তুরস্কের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করবে রাশিয়া
আপডেট: ২০১৫-১১-২৯ ১১:১৭:২৩
যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার জেরে তুরস্ক থেকে আমদানিসহ দেশটির ওপর বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাশিয়া। গতকাল শনিবার এ সংক্রান্ত একটি ডিক্রিতে সই করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা ওই ডিক্রিতে তুরস্ক থেকে আমদানি, রাশিয়ায় তুর্কি কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা এবং রুশ কোম্পানিতে তুরস্কের নাগরিকদের কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বলা হয়েছে। উভয়ে দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধের কথাও বলা হয়েছে ওই ডিক্রিতে।
তুর্কিদের কাছে ‘প্যাকেজ’ বিক্রি বন্ধ রাখতে ট্যুর অপারেটরদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে পুতিনের ওই ডিক্রিতে। গত শুক্রবার তুরস্কের সঙ্গে ভিসাবিহীন ভ্রমণ ব্যবস্থা স্থগিত করেছে রাশিয়া।
অন্যদিকে গতকাল তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা সতর্ক বার্তায় ‘পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত’ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাশিয়া সফর থেকে বিরত থাকতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাশিয়াই তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। গত বছর ৩০ লাখের বেশি রুশ পর্যটক তুরস্ক ভ্রমণ করেন।
পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ গতকাল শনিবার বলেন, ৯০ হাজারের মতো তুরস্কের নাগরিক রাশিয়ায় কর্মরত আছেন। তাদের পরিবারের সদস্যসহ রাশিয়ায় প্রায় ২ লাখ তুরস্কের নাগরিক রয়েছেন।
গত মঙ্গলবার সিরিয়া সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করার চার দিনের মাথায় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক তুরস্কের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিল মস্কো। উত্তেজনা প্রশমনে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক চাইলেও আগে তুরস্ককে ক্ষমা চাওয়ার শর্ত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনি। অপরদিকে ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান।
রুশ জঙ্গি বিমান ভূপাতিতের ঘটনায় নিজেদের নির্দোষ দাবি করে তুরস্ক বলছে, বিমানটি তাদের আকাশ সীমায় অনুপ্রবেশ করে এবং বেশ কয়েকবার সতর্ক করার পরেও তা উপেক্ষা করা হয়।
তবে মস্কো বলছে, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাদের এসইউ-২৪ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়। সিরিয়ার আকাশ সীমায় থাকা অবস্থায় তুরস্কের জঙ্গিবিমান থেকে সেটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।
ক্ষমা চাওয়ার বিপরীতে গত শুক্রবার এক বক্তব্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘আগুন নিয়ে খেলার’ অভিযোগও করেন এরদোয়ান। গতকাল শনিবার বিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
হামলার আগে বিমানটি রাশিয়ার তা শনাক্ত করা হয়নি বলে তুরস্কের পক্ষ থেকে যে দাবি করলে তা নাকচ করেছেন পুতিন। তিনি বলেন, এটা সহজেই শনাক্ত করা যায় এবং এর ফ্লাইট সম্পর্কিত তথ্য তুরস্কের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে আইএসসসহ বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইরত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারকে সহযোগিতার লক্ষ্যে সেদেশে বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। গত ৩০ অক্টোবর থেকে তুরস্কের প্রতিবেশী দেশটিতে রাশিয়ার এই অভিযানের সমালোচনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। যদিও আইএস দমনের কথা বলে বছরখানেক ধরে সিরিয়ায় বিমান হামলা চালাচ্ছে তারা।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন দাবিতে আন্দোলন থেকে ২০১১ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বাশারবিরোধী যেসব যোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল তাদের অনেকেই পরে আইএসে যোগ দেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ওই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্র দেশগুলো আইএস দমনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বললেও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরোধিতা করে আসছে। অবশ্য সম্প্রতি প্যারিসে হামলার পর আইএস দমনে প্রয়োজনে বাশার অনগুত বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার কথা বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলান্দ। গতকালও বাশার আল-আসাদকে রাশিয়ার সমর্থনের সমালোচনা করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।