করোনা সংকট
এশিয়ার দেশগুলোয় চাঙ্গা হয়ে উঠেছে চালের বাজার
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৩-২২ ০৯:৫৮:৫৭
বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ তিন চাল রফতানিকারক দেশ হচ্ছে ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম । এশিয়া ও আফ্রিকার ক্রেতাদের কাছে চালের প্রধান আমদানি উৎস এ তিন দেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাব পড়েছে তিনটি দেশের চাল রফতানিতে। সর্বশেষ সপ্তাহে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের বাজারে পণ্যটির দাম বেড়েছে। থাইল্যান্ডে চালের দাম ছয় বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চে উঠেছে। ভিয়েতনামে ১৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। তবে সর্বশেষ সপ্তাহে ভারতের বাজার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও ট্রেডাররা বলছেন, দেশটিতে আগে থেকেই চালের দাম তুলনামূলক বেশি রয়েছে। খবর রয়টার্স, এগ্রিমানি ও বিজনেস রেকর্ডার।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা ছয় সপ্তাহ থাইল্যান্ডের চালের বাজার চাঙ্গা রয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটিতে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৪৮০-৫০৫ ডলার। আগের সপ্তাহে থাইল্যান্ডে একই মানের চাল টনপ্রতি ৪৭০-৪৯৫ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। ২০১৩ সালের আগস্টের পর দেশটিতে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে রফতানিযোগ্য চাল।
থাইল্যান্ডের বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার বড় একটি কারণ খরা। দেশটির কৃষিপ্রধান এলাকাগুলোয় বাড়তি তাপমাত্রা উৎপাদন ব্যাহত করে বাজারে চালের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এর জের ধরে টানা ছয় সপ্তাহ চাঙ্গা রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ থাইল্যান্ডের বাজার। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। মহামারীতে মানুষের মধ্যে খাবার মজুদের প্রবণতা চালের চাহিদা বাড়িয়ে দাম বৃদ্ধি করেছে।
এদিকে সর্বশেষ সপ্তাহে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনামে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৪১০ ডলারে। আগের সপ্তাহে খাদ্যপণ্যটি টনপ্রতি ৪০০-৪০৫ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। স্থানীয় ট্রেডাররা জানান, ২০১৮ সালের নভেম্বরের পর গত সপ্তাহে ভিয়েতনামে সবচেয়ে বেশি দামে চাল বিক্রি হয়েছে।
হো চি মিন সিটির ট্রেডাররা জানান, কৃষক ও মিলার পর্যায়ে ধান-চাল বিক্রি অনেকটাই কমে গেছে। তারা মনে করছেন, বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী দীর্ঘমেয়াদে থাকতে পারে। ফলে আগামীতে চালসহ সব খাদ্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাবে। ভবিষ্যতের লাভের আশায় এ মজুদ প্রবণতা সরবরাহ সংকট তৈরি করে ভিয়েতনামে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে ভিয়েতনাম সরকার। দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যেকোনো পরিস্থিতিতে চলতি বছর চালের বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্য ২ কোটি ২০ লাখ টন অর্জনে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে।
তবে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে বাড়লেও সর্বশেষ সপ্তাহে বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ ভারতে খাদ্যপণ্যটির দাম অপরিবর্তিত ছিল। এ সময় দেশটিতে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৩৬৩-৩৬৭ ডলারে বিক্রি হয়েছে। মুদ্রাবাজারে ভারতীয় রুপির রেকর্ড দরপতন দেশটিতে চালের দাম স্থিতিশীল রেখেছে।
তবে ভারতের বাজারে এখন যে দামে রফতানিযোগ্য চাল বিক্রি হচ্ছে, সেটাও তুলনামূলক বেশি বলে মনে করছেন ট্রেডাররা। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ওলাম ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট নিতিন গুপ্ত বলেন, অন্যান্য বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন চালের দাম কিছুটা বেশি। বর্তমানে ভারতীয় চালের রফতানি চাহিদা বাড়ছে। নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে অভ্যন্তরীণ বাজারেও বাড়তে পারে খাদ্যপণ্যটির দাম। এ বাড়তি চাহিদা আগামী দিনগুলোয় চালের দাম আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।