ছয় মাসে মূলধন ঘাটতি ২২ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২০-০৩-১০ ০৭:৩৮:০৩
নানা ছাড় দিয়ে বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের প্রভাবে খেলাপি ঋণ কমলেও বেড়েছে মূলধন ঘাটতি। সর্বশেষ হিসাবে গত ডিসেম্বর শেষে ১২টি ব্যাংকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে ২২ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। ঘাটতির তালিকায় নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে ফারমার্স ব্যাংক থেকে নাম পরিবর্তন হওয়া পদ্মা ব্যাংক। আর ঘাটতি থেকে বেরিয়ে গেছে এবি ব্যাংক। গত সেপ্টেম্বর শেষে ১২টি ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ১৭ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। ফলে তিন মাসে মূলধন ঘাটতি বেড়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি।
আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতির আলোকে সম্পদ বা ঋণের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান নিয়মে কোনো ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যা বেশি, নূ্যনতম সেই পরিমাণ অর্থ মূলধন হিসেবে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর বাইরে আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় হিসেবে ব্যাংকগুলোকে ২০১৬ সাল থেকে অতিরিক্ত মূলধন রাখার পরামর্শ রয়েছে। সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের মূলধন সংরক্ষণের হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তিন মাস আগে যেখানে ব্যাংক খাতের মূলধন সংরক্ষণের হার ছিল ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, মূলধন ঘাটতি থাকলে কোনো ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারে না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এসব ব্যাংকের কমিশনসহ অন্যান্য খরচ বেশি।
সংশ্নিষ্টরা জানান, মূলধন সংরক্ষণের সঙ্গে খেলাপি ঋণের সম্পর্ক আছে। সাধারণত যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যত বেশি, ওই ব্যাংকে তত বেশি মূলধন রাখতে হয়। গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ২১ হাজার ৯৫৭ কোটি কমে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকায় নেমেছে। এরপরও ব্যাংক খাতের মূলধন পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এর অন্যতম কারণ, ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নীতিমালার আওতায় বিপুল অঙ্কের ঋণ পুনঃতফসিল করলেও এসব ঋণের বিপরীতে আগের মতোই প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। যে কারণে ব্যাংকের আয় মূলধন খাতে নিতে পারছে না। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে অবনতি হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে ৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি পাঁচ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতা ব্যাংকের ঘাটতি দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা, অগ্রণীর এক হাজার ২৯৩ কোটি, বেসিক ব্যাংকের ৯৬১ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৭৮৮ কোটি ও রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি ২০১ কোটি টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে তালিকায় নতুনভাবে যুক্ত হওয়া পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৭৮ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির উদ্বৃত্ত ছিল ২৮৬ কোটি টাকা। তিন মাস আগে এবি ব্যাংকে ৬৫২ কোটি টাকা ঘাটতি থাকলেও ডিসেম্বর শেষে ৯১ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত দেখানো হয়েছে। এর বাইরে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ঘাটতি এক হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। কমিউনিটি ব্যাংকে ঘাটতি এক কোটি ৫৮ লাখ টাকা। মূলত ব্যাংকটি ৪০০ কোটি টাকার কম মূলধন নিয়ে কাজ শুরু করায় এ তালিকায় রয়েছে। এর বাইরে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঘাটতি রয়েছে ৬২ কোটি টাকা।