বৈশ্বিক বাজারে চড়া হচ্ছে ভোজ্যতেলের দাম

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০১-২২ ০৯:০৩:১৮


বিশ্বব্যপী ক্রমাগত পাম অয়েলের  চাহিদা বৃদ্ধির বিপরীতে কমছে উৎপাদন। কমছে পাম অয়েলের মজুদও। বাড়ছে সরবরাহ সংকট। ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে বৈশ্বিক মূল্যসূচক। এর প্রভাব পড়ছে অন্যান্য ভোজ্যতেলের বাজারেও। বিদায়ী বছরের শেষার্ধ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া হতে শুরু করেছে ভোজ্যতেলের দাম। গত তিন মাসেই দাম বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। এ সময় ধরন বুঝে টনপ্রতি ভোজ্যতেলের দাম ১০০ ডলার পর্যন্ত বেড়েছে।

মূলত এ সময়ে অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্যের ভোজ্যতেলের বাজারে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পাম অয়েলের দামে। তবে সে তুলনায় বাড়েনি অপেক্ষাকৃত মূল্যবান ভোজ্যতেলের দর। ফলে এ দুই ধরনের ভোজ্যতেলের মধ্যে বিদ্যমান দামের তফাত কমে এসেছে। মূল্যসূচক অনুযায়ী, উল্লিখিত সময়ে পাম অয়েল ও সরিষা তেলের মধ্যকার দামের পার্থক্য ৫০ শতাংশ কমে টনপ্রতি ৩৬০ ডলার থেকে ১৮০ ডলারে নেমেছে। একইভাবে পাম অয়েলের সঙ্গে সয়াবিন তেলের দামের পার্থক্য ৭৫ শতাংশ কমে টনপ্রতি ১৬০ ডলার থেকে ৪০ ডলারে নেমেছে।

পাম অয়েলের দাম বৃদ্ধি সামগ্রিকভাবে ভোজ্যতেলের বাজার চাঙ্গা করতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। কৃষিপণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন ক্রমে কমছে। এ ধারা চলতি বছরেও অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে শীর্ষ উৎপাদক ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বজুড়ে পাম অয়েলের ব্যবহার বাড়ছে। বিশেষত বায়োডিজেল উৎপাদনে।

গত বছর পাম অয়েলের বৈশ্বিক ব্যবহার আগের বছরের তুলনায় ৬০ লাখ টনের মতো বেড়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা, যা পণ্যটির উৎপাদন বৃদ্ধির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। উৎপাদন কমার বিপরীতে চাহিদা বাড়ায় পণ্যটির বৈশ্বিক মজুদ কমছে দ্রুতগতিতে। ফলে তৈরি হচ্ছে সরবরাহ সংকট। স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে দাম।

এদিকে ভোজ্যতেলের শীর্ষ ভোক্তা দেশ চীনে সয়াবিনের আমদানি প্রবৃদ্ধি কমেছে। একদিকে আফ্রিকান সোয়াইন ফ্লুর প্রকোপ, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে গত বছর দেশটিতে কৃষিপণ্যটির আমদানি প্রবৃদ্ধি কমেছে। সয়াবিন আমদানি কমায় তেল উৎপাদন রয়েছে নিম্নমুখী। ফলে চাহিদা পূরণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সয়াবিন তেলে আমদানি বাড়াতে হয়েছে দেশটিকে।

এদিকে পাম অয়েল ও অন্যান্য তেলের দামে ব্যবধান হ্রাসে ক্রেতারা তুলনামূলক সস্তা পরিপূরক ভোজ্যতেলের দিকে ঝুঁকেছে। তবে বিদায়ী বছরের শেষার্ধে চাহিদার তুলনায় সয়াবিন ও সরিষা তেলের বৈশ্বিক সরবরাহ ছিল সংকটপূর্ণ। ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রে বায়োডিজেল তৈরিতে সয়াবিনের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে আর্জেন্টিনা থেকে রফতানি বৃদ্ধির পরেও বৈশ্বিক পরিসরে পণ্যটির রফতানি প্রাপ্যতা সীমিত ছিল।

এদিকে বীজের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও মাড়াইয়ের অভাবে সরিষা তেলের শীর্ষ রফতানিকারক কানাডা পণ্যটির রফতানি কমিয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে উদ্ভিজ্জ তেলটির যথেষ্ট সরবরাহ সংকট দেখা গেছে এ সময়ে। তবে সূর্যমুখী তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও তা চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়।

পণ্যবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে পাম অয়েলের পর্যাপ্ত সরবরাহ না হওয়া পর্যন্ত ভোজ্যতেলের দরপতনের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তারা।

সানবিডি/এনজে