খাদ্য সংকট মেটাতে বোরোই সমাধান
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৪-২২ ০৮:০৫:৪০
বিস্তৃণ মাঠ জুড়ে দুলছে কৃষকের বোরোর সোনালি ফসল। দেশের উৎপাদিত মোট চালের অর্ধেকের বেশি প্রায় ৬০ ভাগ আসে এই বোরো আবাদ থেকে। আর বাকি ৪০ ভাগের মতো আসে আমন ও আউশ থেকে। খাদ্য সংগ্রহের বড় জোগান এ বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কোথাও আগামী সপ্তাহে শুরু হবে। করোনার এ সময়ে বা পরবর্তীতে যে খাদ্য সঙ্কটের কথা বলা হচ্ছে তাতে দেশের জন্য ভরসা এখন এই বোরো ধান। দেশের সঙ্কট মিটিয়ে দুর্ভিক্ষের দেশে রফতানিও করতে পারবে। তবে এর আগে সঠিকভাবে ঘরে তুলতে হবে এই শস্য। সরকার বোরো ধান ঘরে তুলতে ব্যাপক গুরুত্বও দিচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়িয়ে সঠিক ব্যবস্থাপনায় ধান ঘরে উঠানো গেলে এবং সরকারের বাজার ব্যবস্থাপনায় কড়া নজরদারি থাকলে আগামী কমপক্ষে ৬ মাস খাদ্য সঙ্কটের চিন্তা থাকবে না মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে কৃষি ও অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা অর্থনীতিকে কত দিন খামচে ধরে রাখবে তা অজানা। দেশের মানুষকে প্রতিদিনই ভাত খেতে হবে। দেশে দেশে খাদ্য সঙ্কটের হাতছানির মধ্যে ভাতযুদ্ধের প্রস্তুতি খুব জরুরী। ভাতযুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে সরকারও এবার অন্য বছরের চেয়ে বেশি খাদ্যশস্য কিনবে। যাতে দুর্দিনে সহায়তা করা যায়।
জানা গেছে, সারাদেশের উৎপন্ন ধানের মধ্যে এ মাসের মধ্যেই কাটতে হবে হাওড়ের ধান। এছাড়াও সমতলের ধান কাটা শুরু হয় এপ্রিলের ২৫ তারিখ থেকে। তবে ব্যাপক আকারে মে ৫ তারিখ থেকে সমতলের ধান কাটা শুরু হয়। ইতোমধ্যেই কোন কোন হাওড়ে ২০ শতাংশ বা আরও বেশি ধান কাটা হয়ে গেছে। অন্যান্য এলাকার চেয়ে হাওড় এলাকার চাষীরা আগে ধান ঘরে ওঠায়। তা না হলে আগাম বন্যায় ফসলহানির ঝুঁকিও থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) তথ্যানুযায়ী, এ বছর বোরোতে আবাদি জমির পরিমাণ ও চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও দুই বাড়ানো হয়। আবাদ হয়েছে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের কম জমিতে। তবে মাঠের ফলন দেখে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনেক ছাড়িয়ে যাবে। কৃষি সম্প্রসারণে সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক (সদ্য অবসর) চ-ীদাস কু-ু বলেন, এ বছর ৪৮ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত ৪৭ লাখ ৫৫ হাজার হয়েছে। তবে মাঠের যে ফলন সে হিসাবে আমাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনেক ছাড়িয়ে যাবে আশা করছি। এখন এই ফল ঘরে তুলতে পারলেই স্বস্তি। তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে দিনে সারা বিশ্বেই খাদ্য সঙ্কটের যে কথা বলা হচ্ছে তাতে আমাদের দেশের জন্য এই বোরো একটি আশার আলোও ভরসা হতে পারে যদি সঠিকভাবে ফসল ঘরে আনতে পারা যায়। তাহলে কৃষক পরিবারগুলো সঙ্কটে থাকবে না। কেননা এই ধান চিকন হওয়াতে সহসাই সবাই বিক্রিও করে না। সারাবছর খাওয়ার জন্য রেখে দেয়। বেশি জমি যারা আবাদ করে তারা বিক্রি করে তবে বেশিরভাগই ব্যক্তিকেন্দ্রিক ছোট ছোট কৃষক সারাবছরের এই খাদ্য তাদের।
কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আর বিভিন্ন চাল ব্যবসায়ী বলছেন আগে বোরো এই ফসল ভালভাবে ঘরে উঠানো গেলে মজুদ ঠিক রেখে কেউ যেন মূল্য বৃদ্ধি না করতে পারে সরকার সংশ্লিষ্টদের সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে মূল্যও বেশি বাড়বে না আবার খাদ্য সঙ্কটও হবে না। বরং উদ্বৃত্ত থাকলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশে রফতানি করা যাবে। এই শস্যে ৫-৬ মাস পার করা গেলে আবার আমনের নিশ্চিত ফলন এসে যাবে। সেই সঙ্গে কেউ যাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খাদ্য সঙ্কট বা দুর্ভিক্ষ আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে এজন্য সরকারের কড়া মনিটরিং থাকতে হবে। কৃষিমন্ত্রী এবং কৃষি সচিব জানিয়েছেন সঠিকভাবে বোরোর ফসল ঘরে উঠলে দেশে খাদ্য সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হবে না। কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সমতলের ধান যে কোন মূল্যে উঠানো যাবে। হাওড়ের ধান উঠে গেলে অনেক চিন্তা কমে যাবে। কোন দুর্যোগের কবলে ফসলহানি না হলে ভালোয় ভালোয় ধান ঘরে উঠলে করোনায় যে আশঙ্কা বিভিন্ন দেশে করা হচ্ছে আমাদের সে ধরনের কোন খাদ্য সঙ্কট হবে না। বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮-১৯ সালে দেশে মোট চাল উৎপাদন হয়েছিল ৩ দশমিক ৬৪ কোটি টন। তার মধ্যে বোরো থেকে এসেছিল শতকরা ৫৪ ভাগ, আমন থেকে ৩৪ ভাগ আর আউশ থেকে এসেছিল আট ভাগ।