৃষক কন্ট্রাক্টর তৈরি, নতুন জাতের ভূট্টার প্রদর্শনী প্লট স্থাপন, দলভুক্ত কৃষক ও কন্ট্রাক্টরদের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও সুষম সারের ব্যবহার সর্ম্পকে প্রশিক্ষণ প্রদান, বালাই দমনে কোয়ালিটি সমৃদ্ধ বালাইনাশক এবং হাইব্রিড জাতের বীজের সরবরাহ নিশ্চিতকরণের মতো কাজ করে যাচ্ছেন তারা। ফলে কৃষকদের মধ্যে ভুট্টা চাষের আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।

এবছর রাজস্ব খাতের মাধ্যমে ১২০টি এবং এনএটিপি’র মাধ্যমে ৩০ নতুন ও হাইব্রিড জাতের ভুট্টার মাঠ প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন এবং কৃষকের সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করছেন।

মানসম্মত বীজ সরবরাহ করতে বিভিন্ন হাইব্রিড বীজ আমদানিকারক কম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। কৃষকদের মাঝে  গণসচেতনতা সৃষ্টির  লক্ষ্যে আইসিএম/আইপিএম/আইএফএমএসএস-এর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ চলছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকরা এবার  কনক-৫১ এবং সিনজেনটার ৭৭২০ জাতের ভুট্টার বীজ রোপন করেছেন।  কৃষি অফিসের তথ্যমতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় পাঁচ হাজার ৫০০ কৃষক ও কন্ট্রাক্টর কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং  ৪৫টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়।

একই অর্থবছরের রবি মৌসুমে পাঁচ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আসে এবং গড় ফলন হয় ৮.৮৫ টন/হেক্টর। ভুট্টার মোট ফলন হয় ৪৮ হাজার ৪৮৭ মেট্রিকটন। ২০১৫-১৬ মৌসুমে ছয় হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়। সর্বশেষ গত বছর সাত হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছিল।

জানা যায়, কৃষকরা কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন ফিড উৎপাদনকারী কম্পানির কাছে শুকনো ভুট্টা গড়ে ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছে। আর ভুট্টার চাহিদাও রয়েছে বেশ। ফলে অন্যান্য ফসলের চেয়ে এ ফসলে লাভের পরিমাণ বেশি। উপজেলার নতুন মাইজবাড়ী চরের ভুট্টাচাষী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘গতবার কৃষি স্যারদের পরামর্শে ভুট্টার চাষ করে আর সব ফসলের চেয়ে বেশি টাকা পাইছি। এবারো ভুট্টার চাষ করছি।’

মনসুরনগরের চাষি মানিক মিয়া বলেন, ‘ফলন ভালো পাই। পাশাপাশি ভুট্টার কোন কিছুই ফেলে দিই না। এর পাতা গরুকে খাওয়াই, ডাটা বা কাণ্ড ও মোচা লাকড়ি হিসেবে বাজারে বিক্রি করি।’

কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘কাজিপুরের যমুনাবিধৌত মাটি ভুট্টাচাষের জন্য উপযোগী। ফলনও ভালো। নিবিড় প্রশিক্ষণে কৃষকরা ভুট্টাচাষে লাভবান হচ্ছে।সুত্র-কালের কন্ঠ

সানবিডি/এনজে