প্রথম দুই মাসে চীনের আমদানি-রফতানিতে পতন

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৩-০৮ ১১:২১:১৪


 

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে বিভিন্ন ব্যবসা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন বিঘ্নিত হয়েছে। এতে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীনের রফতানিতে বড় আকারের পতন হয়েছে। শনিবার প্রকাশিত চীনের সরকারি উপাত্তে দেখা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির রফতানি ১৭ দশমিক ২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি-পরবর্তী সর্বনিম্ন। এদিকে দেশটির আমদানি হ্রাস পেয়েছে ৪ শতাংশ। খবর এএফপি ও রয়টার্স।

ব্লুমবার্গের একদল অর্থনীতিবিদের সমীক্ষায় রফতানি ১৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং আমদানি ১৬ দশমিক ১ শতাংশ পতনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।

জানুয়ারির শেষ দিকে চীনা চান্দ্রবর্ষের ছুটিতে অনেক ভোক্তা ঘরে বসে ছিলেন এবং ছুটি শেষে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমসংখ্যক কর্মী কাজে ফিরেছেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে চীন, যেখানে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত বেইজিংয়ের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত গত দুই মাসে ৪০ শতাংশ কমেছে। গত বছরের প্রথম দুই মাসে যেখানে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে তা ২ হাজার ৫৪০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির উপাত্ত যে একত্রিত করা হবে, তা গত মাসেই জানিয়েছিল চীনা কর্তৃপক্ষ। নববর্ষের ছুটির কারণে অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে দুই মাসের উপাত্ত একসঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস চীনের অর্থনীতিতে যে ভয়াবহ প্রভাব রাখতে যাচ্ছে, তার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেশটির ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের কার্যক্রম গত ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড সর্বনিম্ন স্তরে নেমে আসে। এছাড়া নন-ম্যানুফ্যাকচারিং খাতেও এর প্রভাব পড়ে।

শুক্রবার এক প্রতিবেদনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের জুলিয়ান ইভানস-প্রিচার্ড জানান, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির উপাত্ত একসঙ্গে প্রকাশের মানে দাঁড়াচ্ছে, প্রকাশিত এ প্রবৃদ্ধি হারে সাম্প্রতিক দুর্বলতার পুরোপুরি প্রতিফলন ঘটেনি। কারণ চীনের অর্থনীতিতে বৃহৎ ধাক্কা লেগেছে গত ফেব্রুয়ারিতে।

তিনি আরো বলেন, বাণিজ্যক্ষেত্রে বর্তমানে যে শ্লথগতি চলছে, তা প্রকাশিত উপাত্তে যে ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে তার চেয়ে আরো খারাপ।

গত ডিসেম্বরে চীনের কেন্দ্রীয় হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৮৫টি দেশে সংক্রমিত হয়েছে ভাইরাসটি।

ভাইরাস সংক্রমণের ফলে চীনের অর্থনীতিতে যে বিঘ্ন ঘটেছে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রাথমিক ধাপের বাণিজ্য চুক্তির শর্ত মেনে চলতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২০ হাজার কোটি ডলারের মার্কিন পণ্য ও সেবা ক্রয়ের অঙ্গীকার করেছিল বেইজিং।

চীনা কর্তৃপক্ষ অবশ্য জোর দিয়ে বলেছে, মহামারীটির প্রভাব স্বল্পমেয়াদি হবে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো যে শিগগিরই কার্যক্রম শুরু করতে পারে, এজন্য বিভিন্ন সহায়তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। অবশ্য তা চীনের সার্বিক প্রবৃদ্ধিতে যে বড় আকারের ধাক্কা লেগেছে তা ঠেকাতে যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

এদিকে গতকাল চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত উপাত্তে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৮ দশমিক ৭৭৯ কোটি ডলার কমে ৩ দশমিক ১০৭ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে মারাত্মক ধাক্কা ও ইউয়ানের মান পতনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে প্রভাব পড়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের পতন হয়েছে শূন্য দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা ২০১৯ সালের আগস্ট-পরবর্তী সর্বনিম্ন। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরা করোনাভাইরাসের প্রধান কেন্দ্র এশিয়া থেকে তাদের অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ বাজারে সরিয়ে নেয়ায় ডলারের মান বেড়েছে শূন্য দশমিক ৭৭ শতাংশ।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস