১ হাজার ৭০০ ডলার ছাড়াল স্বর্ণের আউন্স
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৩-১০ ১২:১৭:০১
বৈশ্বিক বাজারে চলতি বছরের শুরু থেকেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মুল্যবান ধাতু স্বর্ণের বাজার। সম্প্রতি মূল্যবান ধাতুটির দাম আরো বেড়ে আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৭০০ ডলারের রেকর্ড ছুঁয়েছে। সাত বছরের মধ্যে এটাই পণ্যটির সর্বোচ্চ দাম। নভেল করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান ব্যাপক বিস্তার এর পেছনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। এছাড়া ওপেক ও মিত্র দেশগুলোর মতানৈক্যের জেরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে ব্যাপক দরপতন দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত স্বর্ণের বাজারের দিকে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। ফলে চাহিদা বাড়ায় ধাতুটির দামও বাড়ছে। খবর রয়টার্স ও মাকের্ট ওয়াচ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গতকাল দিনের শুরুতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৭০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ওই সময় আউন্সপ্রতি মূল্যবান ধাতুটির দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ৭০২ ডলার ৫৬ সেন্ট। ২০১২ সালের ডিসেম্বরের পর এটাই পণ্যটির সর্বোচ্চ দাম। তবে দিন শেষে ধাতুটির দাম কিছুটা কমে আসে। আগের দিনের তুলনায় ৩ ডলার ৬৫ সেন্ট বা দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৭৭ ডলার ৫০ সেন্ট। একই বাজারে এদিন ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে পণ্যটির দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৭৫ ডলার ৩০ সেন্ট, আগের দিনের তুলনায় যা ৪ ডলার ৫০ সেন্ট বা দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক ফিন্যান্সিয়াল কনসালট্যান্টের জ্যেষ্ঠ পণ্য ব্যবস্থাপক অবতার সান্দু জানান, নভেল করোভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এখন আর চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আতঙ্কে দেশে দেশে শেয়ারবাজারে ধস নামছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা সেভ হ্যাভেনখ্যাত স্বর্ণের বাজারের প্রতি ঝুঁকেছেন, যা পণ্যটির দাম রেকর্ড বাড়িয়ে তুলেছে। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৭০০ ডলার অতিক্রম করার পর পরই পণ্যটির বাজার ফের নিম্নমুখী হতে শুরু করে।
নিউইয়র্কভিত্তিক ফরেন এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ওএএনডিএ করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক জেফরি হ্যালি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্য অনিশ্চয়তায় সোমবার দিনের শুরুতে স্বর্ণের দাম ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে সাত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে চীনের বাণিজ্য তথ্য প্রত্যাশার তুলনায় খারাপভাবে উপস্থিত হয়েছে। ইতালিতে এক কোটির বেশি জনগণকে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। সেখানকার শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নেমেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা আপত্কালীন বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত স্বর্ণের বাজারের প্রতি দ্রুতগতিতে ছুটছেন।
গত রোববার চীনের সরকারি কর্তৃপক্ষ গত দুই মাসে দেশটির আমদানি-রফতানির তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে চীনের রফতানি প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুত সংকুচিত হয়েছে। একই পরিস্থিতি বিদ্যমান আমদানি খাতেও। মূলত প্রাণঘাতী ভাইরাসটির প্রকোপে দেশটির বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপ ব্যাপক হারে বিঘ্নিত হয়েছে। অন্যদিকে এটি বৈশ্বিক মহামারীতে রূপান্তর হয়ে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ও অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ ব্যাহত করছে।
এদিকে ১৮ মার্চ নীতিনির্ধারণকারী বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড বিদ্যমান সুদহার আরো এক দফা কমিয়ে আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষণকারীরা। গত সপ্তাহে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই জরুরি ভিত্তিতে সুদহার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে ফেড। ওই সময় এক দফায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ফেডের নতুন সুদহার ধার্য করা হয় ১ থেকে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ ঘোষণার পরই স্বর্ণের বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে জ্বালানি তেলের বাজারের অস্থিরতাও স্বর্ণের বাজার চাঙ্গা করতে প্রভাবক হিসেকে কাজ করেছে। নতুন চুক্তিতে কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে ওপেকের সর্বশেষ বৈঠকে। এর জের ধরে গতকাল একদিনের ব্যবধানেই জ্বালানি পণ্যটির দাম ৩০ শতাংশ কমে গেছে। পরিবর্তে
বাড়ছে স্বর্ণের দাম।
তবে স্বর্ণের দাম বাড়লেও মন্দায় রয়েছে অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর বাজার। গতকাল প্রতি আউন্স রুপার দাম দাঁড়িয়েছে ১৬ ডলার ৬৩ সেন্ট, আগের দিনের তুলনায় যা ৩ দশমিক ৯ শতাংশ কম। প্যালাডিয়ামের দাম ৪ শতাংশ কমে আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৪৬৩ ডলারে নেমেছে। একই দিন প্লাটিনামের দাম ৩ শতাংশ কমে আউন্সে ৮৭৩ ডলার ৫০ সেন্টে নেমেছে।