ওয়ান ব্যাংকে প্রবাসীর অর্থ জালিয়াতির অভিযোগ
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৩-১৪ ১৮:৪৫:০৬
সিলেটে চেক ও স্বাক্ষর জাল করে ওয়ান ব্যাংকের এক গ্রাহকের ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা আত্মসাত এর অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, ওয়ান ব্যাংক সিলেটের ইসলামপুর শাখার গ্রাহক প্রবাসী আব্দুর রউফের চেক ও স্বাক্ষর জালিয়াতি ৮৩ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন ওই ব্যাংকেরই কর্মকর্তা সরফরাজ আলী পাপলু। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার আগেই অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন বলেও জানিয়েছেন ব্যাংকের ম্যানেজার। এদিকে অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন গ্রাহক আব্দুর রউফ।
জানা যায়, ২০১২ সালে ওয়ান ব্যাংক ইসলামপুর শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রউফ। এরপর বিদেশে থেকেই ব্যাংক এ্যাকাউন্টে প্রায় কোটি টাকা জমা করেন আব্দুর রউফ। গতবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে এসে এ্যাকাউন্টের তথ্য জানতে গিয়ে বেরিয়ে আসে জালিয়াতির এমন অজনা সব তথ্য। তিনি জানতে পারেন তার চেক ও স্বাক্ষর জাল করে বিভিন্ন সময়ে এ্যাকাউন্ট থেকে ৮৩ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আর এ কাজটি করেছেন ব্যাংকের তৎকালীন ক্যাশ অফিসার এবং তার আত্মীয় সরফরাজ আলী পাপলু। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতারণার শিকার গ্রাহক আব্দুর রউফ জানান, তিনি ব্যাংক থেকে স্টেটমেন্ট উঠালে এতে ব্যাপক গরমিল দেখতে পান। তার হিসেব অনুযায়ী এ্যাকাউন্টে ৮০ লাখ টাকার ওপরে থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১৬ লাখ টাকা। তিনি বিষয়টি ওই শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে জানালে তাকে জানানো হয়, চেকের মাধ্যমে তার ব্যাংক হিসেব থেকে নানা সময়ে ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা উঠানো হয়েছে। তখন তিনি ব্যবস্থাপকের কাছে তার সঙ্গে থাকা চেকবই উপস্থাপন করেন। এরপর ব্যবস্থাপক জানান, এই চেকবই ছাড়াও তার অরেকটি চেক বই রয়েছে। সেটার মাধ্যমে টাকা উঠানো হয়েছে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ব্যাংক কর্মকর্তা সরফরাজ আলী পাপলু টাকা আত্মসাত এর বিষয়টি আব্দুর রউফের কাছে স্বীকার করে বলেন, মোট ২৩টি চেকের মাধ্যমে তিনি ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। এ সময় দ্রুত সব টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গীকারও করেন পাপলু। এ পর্যন্ত ফেরতও দেন ৩১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এক পর্যায়ে বাকি টাকা না দিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করতে থাকেন পাপলু। অবশেষে বাকি অর্থ ফেরত পেতে আদালতের দারস্থ হন আব্দুর রউফ। চলতি মাসে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাপলু ও ওয়ান ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। মামলায় পাপলু ছাড়াও ব্যাংকের তৎকালীন এবং বর্তমান ম্যানেজারকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে দুদক। গ্রাহকের এই অভিযোগ আমলে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে বিষয়টি তদন্তের নামে ওয়ান ব্যাংক এক বছর সময় পার করে দিয়েছে। এ বিষয়ে ওয়ান ব্যাংক ইসলামপুর শাখার ম্যানেজার ফুয়াদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে সেটি বিচারাধীন অবস্থায় আছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি। এবং এখানে আমাদের কোন গাফিলতি আছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখছি। তদন্তের ধীরগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। সেজন্য ব্যাংকের করার তেমন কিছু নেই। তবে এ বিষয়টি মানতে নারাজ সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ব্যাংকের এমন বক্তব্য অযৌক্তিক, বিভ্রান্তিকর। ব্যাংক কোনভাবেই এ দায় এড়াতে পারে না। এ বিষয়ে অভিযুক্ত পাপলুর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানে না।