ফেব্রুয়ারি থেকে আমানতের সুদ ৬ শতাংশ
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০১-২৯ ১৬:২৭:২১
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ছয় শতাংশের বেশি সুদে আমানত গ্রহণ করবে না কোনো ব্যাংক। মেয়াদী স্কিম ছাড়া সব ধরনের আমানতের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে। তবে যেসব আমানতের মেয়াদ শেষ হবে, সেগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
মঙ্গলবার রাতে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠকে এসব বিষয়ে একমত হন। রাজধানীর গুলশানে ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ওই বৈঠকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা ও প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক প্রসঙ্গে এবিবির চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেন, কোনো ব্যাংক ৬ শতাংশ সুদে আমানত নিলো আবার কোনো কোনো ব্যাংক ৭ শতাংশে আমানত নিলো এতে বাজারে অসমতা সৃষ্টি হবে। আমরা ধাপে ধাপে আমানতের সুদহার কমাতে শুরু করেছি। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকারের আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে। সেই অনুসারে আস্তে আস্তে আমানতের সুদহার কমাচ্ছি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসব। এটি বাস্তবায়নে আমরা কাজ শুরু করেছি। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি যেন সবাই আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারি।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার আলোকে সব বড় ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর সম্ভব হলেও ক্ষুদ্রঋণে তা কার্যকর করা কঠিন হবে। তারা বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকার আমানত রয়েছে, এর বড় অংশই মেয়াদী। ৬ শতাংশ সুদে মেয়াদী আমানত নিলে এর সঙ্গে তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ রয়েছে। ক্ষুদ্রঋণের তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ বেশি। এ অবস্থায় ক্ষুদ্রঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর সম্ভব হবে না বলে তারা মনে করেন।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা জানান, ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলোকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। ঋণের সুদহার কমাতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য এবিবির বৈঠকে আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়ে একমত হয়েছেন এমডিরা। ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই এটি কার্যকর হবে। মেয়াদী আমানতের (এফডি) মেয়াদ তিন মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত হলেও সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। তবে সর্বনিম্ন সুদের বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ব্যাংক নিজেদের সামর্থ্য ও সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বনিম্ন সুদে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত স্প্রেড (ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান) মানতে হবে। সব ব্যাংক একসঙ্গে সুদহার কমালে তবেই আমানতের সুদ কমানো সম্ভব বলে জানান তারা।
এদিকে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণের সুদহার নামাতে ব্যাংককারদের দাবি অনুযায়ী সরকারের আমানতের সুদহার নির্দিষ্ট করে সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে সরকারের নিজস্ব অর্থের ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে রাখার বিধান রাখা হয়েছে। ব্যাংকের সুদহার বেধে দেয়ার পর আমানতকারীদের সবাই যাতে সরকারি ব্যাংকের দিকে ঝুঁকে না পড়েন, তা ঠেকাতে বেসরকারি ব্যাংকে ডিপোজিটে মুনাফা আধা শতাংশ বেশি করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখলে সর্বোচ্চ সুদ পাবে ৬ শতাংশ। আর এই অর্থ যদি সরকারি ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখে তাহলে সর্বোচ্চ সুদ পাবে সাড়ে ৫ শতাংশ। অর্থাৎ বেসরকারি ব্যাংকে সুদ বেশি পাবে আধা শতাংশ।
এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি ও প্রধানমন্ত্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনতে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠক করেন। উভয় পক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে সব ধরনের ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হবে। আর সাধারণ জনগণকে আমানতের বিপরীতে ছয় শতাংশের বেশি সুদ দেবে না। তবে ক্রেডিট কার্ডে সুদহার বেশি হবে। এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ এপ্রিল থেকে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে বেশিরভাগ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে ১০ শতাংশের বেশি সুদে ঋণ বিতরণ করছে৷ অনেক ব্যাংক ১৬-১৭ শতাংশ সুদেও ঋণ দিচ্ছে। ক্ষুদ্র শিল্পে সর্বোচ্চ ১৮ ভাগ হারে ঋণ বিতরণ করছে কোনো কোনো ব্যাংক৷
গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো গড়ে এখন ৯ থেকে ১১ শতাংশে সুদে আমানত নিচ্ছে আর ১৩ থেকে ১৫ শতাংশে হারে ঋণ বিতরণ করছে।
এমন পরিস্থিতিতে নয় শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের জন্য ছয় শতাংশ সুদে আমানত নিশ্চিত করতে হবে। এ হারে আমানত সংগ্রহ করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।