ইয়েস ব্যাংকের ৪৯ শতাংশ মালিকানা কিনে নিচ্ছে স্টেট ব্যাংক
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৩-০৭ ১৪:৩৬:৪২
পতন ঠেকাতে ইয়েস ব্যাংকের ত্রাতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভারতের স্টেট ব্যাংক (এসবিআই)। ভারতের চতুর্থ শীর্ষ বেসরকারি ব্যাংকটির ৪৯ শতাংশ মালিকানা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্টেট ব্যাংকের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার।
আজ শনিবার এ ঘোষণা দিয়ে রজনীশ কুমার গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের মূল লক্ষ্যই হবে ইয়েস ব্যাংকের আমানতকারীদের সঞ্চয় সুরক্ষিত রাখা।
দেশের বৃহত্তম ব্যাংক হিসাবে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে উল্লেখ করে স্টেট ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘সেই দায়িত্ব আমাদেরই পালন করতে হবে। কোনও এক জনের ভুলের খেসারত কেন একটা প্রতিষ্ঠান দেবে? ব্যাংক লাটে উঠলে তার ভয়াবহ প্রভাব পড়ে। কিন্তু এসবিআই পাশে দাঁড়ালে পরিস্থিতিটা ঘুরে যাবে। তা সে বেসরকারি বা সরকারি মালিকানাধীন, যা-ই হোক না কেন, দেশের যে কোনও প্রতিষ্ঠানই জাতীয় সম্পদ।’
আমানতকারীদের অর্থ মার যাবে না বলে গত শুক্রবারই আশ্বাস দিয়েছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। একই আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রমনিয়ন ও রিজার্ভ ব্যাংকের (আরবিআই) গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। এরই একদিন পর এমন সিদ্ধান্ত এলো।
এদিকে, গতকালের পর আজও (শনিবার) ইয়েস ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা রানা কাপুরের মুম্বাইয়ের বাড়িসহ নানা জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কর্মকর্তারা। সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, পুরো সপ্তাহ জুড়েই এই তল্লাশি চালানো হবে।
মূলধন সমস্যা এবং বিপুল অনাদায়ী ঋণের ভারে জর্জরিত ইয়েস ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকার বেশি তোলার উপরে বৃহস্পতিবারই নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এই নিয়ম চালু থাকবে বলে জানিয়েছে আরবিআই। নতুন এই ঘোষণার পর ইয়েস ব্যাংকের শেয়ারে ধস নামে, ৮৫ শতাংশ কমে যায় তাদের শেয়ারের দাম।
ইয়েস ব্যাংককে ভরাডুবি থেকে উদ্ধার করতে স্টেট ব্যাংককে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে গতকাল শুক্রবারই। রিজার্ভ ব্যাংকের পরিকল্পনার খসড়া অনুযায়ী, বেসরকারি ইয়েস ব্যাংকের ৪৯ শতাংশ মালিকানা কিনে নেবে রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)।
আজ সকাল থেকেই টাকা তুলতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন ইয়েস ব্যাংকের গ্রাহকরা। তাদের আশ্বস্ত করতে গণমাধ্যমের সামনে এসেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তিনি বলেন, ‘সমস্ত আমানতকারীর টাকা সুরক্ষিত রয়েছে। আমি নিজে রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।’
শুধু গ্রাহক নয়, আতঙ্কিত ব্যাংকটির ১৮ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীও। পরিস্থিতি সামলাতে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে রিজার্ভ ব্যাংকের কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসেছেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠক করেছেন স্টেট ব্যাংকের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার, সেবির চেয়ারম্যান অজয় ত্যাগীর সঙ্গেও। এর পরেই বিকেলে পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার খসড়া ঘোষিত হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও রিজার্ভ ব্যাংকের লক্ষ্য, যে পর্যন্ত টাকা তোলার উপর কড়াকড়ি ও ঋণের উপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে, সেই ৩ এপ্রিলের মধ্যেই পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করে ফেলা। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে এক মাসের মধ্যে ইয়েস ব্যাঙ্ককে চাঙ্গা করার আত্মবিশ্বাস মিলছে, তার কোনও ব্যাখ্যা অর্থমন্ত্রী দেননি। স্টেট ব্যাংক টাকা ঢাললে তার আর্থিক স্বাস্থ্য কেমন হবে, সে প্রশ্নেরও উত্তর দিতে চাননি তিনি।
স্টেট ব্যাংকের সঙ্গে এলআইসি বা কোনও বেসরকারি লগ্নি সংস্থাকে নামানো হবে কি না, তারও জবাব দিতে চাননি তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, এখানেই শেষ, না কি ভবিষ্যতে আরও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়তে চলেছে?- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি আগেই বলেছি, কোনও প্রতিষ্ঠানকেই খাদে পড়তে দেব না।’