মারণঘাতি করোনাভাইরাস

বিশ্বজুড়ে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ ঘরবন্দি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৩-২৪ ০৯:০৭:৪৩


চীন থেকে বিশ্বব্যাপি ভয়ঙ্কর আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস।এই ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষায় বিশ্বজুড়ে ঘরে অবস্থান কিংবা লকডাউনের আওতায় এসেছে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আঞ্চলিক ও সার্বিক লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে ৫০টিরও বেশি দেশ। এর মধ্যে কিছু দেশের সরকার এ লকডাউনকে করেছে বাধ্যতামূলক। অন্যরা শুধু নাগরিকদের ঘরে অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছে। খবর এএফপি, বিজনেস ইনসাইডার ও আল-জাজিরা।

প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৫ হাজার ৪৩০। সব মিলিয়ে বিশ্বের মোট ১৬৭টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে নভেল করোনাভাইরাস।

বিশ্বব্যাপী বর্তমানে অন্তত ৩৪টি দেশ ও অঞ্চল স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধ্যতামূলক লকডাউনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এর আওতায় বাধ্যতামূলকভাবে ঘরবন্দি হয়ে আছে প্রায় ৭৬ কোটি মানুষ।

প্রতিবেশী ভারতে গতকাল ৮০টিরও বেশি শহর ও জেলায় কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশটিতে এ লকডাউনের আওতায় রয়েছে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ। নাগরিক বা আঞ্চলিক বাসিন্দাদের জন্য বাধ্যতামূলক ঘরবন্দি হয়ে থাকার ঘোষণা দেয়া অন্য দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো ফ্রান্স, ইতালি, আর্জেন্টিনা, ইরাক ও রুয়ান্ডা।

এর মধ্যে বর্তমানে নভেল করোনাভাইরাসের আক্রমণে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী দেশ ইতালি। মৃতের সংখ্যার দিক থেকে এরই মধ্যে চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে দেশটি। এখন পর্যন্ত কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে দেশটির সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি নাগরিক। ইতালিতে বর্তমানে নাগরিকদের সব ধরনের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত রয়েছে।

ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মধ্যে স্পেন বর্তমানে জরুরি অবস্থার সময় বাড়ানোর কথা ভাবছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, শেষ হতে যাওয়া জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরো ১৫ দিন বাড়ানোর জন্য দেশটির পার্লামেন্টের অনুমতি চাইবেন তিনি। সেক্ষেত্রে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি থাকতে পারে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। গতকাল পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ভয়াবহ আকারে। বর্তমানে স্পেনে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৮২। মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ইতালি ও চীনের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি।

ফ্রান্সের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। দেশটিতে বর্তমানে মৃতের মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭৪। দেশটির বিভিন্ন স্থানে লকডাউন ছাড়াও বর্তমানে কারফিউ জারি করা রয়েছে। রাজধানী প্যারিসের মেয়র আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াসহ তিনটি অঙ্গরাজ্য বর্তমানে সম্পূর্ণ লকডাউনে রয়েছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সর্বশেষ বাধ্যতামূলক ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে গ্রিস। স্থানীয় সময় অনুযায়ী গতকাল সকাল থেকেই দেশটির সরকারের এ নির্দেশনা কার্যকর হয়। এছাড়া আজ থেকে বাধ্যতামূলক লকডাউন কার্যকর করতে যাচ্ছে কলম্বিয়া। আগামীকাল একই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। আগামীকাল শুরু হয়ে পরবর্তী চার সপ্তাহ এ লকডাউন কার্যকর থাকবে। তবে বাধ্যতামূলক লকডাউনের ঘোষণা থাকলেও জরুরি পণ্য বা ওষুধ কেনার জন্য স্থানীয়দের ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে অধিকাংশ দেশ।

এদিকে ইরান, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ নিজ নিজ নাগরিকদের ঘরে অবস্থানের অনুরোধ জানিয়েছে। একই সঙ্গে নাগরিকদের অন্যের সংস্পর্শ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলারও অনুরোধ জানিয়েছে দেশগুলো। এ ধরনের অনুরোধমূলক লকডাউনের অধীনে রয়েছে মোট ২২ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে জার্মানিতে কোথাও দুজনের বেশি মানুষ একত্রে জড়ো হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে জনসমাগমের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটির সরকার। গত সপ্তাহ শেষেও দেশটির পার্ক ও সৈকতে ব্যাপক জনসমাগম দেখা গেছে। এ কারণে নাগরিকদের জন্য বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করেছে দেশটির সরকার। এছাড়া দেশটি শিগগিরই বাধ্যতামূলক লকডাউনের ঘোষণা দিতে পারে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে ইরানে পারসিক নববর্ষ উপলক্ষে প্রচুর মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থায় দেশটিতে ভাইরাস পরিস্থিতির আরো অবনতি দেখা দেয়ায় শক্ত অবস্থান নিতে যাচ্ছে তেহরান।

এছাড়া আরো অন্তত ১০টি দেশ ও অঞ্চলে জারি করা হয়েছে কারফিউ। নিষিদ্ধ করা হয়েছে রাতের ভ্রমণ। এসব দেশ ও অঞ্চলে বাস করছে মোট ১১ কোটি ৭০ লাখের মতো মানুষ। এসব পদক্ষেপ নেয়া দেশ ও স্থানের মধ্যে রয়েছে বুরকিনা ফাসো, চিলি, ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা, সার্বিয়া ও মৌরিতানিয়া। এছাড়া স্থানীয় সময় অনুযায়ী গতকাল বিকাল থেকেই কারফিউ জারির পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি আরব।

এর বাইরে কিছু দেশ তাদের প্রধান শহরগুলো বিচ্ছিন্ন করার পদক্ষেপ নিয়েছে। শহরে প্রবেশ ও প্রস্থানের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বুলগেরিয়া, কাজাখস্তানের আলমাতি ও নূর-সুলতান এবং আজারবাইজানের বাকুতে। সব মিলিয়ে এসব শহরের বাসিন্দা প্রায় ১ কোটি।