প্রধানমন্ত্রীর মমতার পরশে প্রতিবন্ধীরা
প্রকাশ: ২০১৫-১২-০৩ ১৮:১১:৫৬
শিশু, নারী, প্রতিবন্ধী কিংবা সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবেদনশীল মন ও গভীর মমতা-ভালোবাসার কথা সবার জানা। এসব মানুষকে কাছে পেলেই পরম মমতায় বুকে টেনে নেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (০৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ২৪তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ১৭তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসের অনুষ্ঠানে আবারও সে রকম দৃশ্যেরই দেখা মেলে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়।
আলোচনা মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য অতিথিরা দর্শক সারিতে নির্ধারিত আসনে বসবেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। সঞ্চালক সেই ঘোষণাই দিচ্ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আলোচনা মঞ্চ থেকে নেমে গেলেন। তখন নিরাপত্তা কর্মীসহ সবার চোখ ছানাবড়া! কারণ সোজা দর্শক সারিতে বসা শত শত প্রতিবন্ধীদের দিকে ছুটে গেলেন। একেবারে দর্শকদের ভিড়ে ঢুকে গেলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীকে এতোটা কাছে পেয়ে উপস্থিত প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোররাও সুযোগটা লুফে নেন।
প্রধানমন্ত্রী শিশু-কিশোরদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন, তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী, পরম মততায় বুকে টেনে নেন। প্রধানমন্ত্রীর মমতাময়ী পরশ পেয়ে দুই একজন কেঁদেই ফেলেন।
কয়েকজন আবার প্রধানমন্ত্রীর মমতাময়ী পরশকে স্মৃতিতে ধরে রাখতে ছবি তোলার আবদার করেন। শেখ হাসিনাও নিরাস করেননি তাদের, এমনকি অভিভাবকদের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছুক্ষণ প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের সঙ্গে সময় কাটান। তিনি এসব শিশুদের সঙ্গে বন্ধুবাৎসল হয়ে মিশে রইলেন। উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে পুরো দৃশ্যটি পলকহীন দৃষ্টিতে দেখতে লাগলেন। প্রতিবন্ধীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা ও মমতার ছাপ উপস্থিত অতিথিদের মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করে।
পরে প্রধানমন্ত্রী দর্শক সারিতে বসে প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের দ্বারা পরিবেশিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
সবশেষে তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন।
এর আগে, সকাল সোয়া ১০টার পর ২৪তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আসেন।
প্রথমে তিনি অটিজম ও প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসাসহ ১০টি সেবা দিতে দেশব্যাপী চালু করেন মোবাইল থেরাপি ভ্যান। প্রাথমিকভাবে ২০টি মোবাইল থেরাপি ভ্যান কাজ শুরু করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে মোবাইল থেরাপি ভ্যান সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। পরে আলোচনা সভায় অংশ নেন।
আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে প্রতিবন্ধীদের প্রতি আরও সংবেদনশীল, সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানান। তাদের সহযোগিতায় ছাত্র-শিক্ষক, সমাজের বিত্তবানসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, যারা প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নেয়, এটি তাদের কিংবা তাদের বাবা-মায়ের অপরাধ নয়।
প্রতিবন্ধীদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, তারা পরিবার, সমাজ ও দেশের সম্পদ। তাদের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ আমাদের সবার।
প্রতিবন্ধী সন্তানদের বাবা-মায়েদের উদ্দেশে বলেন, মনে কষ্ট না রেখে তাদের স্কুলে পাঠান, তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিন।
জাতীয় সংসদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিকুল ইসলাম, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি সাইদুল হক।