নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আদালতে জাতিসংঘ

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৩-০৩ ১৬:০৭:৫০


ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে এবার সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশন। তবে এর তীব্র বিরোধিতা করেছে দিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর জানাচ্ছে, এটি একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং কোনও বিদেশি শক্তি এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না ।

দিল্লিতে ভয়াবহ দাঙ্গার পরই এই উদ্যোগ নিল জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। মঙ্গলবারই তারা কোন দেশের বিরুদ্ধে এই ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে। ওই আবেদনে সিএএ-র বিরুদ্ধে জাতিসংঘের মানবিধার কাউন্সিলকে মামলায় একটি পক্ষ হিসেবে বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার জানান, জতিসংঘের মানবাধিকারের হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট সোমবার জেনিভায় হস্তক্ষেপের আবেদনের বিষয়ে ভারতকে জানিয়েছে।

কিন্তু রবীশ বলেন, ‘সিএএ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটি ভারতীয় সংসদের আইন প্রণয়নে সার্বভৌম অধিকারের বিষয়। আমরা কঠোরভাবে বিশ্বাস করি, ভারতের সার্বভৌমত্বের বিষয় নিয়ে কোনও বিদেশি শক্তির আদালতে যাওয়ার কোনও অধিকার নেই।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে সিএএ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বৈধ। এটি আমাদের যাবতীয় প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যবোধের কথা মাথায় রেখেই করা হয়েছে। দেশভাগের ট্র্যাজেডির সময় থেকে তৈরি হওয়া মানবাধিকার সংক্রান্ত সমস্যাকে সম্মান জানিয়ে দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়েছে এই আইনে।’

বিচারব্যবস্থা নিয়ে রবীশ বলেছেন, ‘আমাদের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা রয়েছে। আমি আশাবাদী যে, আমাদের আইনগত অবস্থানকে রক্ষা করবে সুপ্রিম কোর্ট।’

গত সপ্তাহে সিএএ ও উত্তর-পূর্ব দিল্লির হিংসা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মিশেল ব্যাচেলেট। তখন ভারত সরকারকে হিংসা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি।

ভারতের রাজধানীতে সম্প্রতি যে দাঙ্গা হয়ে গেলো তার পিছনেও এই সিএএ আইন রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছরের শেষ নাগাদ এই আইন পাস হওয়ার পর থেকে ভারত জুড়ে চলছে বিক্ষোভ। অনেকের ধারণা, ওই বিক্ষোভকারীদের দমন করতেই পরিকল্পিতভাবে দিল্লিতে দাঙ্গা ছড়ানো হয়েছে।

গত ডিসেম্বরে সংসদে পাস হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। তারপর থেকে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। কিন্তু এবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিল, এই আইন সাংবিধানিক ভাবে বৈধ এবং সাংবিধানিক মূল্যবোধের সমস্ত প্রয়োজনীয়তার অনুবর্তী।

সংসদে ওই আইন পাস হওয়ার পরই জাতিসংঘ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিল, এই আইন মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক প্রকৃতির। এ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের এক মুখপাত্র বলেন, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের এই সংশোধন দেশের মানুষের জাতীয়তায় বৈষম্যমূলক প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও জানান, সমস্ত অনুপ্রবেশকারীরই সুরক্ষা, সম্মান ও মানবিক আধিকার পূর্ণ হওয়ার অধিকার রয়েছে।

প্রসঙ্গত, এই আইনে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আগত কেবল অমুসলিম শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সংসদে পাস হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতন শাহিনবাগের বিক্ষোভ।

সমালোচকদের মতে, এই আইন বৈষম্যমূলক এবং ভারতের ধর্ম‌নিরপেক্ষ ভাবমূর্তির পরিপন্থী। এই আইন ও এনআরসি মুসলিমদের লক্ষ্য করেই বানানো হয়েছে বলেও দাবি সমালোচকদের।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস