খাল সাঁতরে বরিশালে প্রবেশ করছে ক্ষুধার্ত মানুষ

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৪-১৬ ১৯:১০:৩৮


দুইদিন শুধু পানি খাইয়া বাইচ্চা আছি। মোর মতো আরও ১০-১২ জন ইটভাটার শ্রমিকের একই অবস্থা। ক্ষুধার যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছিলাম না, তাই জীবনের ঝুঁকি জেনেও গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে এসেছি। অন্য জেলার লোক, তাই কেউ মোগো ত্রাণ পর্যন্ত দেয়নি।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন লকডাউনে থাকা মাদারীপুরে আটকে পরা ইটভাটার এক শ্রমিক। সেখানে থেকে অনেকের সঙ্গে তিনিও রওনা হন বরিশালের উদ্দেশে।

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে চারদিকে বিরাজ করছে শূন্যতা। বর্তমানে সারা দেশ রয়েছে অঘোষিত লকডাউনে। কয়েকটি জেলাকে পুরোপুরি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। লকডাউন হওয়া জেলার মধ্যে মাদারীপুর জেলা অন্যতম।

বরিশালের পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর জেলা বেশি ঝুঁকিতে থাকায় বরিশালবাসীকে সুরক্ষিত রাখতে ইতিমধ্যে বরিশালকে লকডাউন ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসন। ফলে অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী পরিবহনসহ ছোট যান চলাচল, সীমান্তবর্তী খেয়া নৌকা বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও সড়ক পথে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র প্রবেশ পথ গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ডে বসানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা চৌকি।

বরিশালে প্রবেশ করতে এত কঠোরতার পরও থামানো যাচ্ছে না বিভিন্ন জেলায় আটকে পরার পর ক্ষুধার যন্ত্রণায় থাকা ঘরমুখো মানুষদের। প্রতিদিনই করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে নদীপথ কিংবা স্থলেপথে গোপনে নিজ বাড়িতে ফিরছেন অসংখ্য মানুষ।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সড়কপথে বরিশাল বিভাগের প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলার সীমান্তবর্তী ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি। ওই নিরাপত্তা চৌকি দিয়ে অপ্রয়োজনীয়ভাবে কেউ ঢুকতে না পারলেও ভুরঘাটা ব্রিজের পশ্চিম পাশে দেখা গেছে ভিন্নচিত্র। কেউ গামছা পরে কিংবা লুঙ্গি পরে বাড়ি ফেরার জন্য ভুরঘাটার খাল পারি দিচ্ছে।

ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা এসব ঘরমুখো মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্মস্থলে না থাকার পরিবেশ ও ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরেই তারা ঘরমুখো হয়েছেন। ক্ষুধার যন্ত্রণার ভয় এদের মধ্যে দেখা গেলেও চোখে না দেখা করোনার ভয় এদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়নি। তবে কর্মস্থলে থাকা-খাওয়ার পরিবেশ থাকলে কেউই ঘরমুখো হতো না বলেও তারা (শ্রমিকরা) উল্লেখ করেছেন।

বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘লকডাউনের আগে থেকে বরিশালের প্রবেশদ্বারগুলো চলাচলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি ফাঁকি দিয়ে অনেকে প্রবেশ ও বাইর হওয়ার চেষ্টা করছেন বিভিন্ন উপায়ে।’

বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ‘আমরা বরিশালবাসীকে নিরাপত্তায় রাখতে চাই। এ জন্যই মূলত লকডাউন করা হয়েছে পুরো জেলাকে। কেউ আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে বরিশালে প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সূত্র: আমাদের সময়
সানবিডি/ঢাকা/এসএস