২০৩০ সালের মধ্যে অর্জন করতে হবে অনেক কঠোর উন্নয়ন লক্ষ্য

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৩-১২ ১২:১৯:৪০


আইসিসিবির ত্রৈমাসিক বুলেটিন সম্পাদকীয়

মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উত্তরণে বাংলাদেশকে অনেক নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষত রফতানি পণ্যের মূল গন্তব্যের দেশগুলোর বাণিজ্য অগ্রাধিকার সুবিধা হারাতে হবে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে অনেক কঠোর ও দুরূহ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার্স অব কমার্স বাংলাদেশ বা আইসিসিবির ত্রৈমাসিক বুলেটিন সম্পাদকীয় ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি-২০১৯’-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে আইসিসিবি বলেছে, পরবর্তী দশকে দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারাকে প্রভাবিত করবে। এক. ২০২৪ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ। দুই. টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন।

গত বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চিত্রও তুলে ধরেছে আইসিসিবি। সে অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ম্যাক্রো ও মাইক্রো উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্ব অর্থনীতির বিচারে মিশ্র চিত্র দেখা যায়। বৈশ্বিকভাবে গত বছর কোনো বড় ধরনের বিপর্যয় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হয়নি। কিন্তু বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানিতে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। গত বছর দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এ প্রবৃদ্ধিকে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অর্থনীতি হিসেবে বিবেচনা করেছে।

বিদেশী বিনিয়োগ, আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয় বিষয়ে সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, রফতানির ক্ষেত্রে নতুন বাজার তৈরি, বেশিসংখ্যক বিদেশী বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করা এবং বিভিন্ন ধরনের মেগা আধুনিক প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য এ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। আর বাংলাদেশের রফতানি আয় ২০১৯ সালে ছিল ৩৯ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৮ সালে ছিল ৩৯ দশমিক ২৫ বিলিয়ন। আমদানি ব্যয় ২০১৯ সালে ছিল ৫৯ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৮ সালে ছিল ৬০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

রেমিট্যান্স আয় সম্পর্কে আইসিসিবি বলছে, ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয় ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। টাকার অবমূল্যায়ন ও রেমিটেড টাকার ওপর ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা প্রদান এ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করেছে।

ওয়ার্ল্ভ্র ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) উদ্ধৃতি দিয়ে আইসিসিবির বুলেটিনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ১৯৭৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় ছিল। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি অনুসারে ২০২৪ সাল নাগাদ এ দেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে।

আর ডব্লিউইএফের গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস প্রতিবেদন-২০১৯ অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৫। আইটি ইন্ডাস্ট্রির সফলতা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও চলমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রযুক্তি পণ্য রফতানি করে, যা ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে।

চলমান অবকাঠামো বিষয়ে আইসিসিবি বলছে, দেশে পদ্মা সেতু, এমআরটি সিস্টেম, এলএনজি টার্মিনাল ও বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্লান্ট, গভীর সমুদ্রবন্দরের মতো বড় বড় অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। সেজন্য আমাদের সীমিত সম্পদের কারণে এসব প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য সরকারকে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়। সরকারের ব্যাংকঋণ বাড়ার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের সরবরাহ কমে গেছে।

গত বছর দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির চিত্র উঠে এসেছে আইসিসিবির ওই বুলেটিনে। সে অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ সরবরাহের প্রবৃদ্ধি কমে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ হয়েছে। যেখানে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আর বর্তমানে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে। ব্যাংকের মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে এটা হচ্ছে। গত বছর জুনের হিসাব অনুযায়ী মোট অনাদায়ী ঋণের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ হচ্ছে মন্দ ঋণ এবং এর মধ্যে অনেকগুলো আবার ইচ্ছাকৃত মন্দ ঋণ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল-২০২০-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আইসিসিবি বলছে, জনশক্তি ও বর্ধমান পার ক্যাপিটার ওপর ভিত্তি করে ২০২০ থেকে ২০৩৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিস্ফোরণ ঘটবে। আর ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের ৩০তম বৃহৎ অর্থনীতি হবে এবং মালয়েশিয়া, হংকং ও সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যাবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৯ ও ২০৩৪ সালে যথাক্রমে ২৬তম ও ২৫তম অবস্থানে যাবে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস