লাল মরিচের আবাদে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৩-১২ ১৬:২৯:২৭


বগুড়ার  বিভিন্ন রকমের মরিচের কদর এখন বিশ্বজুড়ে। বিশেষ করে লাল মরিচের গুঁড়া ‘কনজুমার গুডসে’ সুনাম কুড়িয়েছে। গত দশ বছরে বগুড়ার যমুনা তীরের গ্রাম ও চরে মরিচের আবাদ কয়েকগুণ বেড়েছে। নদী শুকিয়ে চর জেগে উঠলে কৃষক বাদামের আবাদ করত। এখন বাদামের পাশাপাশি মরিচের আবাদ করছে। মরিচে লাভবান হচ্ছে।

জেলার সারিয়াকান্দির কাজলার চরের কৃষক মতলুবর রহমান বললেন, কাঁচা মরিচ তুলে কিছুটা বিক্রির পর বাকি মরিচ শুকিয়ে লাল করেন। গুঁড়া মসলা কোম্পানিগুলো লাল মরিচ বেশি কেনে। ক’বছর ধরে কোম্পানির লোকজন ধার্য দরে মরিচ বিক্রির শর্তে কৃষকদের আগাম অর্থ জোগান দিয়ে মরিচের আবাদ করিয়ে নিচ্ছে। বিভিন্ন পয়েন্টে বড় কোম্পানিগুলো ক্রয় কেন্দ্রে খুলেছে। তবে সব কৃষক এই শর্তে মরিচ বেচে না। কৃষক আশরাফ আলী বললেন কোম্পানির লোকজনের অর্থে আবাদ করলে জিম্মি থাকতে হয়। তাদের ধার্য দরেই বিক্রি করতে হয়। অনেক সময় পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যায়। কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি থাকলে দাম বেশি পাওয়া যায় না। খুচরা বাজারে বিক্রি করলে বেশি লাভ মেলে। অন্যদিকে চরে মরিচের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় মরিচ সিন্ডেকেট ও ফাড়িয়া চক্র দুইই বেড়েছে। বগুড়ার মরিচের অতিরিক্ত ঝাল এই চক্র তৈরি করেছে। অন্য এলাকার পাঁচটা মরিচে যত ঝাল তারচেয়ে অনেক বেশি ঝাল বগুড়ার একটি মরিচে।

মাটির গুণাগুণে বগুড়ার মরিচের খ্যাতি প্রাচীনকালের। আগে জনসংখ্যা কম থাকায় মরিচের আবাদ বেশি হতো না। অল্প আবাদে যে উৎপাদন হতো তা দিয়ে পরিবারের ভর বছরের রান্নার জোগান হয়ে বিক্রিও করা যেত। বগুড়ায় সবচেয়ে বেশি মরিচের আবাদ হয় জেলার পূর্বাংশের যমুনা ও বাঙালী নদী বেষ্টিত সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, গাবতলি ও শিবগঞ্জ উপজেলা এলাকায়। পঞ্চাশের দশকে গাবতলির কলাকোপা এলাকায় এক ধনাঢ্য পরিবার মরিচের আবাদ করে এতটাই লাল হয়েছিলেন যে মোটর গাড়ি কেনার পর তৎকালীন সরকারের কাছে হেলিকপ্টার কিনতে গিয়েছিলেন। বগুড়ার মরিচের উদাহারণের এই গল্প বংশ পরম্পরায় চিরন্তন হয়ে গিয়েছে। এই লাল মরিচের সুনামে ইংরেজী নামে বগুড়া ও কয়েকটি জেলায় বিলাসবহুল আবাসিক হোটেল ও রেস্তরাঁর নামকরণ হয়েছে। বগুড়ায় মরিচের স্থানীয় নাম ‘পত্ত্যে’।

এ ব্যাপারে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম আযাদ জানান, যমুনায় চর জেগে ওঠায় প্রতিবছর বগুড়ায় মরিচের আবাদ বাড়ছে। গত মৌসুমে সারিয়াকান্দিতে মরিচের আবাদ হয়েছিল ১০ হাজার ৩শ’ ৩৫ হেক্টরে। চলতি মৌসুমে আবাদের টার্গেট করা হয় ১০ হাজার ৩শ’ ৭৫ হেক্টর। তবে অনেক চরে আবাদ হওয়ায় অন্তত ১১ হাজর হেক্টরে মরিচের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৩ দশমিক ৮ মেট্রিক টন উৎপাদনের হিসাবে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৮শ’ মেট্রিক টন। পাইকারি বাজারে প্রতিমণ শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা দরে। খুচরা বাজারে প্রতিমণ ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। শপিংমল ও বাজারের দোকানিরা বলেন অনেক গৃহিণী গুঁড়া মসলা কেনার সময় বগুড়ার মরিচ কিনা জানতে চান। ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বললেন, বগুড়ার মরিচ বিচ্ছিন্নভাবে রফতানি হচ্ছে। বগুড়ায় মরিচের আবাদ বাড়ালে রফতানি তালিকায় বড় আসন করে নেবে।

সানবিডি/এনজে