জাপানি বিনিয়োগ আনতে চুক্তি করলো বেজা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২০-০১-২৭ ২০:৫১:৪৬


বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বাড়াতে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এই জন্য দেশটির অন্যতম গ্রুপ টোয়া কর্পোরেশনের সাথে চুক্তি করেছে বেজা। আজ রাজধানীর একটি হোটেলে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়েছে।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, ডঃ আহমাদ কায়কাউস, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপস্থিত ছিলেন, জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি মি. হিরাতা হিতোশি , বাংলাদেশে জাপান দূতাবাসের মিনিস্টার মি. হিরোয়ুকি ইয়ামায়া, জেট্রো বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি মি. ইউজি আন্ডো, সুমিতোমো কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার মি. ইচিরো তাকাহাশি এবং টোয়া কর্পোরেশনের এক্সিকিউটিভ অফিসার মি. মাসাকি উয়েমাতসু । অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে এক হাজার একর জমির ওপর জাপানী এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে উঠবে। এটি হবে দেশের প্রথম জিটুজি ভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ পরিকল্পনাকে সামনে রেখে পাঁচশত একর জমির অধিগ্রহণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকী অধিগ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির শিল্প স্থাপনের সুবিধা সম্প্রসারণ, জাপানিজ এবং অন্যান্য স্থানীয় বিনিয়োগ আকর্ষণের অনুকূল পরিবেশ তৈরী করা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, দেশের সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করা। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৯৫৮১.০০ লক্ষ টাকা। এছাড়া আরও ২৫৮২ কোটি টাকায় এ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন প্রজেক্ট (এফডিআইপিপি) প্রকল্প গত ৫ইমার্চ, ২০১৯ তারিখে একনেকে অনুমোদিত হয়। এ প্রকল্পে ভূমি উন্নয়ন, সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ স্থাপন অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এসকল কর্মকান্ড সমাপ্ত করে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি দ্রুত চালুকরণে সংশ্লিষ্টরা নিরলস কাজ করছেন।

বেজা আশা করছে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে সেখানে প্রায় ২০ বিলিয়ন সমমূল্যের জাপানী বিনিয়োগ নিয়ে আসা সম্ভব হবে। যার অধিকাংশই হবে জাপানের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানসমূহের। এর ফলে দক্ষ জনশক্তি তৈরী ছাড়াও প্রযুক্তি স্থানান্তরের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে বলে বেজা মনে করে। এছাড়াও, শিল্পবর্জ্য অপসারণ করার জন্য এ অঞ্চলে নির্মিত হবে রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট। টোয়া কর্পোরেশন এ চুক্তির অনুকূলে ভূমি উন্নয়ন, সীমানা প্রাচীর, সংযোগ সড়ক, সংরক্ষণ জলাধার এবং পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করবে।

গত বছর ২৬ মে জাপানের সুমিতোমো কর্পোরেশনের সাথে বেজার যৌথ উদ্যোগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে জাপানীজ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে বেজা এবং সুমিতোমো একযোগে কাজ করবে। যৌথ উদ্যোগ চুক্তি স্বাক্ষরমূলে বেজার অধীনে একটি স্পেশাল পারপাস কোম্পানি (এসপিসি) গঠন করা হয়। যার নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডঃ আহমাদ কায়কাউস বেজাকে এ অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, জিটুজি ভিত্তিতে এ উদ্যোগ নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তিনি বলেন, জাপান বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু প্রতীম রাষ্ট্র এবং দেশটির সাথে আমাদের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, জাপানীজ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশে বিনিয়োগে তারা আস্থা পাবে, ফলশ্রুতিতে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজ অনেকাংশে বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, ৮.১৩% জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে এক অনন্যসাধারণ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। যার মূল কেন্দ্রবিন্দু হতে চলেছে ঈর্ষনীয় বৈদেশিক বিনিয়োগ। এক্ষেত্রে ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের পরিবেশ তৈরী করা।

তিনি বলেন, দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ যাতে সহজে এবং কম সময়ে তাদের সুবিধা সমূহ পান সে ব্যাপারে সরকারের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিরলস কাজ করে চলেছে, যার মধ্যে বেজা অন্যতম। তিনি আরো বলেন, আর এসব কারণেই পৃথিবী বিখ্যাত মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহ এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, বেজা কথা নয়, কাজে বিশ্বাসী, আর তারই ফল এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এ চুক্তি স্বাক্ষরের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ উদ্যোগ এক বিশাল কর্মযজ্ঞের সূচনামাত্র এবং একটি পরিকল্পিত জাপানীজ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরীর মাধ্যমে তার সফল পরিসমাপ্তি ঘটবে। তিনি সুমিতোমো ও টোয়া কর্পোরেশনকে এ কর্মকান্ডের অংশীদার হওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশে জাপানের দূতাবাস এবং জাইকাকে তাদের অকুন্ঠ সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশে জাপানের দূতাবাসের প্রতিনিধি মিনিস্টার হিরোয়ুকি ইয়ামায়া বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে পেরে জাপান সরকার অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি উল্লেখ করেন, জাপানীজ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে এবং ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ হলে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ চূড়ান্ত হবে। এছাড়াও তিনি বেজার কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, দ্রুত সেবা প্রদানের মাধ্যমে বেজা জাপানী বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে সম্ভব হয়েছে।