বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলার দায় ‘স্বীকার’ আইএসের

প্রকাশ: ২০১৫-১১-২৭ ১২:২০:১৭


IS capture
বগুড়া শিবগঞ্জের হরিপুরে শিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে হামলার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলোকে পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের ওয়েব পোর্টালে জানায়, ইসলামিক স্টেট ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

এদিকে শিয়া মসজিদে মুসল্লিদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। রাতে ওই মসজিদের ক্যাশিয়ার সোনামিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে বগুড়ার শিবগঞ্জ থানায় ওই মামলা দায়ের করেন।

শুক্রবার ভোরে এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন- আনোয়ার (৪৮) ও জুয়েল (২৫)। শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে তাদের আটক করা হয়।  অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বগুড়ার শিবগঞ্জের হরিপুরে শিয়াদের একটি মসজিদে বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের সময় মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে মোয়াজ্জেম হোসেন (৭০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। তিনি ওই মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। মোয়াজ্জেম হোসেন হরিপুর গ্রামের মৃত বছির উদ্দিনের ছেলে। আহতরা হলেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার চাককানু গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে মসজিদের ইমাম শাহিনুর ইসলাম (৩৫), আলাদিপুর গ্রামের খয়ের মাহমুদের ছেলে আবু তাহের (৭০) ও চাককানু গ্রামের কুদু প্রামাণিকের ছেলে আফতাব আলী (৪২)। এদের মধ্যে শাহিনুর ও তাহেরকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে এবং আফতাবকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এক মাস আগে পুরান ঢাকার ইমামবাড়ায় শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে গ্রেনেড হামলায় দুইজন নিহত হন, আহত হন শতাধিক। ইমামবাড়ার এ ঘটনার পরও আইএস জড়িত বলে দাবি করেছিল ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ’। আইএসকে উদ্ধৃত করে তাদের খবরে লেখা হয়েছিল, বাংলাদেশে খিলাফতের সৈনিকরা বহু-ঈশ্বরবাদীদের ধর্মীয় আচারের সময় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

বগুড়ায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, অন্তত ২০ জন মুসল্লি মাগরিবের নামাজ পড়ছিলেন। এ সময় ৩-৪ জনের একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্ত মসজিদে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে পালিয়ে যায়। এতে মুয়াজ্জিন মোয়াজ্জেম হোসেন মাথায়, ইমাম শাহিনুর ইসলাম কোমরে এবং মুসল্লি তাহের ও আফতাব পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

গুলিবিদ্ধ চারজনকে প্রথমে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে মোয়াজ্জেম হোসেন, শাহিনুর ইসলাম ও আবু তাহেরকে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মোয়াজ্জেম হোসেনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে হামলাকারী কারা সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তারা।

শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইমাম শাহিনুর ইসলাম জানান, মাগরিবের নামাজ আদায়ের সময় তিনজন দুর্বৃত্ত মসজিদে ঢুকে গুলিবর্ষণ করে। এতে তিনি ও মুয়াজ্জিনসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় অন্যরা শুয়ে পড়ায় রক্ষা পান। হামলাকারীদের বয়স ২০-২২ বছর বলে তিনি জানান।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, কারা ও কী কারণে এ হামলা চালিয়েছে, তা তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়। মসজিদ থেকে আট রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, থানা সদর থেকে বেশ কিছু দূরে দুর্গম গ্রামে মসজিদটির অবস্থান। সেখানে এ ধরনের হামলার পেছনে নিশ্চয় বড় কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঠে নেমেছেন। প্রয়োজনে অস্ত্রধারীদের ধরতে চিরুনি অভিযান চালানো হবে।

শিবগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আহসান হাবীব জানান, মাগরিবের নামাজের পর দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহতদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।

মহররমে ঢাকায় শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলার এক মাসের মধ্যে বগুড়ার শিবগঞ্জে এই হামলা হল। ওই হামলায় দু’জন নিহত হয়েছিলেন।