যেভাবে প্রাণহানি সর্বনিম্ন রাখতে পেরেছে দক্ষিণ কোরিয়া

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৩-১৬ ১৪:০৯:২১


গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হয় নভেল করোনাভাইরাস। দ্রুতই প্রদেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে রোগটি। এখন পর্যন্ত সর্বাধিক আক্রান্ত ও মৃত্যু এ প্রদেশেই। তখন উহানকেই বলা হচ্ছিল করোনাভাইরাস বিস্তারের এপিসেন্টার বা উপকেন্দ্র। তবে মার্চের শুরুর দিক থেকে চীন সরকার দাবি করছে উহানসহ পুরো দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা একেবারে কমে এসেছে। মৃত্যুও দুয়েক জনের বেশি নয়।

এদিকে ফেব্রুয়ারিতে চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করলেও মধ্য জানুয়ারিতে প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। এর জন্য প্রশাসন প্রধানত দায়ী করে শিনচিওনজি চার্চ অব জেসাস নামে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে। তাদের নিয়মিত জমায়েত এবং তথ্য গোপনের কারণে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে দাবি করা হয়। ধর্মীয় গোষ্ঠীটির নেতার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে মামলাও করা হয়। পরে অবশ্য ওই ধর্মীয় নেতা জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান।

বলতে গেলে এই ঘটনার পর দ্রুত সংক্রমণ বিস্তার কমে আসে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এর পেছনের কারণ কী হতে পারে সে প্রশ্নে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাং কিয়ং ওয়া বিবিসিকে বলেছেন, ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্যপরীক্ষার উদ্যোগেই দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সেই জনসাধারণের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন কাং কিয়ং।

আজ সোমবার কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (কেসিডিসি) জানিয়েছে, গতকাল রোববার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৭৪ জন, এবং গত তিন সপ্তাহের মধ্যে এটিই সর্বনিম্ন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত দাঁড়াল ৮ হাজার ২৩৬ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৭৫ জন। তাদের অধিকাংশই বয়স্ক এবং নানা রোগে ভুগছিলেন। রোববার কোনো মৃত্যু নেই। তাছাড়া প্রতিদিনই প্রচুর রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংক্রমণের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীকে শনাক্ত করা গেলে সেটি ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায় এবং আক্রান্তকে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা যায়। আমার মনে হয়, করোনাভাইরাসে মৃত্যু কম হওয়ার পেছনে এটিই বড় কারণ।

কার্যকর শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, মধ্য জানুয়ারিতে চীন ভাইরাসটির জিন সিক্যুয়েন্স প্রকাশ করার পর আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এটির শনাক্তকরণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করে এবং সমন্বিতভাবে কাজ করার কারণে দ্রুতই সেটি অনুমোদন পায়। এরপর এ সংক্রান্ত তথ্য ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ করা হয়। কোম্পানিগুলো সে অনুযায়ী দ্রুত রি-এজেন্ট ও টেস্টিং কিট তৈরি করতে সমর্থ হয়। এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারকে আতঙ্ক প্রতিরোধে দায়িত্বশীল হতে হবে। আমি মনে করি, সরকারকে খুব ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। তথ্যপ্রমাণ ও বিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে আমরা সেটিই করেছি। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে ‘বৈশ্বিক মাহমারি’ ঘোষণা দেয়ার ফলে এটি দ্রুত বিস্তারের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে আতঙ্কও বেড়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী এশীয়ভীতিও বেড়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানে হয়রানি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এসব ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ এতে সহযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করে কারো কোনো লাভ হবে না।

সিউলের উনসেই ইউনিভার্সিটি কলেজ অব মেডিসিনের অধ্যাপক লি হাইয়ুকমিন বলেন, আমার মনে হয় আমাদের পদক্ষেপ সঠিক ছিল। তবে আমরা বিচ্ছিন্নভাবে সংক্রমণ আরো দেখতে পাবো। কিন্তু প্রাদুর্ভাবের এপিসেন্টার দায়েগুর অবস্থা কিন্তু এখন স্থিতিশীল।

দক্ষিণ কোরিয়াতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ২৩৬। পরে আক্রান্ত হলেও ইতালি ও ইরান গত সপ্তাহেই দেশটিকে ছাড়িয়ে গেছে। চীনের বাইরে সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত এখন এ দুই দেশে। গত মাসের শেষ নাগাদ থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। ২০ জানুয়ারির পর প্রথম ১৩ মার্চ সর্বোচ্চ ৫১০ জন রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়, যেখানে সেদিন নতুন আক্রান্ত ছিল ১১০ জন। আর এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৭৫ জন।

৫ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০ জানুয়ারি থেকে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আড়াই লাখ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের দৈনিক পরীক্ষার সক্ষমতা ১৫ হাজার। সে হিসাবে তারা প্রতি ১০ লাখে ৩ হাজার ৬০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত এ হার ১০ লাখে মাত্র ৫ জন। সূত্র: বিবিসি, ইয়নহাপ
সানবিডি/ঢাকা/এসএস