পুলিশি অভিযান
মালয়েশিয়ায় বনে-জঙ্গলে আশ্রয় নিচ্ছেন অবৈধ প্রবাসীরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০২-১৮ ১৫:৫১:০২
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ প্রবাসীদের চোখের ঘুম হারিয়েছে। মালয়েশিয়া সরকার তাঁদের নিজ দেশে ফেরার সুযোগ হিসেবে ‘ব্যাক ফর গুড’ নামে যে কর্মসূচি চালু করেছিল তার মেয়াদ শেষ হতেই সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে দেশটির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।পুলিশের হাত থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে অবৈধ প্রবাসীরা কর্মস্থলে যাওয়া বন্ধ করে নিরাপদ জায়গায় অবস্থান করছেন। কেউ কেউ বনে-জঙ্গলে আশ্রয় নিচ্ছেন। এরই মধ্যে মালয়েশিয়া পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে অমানবিক নির্যাতনের শিকারও হচ্ছেন কেউ কেউ। এ পর্যন্ত অভিযানে কয়েক হাজার অবৈধ প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং প্রবাসী শ্রমিকরা জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি আছেন। অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার জন্য ২০১৭ সালে সুযোগ দিয়েছিল মালয়েশিয়া সরকার। সেই সুযোগ শেষ হয় ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট। বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়ে নিবন্ধন করেও দালালদের প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক বাংলাদেশি বৈধ হতে পারেননি। যাঁরা বৈধ হতে পারেননি কিংবা বৈধতার সুযোগ নেননি, সেই অবৈধ প্রবাসীদের ট্রাভেল পাস নিয়ে দেশে ফেরত যাওয়ার সুযোগ দেয় মালয়েশিয়া সরকার। ২০১৯ সালের ১ আগস্ট থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফিরতে মালয়েশিয়া সরকার ব্যাক ফর গুড কর্মসূচি চালু করে। অবৈধ প্রবাসীদের দেশে ফেরার ওই কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু এখনো মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশি আছেন দুই লাখের বেশি। ব্যাক ফর গুড কর্মসূচির সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরপরই মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। মালয়েশিয়ার প্রতিটি কারখানা, কম্পানি, মার্কেটসহ গ্রাম ও শহরে জোরালো অভিযান চালানো হচ্ছে। পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার অবৈধ প্রবাসী এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আর মালয়েশিয়া সরকারের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দেশের এক লাখ ৯০ হাজার ৪৭১ জন নিজ দেশে ফিরে গেলেও এখনো দেশটিতে অবৈধ অভিবাসী আটক করতে ব্যাপক অভিযান চলছে।
এদিকে গত শুক্রবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর ও পেনাংয়ে অভিযান চালিয়ে ৩৩ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ। কুয়ালালামপুরের জালান আমপাং এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন মালয়েশিয়ার ক্যামরুন হাইল্যান্ড প্রবাসী রফিকুল ইসলামের ছোট ভাই নাজিবুল ইসলাম। গত শনিবার মোবাইল ফোনে রফিকুল ইসলাম জানান, তাঁদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরার মির্জারচর ইউনিয়নে। জিটুজি প্লাস কর্মসূচির আওতায় দেড় বছর আগে সাড়ে তিন লাখ টাকায় গিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। সেখানে যাওয়ার পর দালাল অন্য কম্পানিতে বিক্রি করে দেয় তাঁর ভাইকে। ঠিকমতো বেতনও পেতেন না। নিরুপায় হয়ে পালিয়ে কুয়ালালামপুরের একটি কনস্ট্রাকশন কম্পানিতে কাজ করছিলেন। সেখান থেকেই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর গ্রামের আরো দুই অবৈধ প্রবাসীও গ্রেপ্তার হয়েছেন।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সেলেংগারের একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন মোজাম্মেল হোসেন। এখন পালিয়ে থাকছেন নিজ বাসায়। ১৫ দিন আগে মালিক তাঁকে কাজে যেতে নিষেধ করেছেন। পরিস্থিতি একটু ভালো হলে কাজে যেতে বলেছেন। মোজাম্মেল বলেন, ‘দেশে ফেরার কর্মসূচি শেষ হওয়ায় সারা মালয়েশিয়ায় কঠোর অভিযান চলছে। সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় এলেও এখনো ঋণের অর্ধেক টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। দালালদের প্রতারণার কারণে নিরুপায় হয়ে অবৈধ হয়ে আছি। কারখানা ও কম্পানির মালিকরা জরিমানার ভয়ে অবৈধ শ্রমিকদের কাজে নিতে চায় না।’
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তান শ্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিন সে দেশের সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের সুযোগ দেওয়ার কারণেই অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার আর কোনো সুযোগ দিতে চায় না। পাঁচটি রূপরেখার ভিত্তিতে দেশজুড়ে অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান পরিচালিত হবে। আর সেই অভিযানে যারা গ্রেপ্তার হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে সরকার।’
নানা অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নেওয়ার বিষয়টিও এখন ঝুলে আছে। মালয়েশিয়া সরকার চাইছে কোনোভাবেই আর উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার সুযোগ না দিতে। সম্প্রতি কোনো ধরনের অভিবাসন খরচ ছাড়াই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলা সেগারান। মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমে সম্প্রতি মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদও গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি চাই না আগের মতো চার থেকে ছয় লাখ টাকা খরচ করে কর্মী যাক মালয়েশিয়ায়। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা সিন্ডিকেট নয়, নির্ধারিত খরচে কর্মী পাঠানো নিশ্চিত করা। এটি আমার প্রধান লক্ষ্য। এটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলতে আমি রাজি না।