নভেল করোনাভাইরাস

ফুটবল অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৩-১২ ১৮:৪২:১৪


 

আজ রাতেই মাঠে গড়ানোর কথা ছিল আর্সেনাল বনাম ম্যানচেস্টার সিটির মধ্যকার হাইভোল্টেজ ম্যাচটি। কিন্তু এর মাঝেই সমর্থকদের শুনতে হয়েছে বড় ধরনের দুঃসংবাদ। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত করা হয়েছে এ ম্যাচটি। সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য ম্যাচ বাতিল, স্থগিত কিংবা গ্যালারিশূন্য মাঠে খেলা হওয়াটা একেবারে নতুন কিছু না। তবে এ ম্যাচ নিয়ে দুশ্চিন্তার জায়গাটি একেবারে ভিন্ন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে আর্সেনালের খেলোয়াড়দের।

ঘটনার সূত্রপাত হয় মূলত আর্সেনাল বনাম অলিম্পিয়াকোসের ইউরোপা লিগের ম্যাচকে ঘিরে। সেদিনের ম্যাচের পর আর্সেনাল খেলোয়াড়রা দেখা করেছিলেন অলিম্পিয়াকোসের মালিক ভাঞ্জেলিস মারিনাকিসের সঙ্গে। যিনি গত মঙ্গলবার নিজের করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবরটি নিশ্চিত করেন। এ সংবাদ শোনার পর থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আর্সেনাল খেলোয়াড়দের মাঝে। পরে সিটির বিপক্ষে ম্যাচটি স্থগিত করে খেলোয়াড়দের বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন অবস্থায় গানার তারকাদের ১৪ দিন কাটাতে হবে। প্রিমিয়ার লিগে করোনার কারণে এটিই প্রথম স্থগিত হওয়া ম্যাচ। যদিও ক্লাব কর্তৃপক্ষ বলছে, দলের খেলোয়াড়দের করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা একেবারেই ক্ষীণ।

করোনার কারণে বুন্দেসলিগার আরো অনেক ম্যাচ এ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দর্শকশূন্য মাঠে। যেখানে আছে বায়ার্ন মিউনিখ-ইউনিয়ন বার্লিনের ম্যাচটিও। এর আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আটালান্টা বনাম ভ্যালেন্সিয়ার দ্বিতীয় লিগের ম্যাচটিও অনুষ্ঠিত হয়েছে দর্শকশূন্য গ্যালারিতে। পাশাপাশি একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিরি-এ লিগের বাকি ম্যাচগুলো এ মৌসুমে আর মাঠে গড়াবে কিনা, তা নিয়েই দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এরই মধ্যে অবশ্য আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে লিগের খেলা। ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন আশঙ্কা করছে, এ মৌসুমে আর সিরি-এর আর কোনো ম্যাচ মাঠে না-ও গড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে ফল নির্ধারণের বিকল্প পথগুলো নিয়েও ভাবছে কর্তৃপক্ষ। যার মাঝে প্লে অফ খেলা, কাউকেই জয়ী না করা কিংবা টেবিলে বর্তমান অবস্থান ধরেও ঘোষণা করা হতে পারে চ্যাম্পিয়নের নাম। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে ২৩ মার্চ ফেডারেল কাউন্সিলের সভার পর।

এদিকে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে লা লিগা বন্ধ হয়ে যাওয়ারও। আবার ইউরোপা লিগের ম্যাচ খেলতে মিলান যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে গেটাফে। বাতিল হয়েছে রোমা ও সেভিয়ার ম্যাচটিও। দিনের আরেকটি বড় খবর হ্যানোভারের জার্মান ডিফেন্ডার টিমো হিউবারস করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে আশার খবর করোনা পরীক্ষার পর বেঁচে গেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।

এদিকে করোনাভাইরাস আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলো। কোনো কোনো লিগ আর মাঠে গড়াবে কিনা তা নিয়েই দেখা দিয়েছে শঙ্কা। বিশেষ করে অনেক লিগে দর্শকদের টিকিট বিক্রির টাকা আসাও এখন পুরোপুরি বন্ধ। প্রিমিয়ার লিগেও বাতিল হলো খেলা। এমনকি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তবে সবগুলো ম্যাচ যদি দর্শকশূন্য মাঠে খেলা হয়, সেক্ষেত্রে এক মাসেই প্রিমিয়ার লিগকে দেখতে হবে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের ক্ষতি। আরেকটি খবরে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল জানাচ্ছে, যদি ম্যাচ বাতিল হয় বা শূন্য মাঠে খেলা হয়, তবে প্রতি ম্যাচে অ্যাসোসিয়েশন অব ফুটবলকে (এফএ) ৩ মিলিন পাউন্ডের ক্ষতি দেখতে হবে। এমনকি এফএর ইন্স্যুরেন্স পলিসিতেও নাকি করোনাভাইরাসের মতো মহামারীর জন্য বিশেষ কোনো নির্দেশনা নেই। অন্যদিকে এরই মধ্যে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ন্যাপোলির বিপক্ষে ম্যাচটি বদ্ধ স্টেডিয়ামে হলে ৬ মিলিয়ন ইউরোর ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে তারা। বড় ক্লাবগুলো নানাভাবে পুষিয়ে নিতে পারলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ক্লাবগুলোর ওপর এর প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। কোনো কোনো ক্লাবকর্তা অবশ্য অর্থের চেয়ে মানুষের জীবনকে এগিয়ে রাখছেন সবচেয়ে বেশি।

পোর্টসমাউথ ক্লাবের প্রধান নির্বাহী মার্ক কাটলিন বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে লিগ ওয়ান ও লিগ টুর ক্লাবগুলো ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে। সোমবারের বৈঠকেও একই আশঙ্কার কথা বলেছেন বিভিন্ন ক্লাবের কর্তারা। এমনকি ক্ষতির পরিমাণ এতটাই বেশি হতে পারে যে ইন্স্যুরেন্স দিয়েও তার পূরণ করা সম্ভব হবে না।

লিগ ওয়ানের ক্লাব টার্নমেরে রোভার্সের চেয়ারম্যান মার্ক পালিওস বলেছেন, অনেকগুলো ক্লাব দিনে এনে দিনে খায় উপায়ে চলে। দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে এখন মৌসুমের বাকি সময় খেলতে হলে তাদের পড়তে হতে পারে ৫ লাখ পাউন্ডের ক্ষতির মুখে।

অ্যাক্রিংটন স্ট্যানলির মালিক অ্যান্ডি হল্টের ভাবনাটা অবশ্য ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘আমি সত্যি অর্থনৈতিক ক্ষতি নিয়ে চিন্তিত। তবে ততটা অবশ্যই না, যতটা আমার দুশ্চিন্তা করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে। অর্থনীতি নিয়ে কথা বলা ঠিক আছে। কিন্তু যদি আমি অর্ধেক সমর্থককে এ রোগের কারণে হারিয়ে ফেলি, তবে ক্ষতিটা হবে দীর্ঘমেয়াদি; যা পরিস্থিতি আরো বেশি জটিল করে তুলবে।’
সানবিডি/ঢাকা/এসএস